সাংবাদিকের সিট দখলে নিলেন রাবির ছাত্রলীগ নেতা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক সাংবাদিককে হল থেকে জোরপূর্বক বের করে দিয়ে সিট দখলে নিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিকের নাম সাকিব আল হাসান। তিনি ইংরেজি দৈনিক এশিয়ান এজের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী। অপরদিকে যার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এসেছে সেই ছাত্রলীগ নেতার নাম মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং রাবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, হবিবুর রহমান হলে ২২৪ নম্বর কক্ষে সিট বরাদ্দ পান তিনি। সোমবার রাতে বরাদ্দকৃত সিটে উঠতে গেলে মিনহাজসহ হল ছাত্রলীগের ১৫-২০ জন নেতাকর্মী বাধা দেন। জোরপূর্বক সিট থেকে তাঁর জিনিসপত্র ফেলে দিয়ে সিট দখলে নেন মিনহাজ।
এ সময় সাকিবকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে বিষয়টি হল প্রাধ্যক্ষকে জানালে মিনহাজ ভুক্তভোগী সাংবাদিককে মারতে উদ্যত হন। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হলে এসে হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষে বৈঠকে বসেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে তাঁরা ওই সিট দখলে রেখে চলে যান।
এর আগে গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ৩৪৭ নম্বর কক্ষে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে হল প্রশাসন সিটে তুলে দেন। পরে রাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি মাহমুদুল হাসান সাকিল জোর করে তাঁকে সিট থেকে নামিয়ে দেন। হল প্রাধ্যক্ষ সাকিলের কাছে বিষয়টি জানতে চান। তখন সাকিল হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘২২৪ নম্বর কক্ষে একটি সিট খালি হওয়ায় আমি আমার এক ছোট ভাইকে নিয়ে ওই কক্ষে যাই। পরে জানতে পারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে এক শিক্ষার্থীকে ওই কক্ষে বরাদ্দ দিয়েছে। তবে ওই কক্ষে আমার যাওয়া উচিত হয়নি।’
তবে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার বিষয়টি অস্বীকার করলেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত অনেকেই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
জানতে চাইলে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘হলের প্রাধ্যক্ষ বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। আপনারা প্রাধ্যক্ষ স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।’
হল প্রাধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করেছি। সাংবাদিকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে কি না, আমার জানা নেই। তবে যদি কেউ এ রকম করে থাকে তাহলে হল প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর দাবি, ‘বিষয়টি মীমাংসা করা হয়নি। ছাত্রলীগ সিট এখনো দখলে রেখেছে।’
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক আহসান হাবীব বলেন, আপনার কাছ থেকে আমি বিষয়টি শুনলাম। তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। হল প্রাধ্যক্ষ্যের সঙ্গে কথা বলে কী করা যায় দেখছি।’