সবার চোখ সিন্ডিকেট সভায়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ মার্চ। এ লক্ষ্যে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনা সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এসব সভায় ডাকসুর গঠনতন্ত্র, আচরণবিধি প্রণয়ন, ভোটার তালিকার বিষয়ে বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। এবার এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সিন্ডিকেট সভায়। তাই সবার নজর এখন সভার দিকে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সিন্ডিকেট সভা শুরু হবে। যেখানে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের বিষয়গুলোকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে। নির্বাচনে ভোটার, প্রার্থী কারা হবেন সেসব বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
আলোচনার বিষয় প্রসঙ্গে সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সিন্ডিকেট সভায় ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন এবং আচরণবিধি প্রণয়ন নিয়ে আলোচ্যসূচি রয়েছে। গঠনতন্ত্রের মধ্যে- ডাকসুর ভোটার কারা হতে পারবেন, প্রার্থী কারা হবেন এসব বিষয় উল্লেখ্য আছে। অন্যদিকে, আচরণবিধি প্রণয়নের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণার বিভিন্ন বিষয় আছে। সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
গত সপ্তাহের সোমবারে ‘পরিবেশ পরিষদের’ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছাত্র সংগঠনের নেতারা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। এসব দাবিগুলোর মধ্যে হলের পরিবর্তে একাডেমিক ভবনগুলোতে ভোটকেন্দ্র করা, ভোটকেন্দ্রগুলো সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। এই সভায় বয়সের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। তবে নেতাদের অনেকেই বয়সের বিষয়টি বাড়ানোর দাবি জানান।
এর আগে ডাকসুর গঠনতন্ত্র যুগোপযোগী করতে গত ৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পরে ১০ জানুয়ারি ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন করতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আলোচনা সভায় ছাত্র সংগঠনের নেতারা ডাকসুর সেক্রেটারিয়েটের সংখ্যা বৃদ্ধি, নারী প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যাকেন্দ্রিক আলাদা সম্পাদকের পদ সৃষ্টির দাবি জানান।
এ ছাড়া বাম সংগঠনগুলোর মধ্য থেকে পদাধিকার বলে ডাকসুর সভাপতির (ভিসি) একচেটিয়া ক্ষমতা হ্রাসের বিষয়ে দাবি জানানো হয়। এই দাবি লিখিত আকারে ১৪ জানুয়ারির মধ্যে ছাত্র সংগঠনগুলো জমা দিতে বলা হয়। এসব প্রস্তাবনার বিষয়ে সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।
অন্যদিকে কয়েকদিন আগে ডাকসু নির্বাচনের খসড়া আচরণবিধি করে তার মতামত জানানোর জন্য ছাত্র সংগঠনগুলোকে লিখিত আকারে প্রক্টর অফিসে জমা দিতে বলা হয়। শনিবার সংগঠনের নেতারা তাদের মতামত লিখিত আকারে প্রক্টর বরাবর জমা দেন। এসব বিষয়ও সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হবে বলে জানানো হয়।
সেদিন সংগঠনের নেতারা তাদের মতামতের বাইরেও বিভিন্ন বিষয়ে লিখিত দাবি জানান। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন তাদের প্রস্তাবনায় নির্বাচনের ব্যয়সীমা নির্দিষ্ট করা, ক্যাম্পাসের মধ্যে নির্বাচনী ক্যাম্প না বসানো, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ভোটার স্লিপ প্রদান করা, গণমাধ্যমকর্মীদের অবাধ প্রচারের সুযোগ, প্রচারের অনুমতি নেওয়ার সময় ৪৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ২৪ ঘণ্টা আগে করা, ডাকসুর সাবেক নেতাদের প্রচারকাজে অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করার সুপারিশ করে।
অন্যদিকে ছাত্রদল তাদের প্রস্তাবনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সব নেতাদের নিজ নিজ সংগঠনের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার সুযোগ সৃষ্টি করা, ভোট কেন্দ্রগুলোকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনাসহ ছয়টি দাবি জানায়।
এ ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের’ নেতারা পাঁচটি দাবি জানান। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-ছাত্রদের ওপর হামলাকারীদের বিচার, শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে চলাচল করা, হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো প্রকারের নির্যাতন বা ভয়ভীতির সম্মুখীন না হয় তা নিশ্চিত করা, তফসিল ঘোষণার আগেই ক্যাম্পাসে নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করা।
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘আমরা এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়েছি। সিন্ডিকেটে কী সিদ্ধান্ত হবে তার জন্য অপেক্ষা করছি।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ‘গঠনতন্ত্র আধুনিক ও যুগোপযোগী হবে। আমরা সেই আশাই করছি।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি জানিয়েছি। এই দাবি নির্বাচনের আগে মানতে হবে। তা না হলে নির্বাচন কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘সিন্ডিকেট সভায় ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তাবিত সব বিষয় এজেন্ডাভুক্ত করা হয়েছে। সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’