সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের নীলক্ষেত অবরোধ, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেছেন। সিজিপিএ শর্ত শিথিল করে সর্বোচ্চ তিন কোর্স পর্যন্ত মানোন্নয়ন দিয়ে পরবর্তী বর্ষে চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগের দাবিতে এই অবরোধ শুরু করেন তারা। আজ রোববার (২৭ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিয়ে সব সড়ক অবরোধ করেন।
এর আগে গত ১৬ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন এই শিক্ষার্থীরা। পরে গত রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ গণঅনশন পালন করেন তারা।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা তাদের ফল প্রকাশের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বিপাকে পড়েছেন বলে জানান। যার সকল দায়ভার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজ প্রশাসনের ওপর চাপিয়েছেন তারা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সাত কলেজের সক্ষমতা না থাকা এবং নানামুখী সংকটের পরও বিশ্ববিদ্যালয় জোর করে সিজিপিএ শর্ত চাপিয়ে দিয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, নির্ধারিত জিপিএ বা সিজিপিএ শিথিল করে, তিন বিষয় পর্যন্ত মানোন্নয়ন পরীক্ষার মাধ্যমে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন দিতে হবে বলে দাবি জানান তারা।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবি নিয়ে বহুবার সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, পজিটিভ কোনো পরিবর্তন আসবে। কিন্তু কাজ হয়নি। এজন্য আজ আমরা গণ-আন্দোলনের ডাক দিয়েছি। বেলা ২টা পর্যন্ত যদি কোন পজিটিভ নোটিশ না আসে, তাহলে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
এদিকে, তাদের এই অবরোধ কর্মসূচির কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। অবরোধের ফলে নীলক্ষেত থেকে মিরপুর, পিলখানা, ঢাবি ক্যাম্পাস ও আজিমপুর রোডে সৃষ্ট বিরাট যানজটে দীর্ঘ সময় তীব্র গরমে যানবাহনে বসে থেকে অতিষ্ঠ হয়ে পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে যাওয়া শুরু করে সাধারণ মানুষ।
এই পরিস্থিতিতে যানবাহন ড্রাইভার ও শ্রমিকরাও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। ধামরাই পরিবহণ বাসের ড্রাইভার জসিম বলেন, ‘এক ঘণ্টার ওপরে হলো এখানে বাস দাঁড় করিয়ে রাখছি। যাত্রীরা অতিরিক্ত গরমে আর বসে থাকতে না পেরে বিরক্ত হইয়া সব নেমে গেছে। ভাল কোন শিক্ষক বা ছাত্রদের কাজ এটা হতে পারে না। তোমাদের রেজাল্ট দেয় না, তোমরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইটে আন্দোলন কর, একাই শিক্ষকরা নেমে আসবে যে তোমার রেজাল্ট দিতেই হবে। কিন্তু, রাস্তা বন্ধ করে এরকম আন্দোলন করলে সাধারণ পাবলিক, গাড়িওয়ালা বা সবারই ক্ষতি।’
ঠিকানা পরিবহণের চালক মিরাজ মাহমুদ বলেন, ‘গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি। যাত্রী সব নেমে গেছে। তারা (অবরোধকারী শিক্ষার্থীরা) রাস্তা ক্লিয়ার করলে আমরা যেতে পারব। তাদের এটুকু বোঝা উচিত যে, গাড়িতে বিভিন্ন ধরনের রোগীও থাকতে পারে বা গুরুত্বপূর্ণ কাজও থাকতে পারে।’
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিজিপিএ নীতিমালার শর্ত শিথিল করে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশনের দাবিতে নীলক্ষেতে অবরোধ, প্রেসক্লাবে অনশনসহ বিভিন্নভাবে প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন সাত কলেজের স্নাতকের (২০১৭-২০১৮, ২০১৮-২০১৯, ২০১৯-২০২০ ও ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীরা। তবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিজিপিএ শর্তে এখনো নিজেদের অনড় রয়েছে। এজন্য, চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে দোটানায় পড়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।