যমজ বোনের ‘যমজ’ জিপিএ ৫
দুপুর একটা। ততক্ষণে এসএসসির ফল চলে এসেছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের মাঠে বাদ্যবাজনা আর চলছে উল্লাস। মনের মত ফল পাওয়া মেয়েরা মেতেছে আনন্দে।
ওই স্কুলেরই দুই ছাত্রী পিংক ও পার্ল আনন্দে নাচছিল। হঠাৎ দেখায় নতুন কিছু মনে হয়নি। কিন্তু ভালো করে খেয়াল করতেই চোখে পড়ল বিষয়টা। দুজনেরই পরনে স্কুলের ইউনিফর্ম, চোখে গোল ফ্রেমের চশমা, মাথায় দুটি করে বেণি। সবচেয়ে বড় কথা হল দুজন দেখতে একই রকম! কারণ পিংক ও পার্ল যে যমজ বোন!
পিংক ও পার্ল দুজনই জিপিএ ৫ পেয়েছে। আজ সোমবার ফল প্রকাশের পর দুই বোন নাচছিল নিজেদের স্কুলে। দুজনই বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেছে। কেমন লাগছে জানতে চাইলে দুজন একসঙ্গেই বলে, ‘আমরা অনেক খুশি।’
পিংক এবং পার্ল এর বাবা-মা চিকিৎসক, থাকেন সৌদি আরবে। সৌদি আরবেই ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে তারা। ভিকারুননিসায় ভর্তি হয় সপ্তম শ্রেণিতে। ঢাকায় নানা-নানির কাছে থাকে ওই দুই বোন।
জেএসসিতে তারা দুজনই গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছিল। এসএসসিতেও একই সঙ্গে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পাওয়ায় ভীষণ খুশি তাঁরা। খুশি তাঁদের পরিবারও।
পিংক বলে,‘আলহামদুলিল্লাহ আমরা দুই বোনই গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছি। এজন্য আমরা দুজন খুবই হ্যাপি। একই স্কুল থেকে একই সময়ে গোল্ডেন জিপিএ নিয়ে বের হয়েছি, এটা অনেক মজার একটা বিষয়। আমরা দুজন এক সঙ্গে সেলিব্রেট করব।’
পার্ল বলে, ‘এই রেজাল্ট পেতে আমাদের বাবা-মা, খালা এবং বন্ধুদের অনেক সহযোগিতা আছে। সবার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে আমার খালামনির অনেক অবদান আছে। সৌদি থেকে ফিরে এসে বাংলাদেশে মানিয়ে নেওয়া আমাদের জন্য অনেক কষ্টের ছিল। সব কষ্ট শেষে ভালো ফলাফল পেয়ে খুবই ভালো লাগছে।’
পিংক এবং পার্লের খালা আসেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে।
তাদের খালা আরো বলেন, ‘ওদের বাবা-মা যেহেতু বাংলাদেশে থাকে না সেহেতু আমাদের উপর অনেক দায়িত্ব ছিল। আমাদের প্রত্যাশাও ছিল ওরা ভালো রেজাল্ট করবে। তারা তাই করেছে। খুব ভালো লাগার বিষয় হলো, ওরা একবোন আর একবোন খুবই ইনসপায়ার করে। তবে ওদের ভেতরে কখনো প্রতিযোগিতা দেখিনি। একজন ঘুমালে অন্যজন ডাকে পড়তে বসার জন্য। এটা ওরা প্রতিদিনই করত।’
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করেছে ৯৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। পরীক্ষার্থী ছিল ১ হাজার ৮২৬ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১ হাজার ৮২৩ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৪৮২ জন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রধান শিক্ষক লাইলুন নাহার বলছেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাশ করেছে। শারীরিক অসুস্থতা এবং পারিবারিক কারণে তিনজন পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। এর মধ্যে একজন বিজ্ঞান বিভাগের আর বাকি দুজন ব্যবসায়িক শিক্ষায়। সুতরাং আমরা বলতেই পারি, আমরা শতভাগ পাশ করেছি।’