ময়লা-আবর্জনায় হারাচ্ছে সৌন্দর্য
যত্রতত্র ময়লা ও আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার কারণে সৌন্দর্য হারাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। সবুজে ঘেরা, প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হচ্ছে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে। প্রশাসনের অবহেলার কারণে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।
গত এক সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, শহীদ মিনার এলাকা, জহির রায়হান মিলনায়তন চত্বর, টারজান পয়েন্ট, রাস্তার দুই পাশ, লেক, বটতলাসহ ক্যাম্পাসের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কাগজ, পলিথিন, খাবার ও সিগারেটের প্যাকেট, কলার খোসাসহ নানা ধরনের আবর্জনা। সম্প্রতি অতিথি পাখি দেখতে প্রচুর দর্শনার্থী ক্যাম্পাসে আসছেন। তাঁদের ফেলে দেওয়া পানির বোতল, খাবার, চিপস ইত্যাদির প্যাকেটের কারণে ক্যাম্পাস আরো বেশি নোংরা হচ্ছে বলে ধারণা করছেন অনেকে। বিভিন্ন স্থানে আবর্জনার আধিক্য এতই বেশি যে দেখেই বোঝা যায়, অনেক দিন ধরেই সেসব আবর্জনা পরিষ্কার করা হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে ময়লা জমতে থাকায় কয়েকটি জায়গা দেখে বোঝার উপায় নেই, এটা আসলেই ময়লার ভাগাড় কি না।
ক্যাম্পাসের লেকগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। অনেক দিন ধরে পরিষ্কার না করায় লেকগুলো কচুরিপানা, ঘাস, লতাপাতায় সম্পূর্ণ ঢাকা পড়ার পাশাপাশি লেকের পাড়ে ও কিনারার পানিতে প্রচুর কাগজ ও পলিথিনজাতীয় বস্তু দেখা যায়। এতে করে নষ্ট হয়ে পড়েছে লেকের পানি; ময়লা পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশা। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সম্প্রতি ক্যাম্পাসে মশার উৎপাত ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন আবাসিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার। তবে এই অব্যবস্থাপনার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির ওপর দোষ চাপিয়েছেন এস্টেট শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল আমিন। তিনি জানান, কেবল বিভিন্ন উপলক্ষে আমরা মাঝেমধ্যে ক্যাম্পাস পরিষ্কার করে থাকি। এর বাইরে কোনো দায়িত্ব নেই আমাদের। তবে আবাসিক এলাকা বাদে ক্যাম্পাসের বাকি অংশ পরিষ্কার করার দায়িত্ব এস্টেট শাখার বলেই জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক খবির উদ্দিন বলেন, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লোকজন কেবল বাসাবাড়ি, অফিস, দোকানপাট ও আবাসিক হলগুলো থেকে ময়লা নিয়ে যাবে। এর বাইরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির কোনো দায়িত্ব নেই। বাকি দায়িত্ব এস্টেট শাখার।’
এদিকে, অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে বলে অভিমত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। এ জন্য তাঁরা প্রশাসনের অবহেলাকেই দায়ী করছেন। তাঁরা জানান, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন পদে থাকাকালীন ক্যাম্পাসের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতেন। এ লক্ষ্যে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত দূরত্বে ময়লা ফেলার ঝুড়ি স্থাপন করা হয়েছিল সে সময় এবং নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হতো। তবে অব্যবস্থাপনা ও অবহেলায় বর্তমানে সেগুলো নষ্ট হয়ে গেলেও নতুন ময়লার ঝুড়ি বসাতে এস্টেট শাখার তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
এ ব্যাপারে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী এহসানুল হক বলেন, ‘প্রায় ছয় বছরের ক্যাম্পাস-জীবনে এত অপরিষ্কার ক্যাম্পাস এর আগে কখনো দেখিনি। আগে দেখতাম, নিয়মিত ক্যাম্পাসের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হতো, এখন আর সেটা দেখি না। আমি মনে করি, দায়িত্বপ্রাপ্তদের গাফিলতির কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’
এ ব্যাপারে দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘বর্তমান প্রশাসন তাদের রুটিন কাজের বাইরে কোনো কাজ করছে না। প্রশাসনের যে একটা উদ্যমী ভাব থাকা দরকার, তা এ প্রশাসনের নেই। তাই এ ব্যাপারগুলো ঘটছে।’