এ প্রজন্মের চেতনার উৎস সংশপ্তক
বাংলাদেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ভাস্কর্য। বাংলাদেশে অবস্থিত ভাস্কর্যগুলোর অধিকাংশের অবস্থান বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। এসব ভাস্কর্য আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধারণ করে। এগুলোর কোনোটা আবার আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে বিভিন্ন ভাস্কর্যের মধ্যে একটি হলো ‘সংশপ্তক’।
ঢাকার অদূরে অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থিত এটি। ১৯৯০ সালের ২৬ মার্চ নির্মিত এই ভাস্কর্যের স্থপতি ছিলেন শিল্পী হামিদুজ্জামান খান। আর এটি উদ্বোধন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সালেহ আহম্মেদ। মূল বেদি থেকে ভাস্কর্যের উচ্চতা ১৫ ফুট। মূল ভাস্কর্যটি তৈরি হয় ব্রোঞ্জ ধাতু দ্বারা। এ ছাড়া এর বেদি তৈরিতে লাল সিরামিক ইট ব্যবহার করা হয়েছে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা পেয়েছি। পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। তাই ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবসকে স্মরণ রাখার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়। তেমনিভাবে বাঙালি জাতীয় গৌরব মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করার জন্য নির্মাণ করা হয় মুক্তিযুদ্ধ স্মারক ভাস্কর্য ‘সংশপ্তক’।
মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্য ও চেতনাকে এতে ধারণ করা হয়েছে। যুদ্ধের ময়দানে নিশ্চিত পরাজয় জেনেও লড়ে যাওয়া অকুতোভয় বীর যাঁরা, তাঁরাই হলেন ‘সংশপ্তক’। মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করা যাঁদের স্বপ্ন ছিল, শত্রুর বুলেটের সামনেও তাঁরা তাঁদের জীবনকে তুচ্ছ করেছিলেন। মূলত এই চেতনাকে ধারণ করেই তৈরি করা হয় ‘সংশপ্তক’, যেখানে শিল্পী হামিদুজ্জামান ফুটিয়ে তুলেছেন যুদ্ধে শত্রুর আঘাতে এক হাত ও এক পা হারিয়েও রাইফেল হাতে লড়ে যাওয়া এক অকুতোভয় বীরের প্রতিকৃতি। সংশপ্তক হলো ধ্রুপদি যোদ্ধাদের নাম, যাঁরা মরণপণ যুদ্ধে অপরাজিত। ভাস্কর্যটিতে শিল্পী মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্রোঞ্জের শরীরে প্রতীকী ব্যঞ্জনায় প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন। লাল সিরামিক ইটের শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধার এই প্রতিকৃতি একদিকে যেমন মনে করিয়ে দেয় মুক্তিযোদ্ধাদের দৃঢ় মনোবলের কথা, অন্যদিকে ব্রোঞ্জের অবয়বে প্রতিফলিত আলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শাশ্বত বিচ্ছুরণের কথা। আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও চেতনাকে দৃশ্যমান করার লক্ষ্যেই ‘সংশপ্তক’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।