বিদ্যুতের ব্যবহার কত হবে, ঠিক করা যাবে আগেই!
আপনি মাসে কতটুকু বিদ্যুৎ খরচ করতে চান, তা এখন আপনিই নির্ধারণ করতে পারবেন। আর এটা সম্ভব হবে ‘ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম’ নামে এক বৈদ্যুতিক মিটারের সাহায্যে। শুধু মাসিক বিদ্যুৎ ব্যবহার পরিকল্পনাই নয়, বিদ্যুৎ অপচয় রোধ, মিটার রিডিং, মিটার থেকে অবৈধ লাইন চুরি, মিটার হ্যাকিংসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেবে এ মিটার। আর এই বৈদ্যুতিক মিটার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কম্পিউটার, এমনকি অ্যানড্রয়েড মোবাইলের সাহায্যেও।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) এক সংবাদ সম্মেলনে এমন সব তথ্যই জানালেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) এই বৈদ্যুতিক মিটারের দুই উদ্ভাবক কে এম নাজমুল হাসান সজীব ও সর্বার্থ গোস্বামী প্রীতম। তাঁরা দুজনেই রুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
সংবাদ সম্মেলনে এর বর্ণনা দিয়ে সজীব ও প্রীতম বলেন, বাংলাদেশে অ্যানালগ মিটারের পরিবর্তে ডিজিটাল মিটার ব্যবহার শুরু হয়েছে। তবুও এগুলোর সঙ্গে ইন্টেলিজেন্স মিটারের বেশ পার্থক্য আছে। ডিজিটাল মিটারগুলো বিদ্যুৎ খরচ পরিমাপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আমাদের এ মিটারের সাহায্যে গ্রাহক প্রতি মাসে কতটুকু বিদ্যুৎ খরচ করতে চায়, সেটা এই সফটওয়্যারকে জানিয়ে দিলে বৈদ্যুতিক যন্ত্রগুলোর লোড লিমিট করে খরচটা বেঁধে দেবে, মানের আশপাশে রাখবে। কোন বৈদ্যুতিক যন্ত্র কতটুকু সময় ধরে চলবে, সেটা নির্ধারণ করবে। সে সঙ্গে ইনপুট ভোল্টেজ কত এবং ওভারলোডেড কি না, সেটা নির্ধারণ করে বিদ্যুতের মান পরিমাপ করে।
রুয়েট শিক্ষার্থীদের মতে, সফটওয়্যারটি ব্যবহারকারীকে জানিয়ে দেবে, চলতি মাসে কীভাবে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিগুলো ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ বিল তুলনামূলক কম হবে। এ ছাড়া এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে ঘরের এসি, ফ্যান, ওয়াটার হিটার, লাইট ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এবং এগুলো ব্যবহারের ফলে কত খরচ হয়েছে, তা-ও জানা সম্ভব এই সফটওয়্যার থেকে। প্রতিটি বাসা কিংবা শিল্পকারখানা থেকে কী পরিমাণ ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হচ্ছে এবং তা সহনীয় মাত্রায় আছে কি না, তা-ও জানা সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইন্টেলিজেন্স মিটারটি এখন তৈরি করতে খরচ হচ্ছে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এটাকে বড় পরিসরে তৈরি করে বাজারজাত করতে পারলে উৎপাদক খরচ এক হাজারে নামিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
উদ্ভাবকরা জানান, বর্তমানে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে যে ১৫ শতাংশ নন-টেকনিক্যাল লস হয়, তা এই সিস্টেম ব্যবহারে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে সরকারের প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বাঁচবে, যা দিয়ে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মেইন গ্রিডে যুক্ত করা যাবে। এতে নতুন করে আরো দুই কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সেবার আওতায় আনা যাবে।
এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রাম থেকে শহর সারা দেশে এ সুবিধা পেতে অ্যানড্রয়েড মোবাইল, ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করা যাবে। এ ছাড়া যাদের ইন্টারনেট, অ্যানড্রয়েড সুবিধা নেই, তাদের জন্য মোবাইলের মেসেজের মাধ্যমে এসব সুবিধা দেওয়া হবে।