ঢাবির টিএসসিতে ইফতারের টেবিলে সব রাজনৈতিক দল
সারা বছর রাজপথে বিরোধী হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা) আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে কিছু সময়ের জন্য একই ছাদের নিচে এবং এক টেবিলে ইফতার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সব রাজনৈতিক ও সামাজিক ছাত্র সংগঠনের নেতারা।
আজ শুক্রবার (২৯ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনে (টিএসসি) ‘শিক্ষাঙ্গনে সংকট, ছাত্র সংগঠন নির্বাচনের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে ডুজা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বা রাজনৈতিক অঙ্গনে তারা বিপরীত মেরুতে। একেকজনের রাজনৈতিক মতাদর্শ একেক রকম। ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সহাবস্থানও নেই। আবার, ক্যাম্পাসে নির্বিঘ্নে প্রবেশের পথও সংকীর্ণ কিছু ছাত্র সংগঠনের নেতাদের জন্য। তার পরও সব রাজনৈতিক ও সামাজিক ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণে হয় এই ইফতার মাহফিল।
আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করেন।
ঢাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। প্রধান আলোচক ছিলেন লেখক, বিশ্লেষক ও ঢাবির বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে ডুজা সভাপতি আল সাদী ভুঁইয়া বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের মতানৈক্য দেখি বা ক্যাম্পাসে তাদের সহাবস্থান সেভাবে লক্ষ করি না। তবে আজকে ডুজার আয়োজনে সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনকে আমরা এক ছাদের নিচে আনতে পেরেছি। এটা আমাদের জন্য একটা বিশেষ প্রাপ্তি। আমরা সাংবাদিক সমিতি চাই ক্যাম্পাসে সবসময়ই রাজনৈতিক সহাবস্থান বিরাজ করুক এবং শিক্ষার্থীরা সুস্থ রাজনৈতিক চর্চা করার সুযোগ লাভ করুক। এ সময় তিনি এই আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকনেতা, সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতা, এবং আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই আয়োজন সফল করার জন্য ধন্যবাদ জানান।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব উপাচার্যসহ ঢাবি প্রশাসনকে বলেন, আজকে ছাত্রদলের নেতাদের ক্যাম্পাসের বাইরে রাখা হয়েছে, যা আধুনিক যুগের ছাত্র রাজনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আমরা চাই, বর্তমান পরিস্থিতিতে ডাকসুর নির্বাচন যেন অতি সত্বর দেওয়া হয়। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদের মিটিং করা প্রয়োজন। ক্যাম্পাসের সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের অবাধ নির্বাচন ও বিচরণ নিশ্চিত করতে হবে। হলগুলো রাজনৈতিক সংগঠনের কাছ থেকে মুক্ত করে শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা হোক।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ, শিক্ষার্থীদের অবাধ রাজনৈতিক চর্চায় ডাকসুর ভূমিকা রয়েছে। এটা শিক্ষার্থীদের আইনি অধিকারও। আমরা বিশ্বাস করি, ছাত্র রাজনীতিকে আরও স্মার্ট ও যুগোপযোগী করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরি। এর মাধ্যমে ক্যাম্পাস ভায়োলেন্স কমিয়ে আনা সম্ভব।
এ সময় সাদ্দাম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট, লাইব্রেরি সংকট ও অন্যান্য সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাস্টার প্লান দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের অনুরোধ জানান।
ঢাবির বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ১৯২১ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল এবং পাকিস্তান আমলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তা অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তন পরিবর্ধিত হয়েছে। তবে শিক্ষাক্ষেত্রে আরও পরিবর্তন আনা জরুরি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনের সবাইকে অনুরোধ জানাই, যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায় আরও উন্নয়ন করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের আস্থার সংগঠন ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে নতুন করে ভাবা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, আমরা ছাত্রনেতাদের ছাত্র সংসদ নির্বাচন কেন্দ্রিক বক্তব্য শুনেছি। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকুক। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকুক। প্রশাসন চায় বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানে নিয়ে যেতে। এতে শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংঠনের সহযোগিতা প্রয়োজন। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। এটি শিক্ষার্থীদের সহ-শিক্ষা কার্যক্রমকে প্রসারিত করে। নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ পেলে আমরা নির্বাচন আয়োজন করতে পারি। তবে এই দায়িত্ব প্রশাসন বা কোনো ছাত্রসংগঠনের একার নয়। এতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতা করবে। তাহলেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেস্ট হিউম্যান রিসোর্স প্রোভাইড করতে পারব।
উপাচার্য আরও বলেন, লাইব্রেরি সংস্কার, আবাসন সংকট সমাধানের জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। আশা করি মাস্টারপ্লানের কাজ শুরু হলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চিত্র পাল্টে দিতে পারব এবং শিক্ষার্থীদের অনুকূল শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারব।
ডুজার সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতা, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল এবং বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাদের মধ্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, ঢাবি সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির, ছাত্রদলের ঢাবি সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি (একাংশ) রাগীব নাঈম, সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি (অন্য অংশ) দীপক শীল, সাধারণ সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড, সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফসহ সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।