বিচার চাইতে গিয়ে মার খেলেন ভিপি নুরসহ অন্যরা

শিক্ষার্থী ফরিদ হাসানকে মেরে রক্তাক্ত করার ঘটনায় প্রাধ্যক্ষের কাছে বিচার চাইতে গিয়ে মার খেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রায় এক ঘণ্টা তাঁদের অবরুদ্ধ করে রেখে ‘ডিম’ হামলা চালান। হলের প্রাধ্যক্ষও রেহাই পাননি নেতাকর্মীদের হাতে।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ভিপি নুরের সঙ্গে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থী, এমনকি ছাত্রীদের ওপরও ডিম নিক্ষেপ করে লাঞ্ছিত করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। নুর ও আখতারসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার বিচার চেয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
অবস্থান নেওয়া ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, আজকে রাতের মধ্যে প্রত্যেক হলের বহিরাগত ও অছাত্রদের বের করতে হবে। নয়তো আমরা এখানে সারারাত বসে থাকব। আমরা সন্ত্রাসীদের বিচার চাই। সেই সঙ্গে অছাত্রদের হল থেকে বের করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের বের না করা হবে এবং হামলার বিচার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অবস্থান করব।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, নুর, আখতার, ইমি ও বেনজিরের পর হামলা ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং বিচারের দাবিতে আমরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এস এম হল সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন উর্দু বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফরিদ হাসান। এরপর জোর করে তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় ছাত্রলীগ। রুমে ইয়াবা ঢুকিয়ে হল থেকে বেরও করে দেওয়া হয়। এরপরও হলে থাকার অভিযোগে গতকাল সোমবার রাত ১২টার দিকে তাঁকে রড ও লাঠি দিয়ে পেটান ছাত্রলীগের হল শাখার নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনার প্রতিবাদে ডাকসুর ভিপি নুর আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষ করে হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাতে যান। হলে ঢোকার পরপরই হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান হোসেন রাসেল ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপসের নেতৃত্বে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এ সময় হল সংসদের অনুমতি না নিয়ে হলে প্রবেশ করায় নুরকে গালিগালাজ করেন হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) জুলিয়াস সিজার। একপর্যায়ে নুরের গায়ে হাত তোলেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি কামাল।
এ ছাড়াও ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহরাব হোসেন, ডাকসুর স্বতন্ত্র জোটের ভিপি প্রার্থী অরণী সেমন্তি খান, ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীরকে মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে কয়েকজন হল থেকে বেরিয়ে বাইরে এলে তাদের ওপর কাঁচা ডিম নিক্ষেপ করেন তারা। এতে কয়েকজন ছাত্রী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী নেতারা লাঞ্ছিত হন।
এর পরে নুর হল প্রাধ্যক্ষর রুমে অবস্থান নিলে সেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গিয়ে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। তখন সাংবাদিকরা ভেতরে ঢুকতে গেলে তাদের গালাগাল করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় ভিপিসহ অন্যদের উদ্দেশে ভেতর থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ধরনের গালাগাল করতে শোনা যায়।
ফরিদ হোসেনের ওপর হামলার বিচার চাইতে নুরের নেতৃত্বে এস এম হলে ছাত্রীরাও যান। তখন শামসুন্নাহার হলের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমিসহ কয়েকজনের ওপর ডিম নিক্ষেপ করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাঁকে লাঞ্ছিতও করা হয়।
এ ঘটনার বিচার চেয়ে ইমি বলেন, এই হয়রানির বিচার চাই। এর যদি বিচার না হয়, আমি এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি।
এই ঘটনার পর সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে এসএম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার তাঁর কার্যালয়ে আসেন। সেখানে আগে থেকে উপস্থিত থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাঁকে বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ সময় হল প্রাধ্যক্ষ ঘটনা জানতে চাইলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চিৎকার চেচামেচিতে কিছুই শুনতে দেননি। তখন ঘটনার বিচার চাইলে নুরকে উদ্দেশ করে বিভিন্ন গালাগাল দিতে থাকেন তারা। এরপর তারা প্রাধ্যক্ষের কক্ষ থেকে বের হতে গেলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করেন।
হামলার বিষয়ে এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা ভেতরে আছি। কথা বলছি।’ ভেতরে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে না দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা কেন প্রবেশ করবে?’ পরে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, আমি সব শুনে ওই হলে প্রক্টরিয়াল টিম পাঠিয়েছিলাম। তারা বিষয়টা দেখবে। আর হল প্রাধ্যক্ষও আছেন। তিনিও দেখবেন। ছাত্রীরা কেন রাস্তায় নামবে? তাদের কোনো অভিযোগ থাকলে তারা লিখিত দিতে পারত। আমরা এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।