অতঃপর তাঁকে রড দিয়ে পেটাল ছাত্রলীগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হল সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। জোর করে তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় ছাত্রলীগ। রুমে ইয়াবা ঢুকিয়ে হল থেকে বেরও করে দেওয়া হয়। এরপর নির্বাচনের ২০ দিন পার হলেও ‘হলে থাকার অভিযোগে’ তাঁকে রড ও লাঠি দিয়ে পেটানো হয়েছে।
আহত ওই শিক্ষার্থীর নাম মো. ফরিদ হাসান। তিনি উর্দু বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। গতকাল সোমবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে ওই ঘটনা ঘটে।
এস এম হলের ১৫৯ নম্বর রুমে থাকেন ফরিদ। তিনি গত ১১ মার্চ এস এম হল সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ছাত্রলীগের জুলিয়াস সিজার তালুকদার।
একাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ও উর্দু বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তালুকদার শরিফুল ইসলাম, হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) কামাল হোসেন, জিএস জুলিয়াস সিজার তালুকদারসহ হল সংসদের সদস্য ও ছাত্রলীগের ১০ থেকে ১২ জন নেতাকর্মী ফরিদকে তাঁর রুম বের করে নিয়ে আসেন। ফরিদ কেন হলে থাকে, সে বিষয়টি জানতে চান তাঁরা। তখন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা রড, লাঠি দিয়ে ফরিদকে পেটাতে থাকে। এ সময় ফরিদের মাথা ফেটে যায়। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্রলীগ ও হল সংসদের নেতারা হলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় তারা ফরিদকে হল থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন।
এ ব্যাপারে ফরিদ হাসান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলাম। তখন ছাত্রলীগের নেতারা আমাকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে। যখন আমি প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করি, তখন তারা আমার রুমে ইয়াবা ঢুকিয়ে আমাকে হল থেকে বের করে। পরে আমার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু নির্বাচনের পর গতকাল রাতে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ হল সংসদের সদস্যরা এসে আমাকে মারধর করে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতারা আমাকে রড, লাঠি দিয়ে মারধর করে রক্তাক্ত করে। মারধর করার সময় তারা বলে, আমি কেন ডাকসুর প্রার্থী হই? হলে থাকি কেন? এ সময় আমাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।’
ফরিদ এ বিষয়ে এখনো প্রশাসনকে অভিযোগ দেননি বলে জানান। তবে তিনি জানিয়েছেন, দ্রুতই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন তিনি।
মারধরের বিষয়ে ছাত্রলীগের এসএম হল শাখার সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সে (ফরিদ) ইয়াবা খায়। নেশা করে। তাকে হল থেকে বের করে দেয় হল প্রশাসন। তার পরও সে হলে থাকে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সে এত দিন হলে থাকে কি না, তা জানতাম না। কাল যখন জানতে পারি সে হলে থাকে, তখন তাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ সময় কয়েকজন তাকে মারধর করে।’
এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আলম জোয়ারদারকে কল দিলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে জানান।
এদিকে আহত ফরিদ হোসেনকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখতে যান ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ফরিদকে ছাত্রলীগের নেতারা জোর করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করিয়েছে। তার রুমে ইয়াবা দিয়ে তাকে হল থেকে বের করে দিয়েছে। গতকাল মারধরের সময় ছাত্রলীগের হল শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। আমরা ফরিদের ন্যায়বিচারের জন্য যা করা দরকার তা-ই করব। সন্ত্রাসীরা যাতে ঢাবিতে না থাকতে পারে, তার জন্য যা করার তাই করব।’