ভারতে উচ্চশিক্ষা
উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপ-আমেরিকায় যাওয়ার ইচ্ছা আছে অনেকেরই। অনস্বীকার্যভাবেই ওই সব দেশের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ অনেক উন্নত। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেও মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য স্কলারশিপ মিলতে পারে। আজকের লেখায় ভারতে স্কলারশিপের সুযোগ সম্পর্কে আলোকপাত করতে চাই। এ কথা সত্য যে, ইউরোপ-আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনা চলবে না। ভারত সে অর্থে কোনো উন্নত দেশ নয়। তবে অপেক্ষাকৃতভাবে দক্ষিণ এশিয়ার গবেষণার ক্ষেত্রগুলোতে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা প্রভাবশালী। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতার রবীন্দ্রভারতীসহ ব্রিটিশ আমল থেকে প্রতিষ্ঠিত কিছু প্রতিষ্ঠান তো বাংলাদেশের প্রায় সবার কাছে পরিচিত। তা ছাড়া দেশটি উচ্চশিক্ষায় দক্ষিণ এশিয়ার যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়।
ভারতে স্কলারশিপের তিন ধরনের উপায় আছে। যথা—সার্ক বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত সরকারের অর্থায়ন ও বেসরকারি স্কলারশিপ। সার্ক তথা সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির কথাই শুরুতে বলা যাক। এটি আসলে ভারতের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নয়। এটি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে। ২০১০ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। সার্কভুক্ত সব দেশই বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য অর্থায়ন করছে। সে হিসাবে প্রতিটি দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে রয়েছে নির্দিষ্ট কোটা। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্যও সার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ শতাংশ কোটা রয়েছে। কম্পিউটার সায়েন্স, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজবিজ্ঞান, গণিত, ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস, আইনশাস্ত্র ও বায়োটেকনোলজির ওপর পিএইচডি এবং দুই বছর মেয়াদি মাস্টার ডিগ্রির জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সেখানে আবেদন করতে পারে। প্রতিবছর জুলাই মাসে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়। প্রতিটি বিভাগের মাস্টার্সের জন্য ৩০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি হয় প্রতিবছর। ভর্তি ও স্কলারশিপের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয় ডিসেম্বর-জানুয়ারি থেকে। ভর্তি করা শিক্ষার্থীদের মেধার ভিত্তিতে তিন ধরনের স্কলারশিপ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণ যে কেউ সহজেই জেনে নিতে পারবেন।
http://www.sau.int/admissions/admission-notice-2015.html.
আইসিসিআর : সাধারণত ভারতের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশিদের সরাসরি কোনো স্কলারশিপ দেয় না। ভারত সরকারের অধীনে ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল স্টাডিজ (আইসিসিআর)’ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নের জন্য স্কলারশিপ দেয়। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন প্রতিবছর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বাছাই করে। প্রতিবছর ২০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে আইসিসিআরসহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়। এর আওতায় পোস্ট ডক্টোরাল, পিএইচডি, মাস্টার্স ও স্নাতক ডিগ্রির জন্য আবেদনের সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যও এই কোটায় শিক্ষাবৃত্তি মিলবে।
এ সংক্রান্ত তথ্য জানতে আরও ভিজিট করুন http://www.hcidhaka.gov.in/pages.php?id=1648. =১৬৪৮.বেসরকারি স্কলারশিপ : বেসরকারিভাবে সাউথ এশিয়া ফাউন্ডেশন (সাফ) দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে প্রায় ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগে স্কলারশিপ দেয়। এর মধ্যে ভারতে তাদের চারটি প্রকল্প রয়েছে। পেশাদার সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীরা পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমার জন্য আবেদন করতে পারবেন চেন্নাইয়ের এশিয়ান কলেজ অব জার্নালিজমে (এসিজে)। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে দুইজন শিক্ষার্থীকে স্কলারশিপ দেওয়া হয় ওই প্রোগ্রামের আওতায়। এ প্রোগ্রামটি ১০ মাস মেয়াদি। কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয় ও জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে মাস্টার্স ডিগ্রি দেয় ‘কাশ্মীর ও দক্ষিণ এশিয়া অধ্যয়ন’বিষয়ে। সেখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অর্ধেক সময় দিল্লিতে এবং বাকি অর্ধেক সময় থাকতে হয় কাশ্মীরের শ্রীনগরে। সেখানেও প্রতিবছর দুইজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সুযোগ রয়েছে। একই রকম আরেকটি দুই বছর মেয়াদি মাস্টার্স প্রোগ্রাম রয়েছে পন্ডিচেরি ইউনিভার্সিটিতে। সেখানেও সমান সংখ্যক শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি দেওয়া হয় ‘আঞ্চলিক সহযোগিতা ও দক্ষিণ এশিয়া’বিষয়ে। পন্ডিচেরি ইউনিভার্সিটির আরেকটি বিভাগ থেকে গ্রিন এনার্জি টেকনোলজির ওপর মাস্টার্স ডিগ্রির জন্যও আবেদন করতে পারেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। সাউথ এশিয়া ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার থেকেই এসব স্কলারশিপের বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট হচ্ছে www.southasiafoundation.org. সাউথ এশিয়া ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে পরিচালিত সব প্রতিষ্ঠানই ইউনেস্কোর গুড উইল এম্বাসেডর মদনজিৎ সিংয়ের নামে প্রতিষ্ঠিত।