গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে পুনরায় ভোট আজ
গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আলোচিত সংসদীয় আসন এটি। অনিয়মের অভিযোগে এ পুরো আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শুধু তাই নয়, অনিয়মের অভিযোগে ১৩৪ নির্বাচনি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে ইসি। গত বছরের ১২ অক্টোবর নির্বাচন বন্ধ হওয়া এই আসনটিতে ফের ভোটগ্রহণ শুরু আজ বুধবার (৪ জানুয়ারি) সকাল আটটা থেকে। চলবে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে গতবারের অভিজ্ঞতার আলোকে সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে দাবি ইসির। অনিয়মের ঘটনায় অভিযুক্ত ১৩৪ কর্মকর্তাকে ভোটের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়ে সাঘাটা-ফুলছড়ির বাইরে থেকে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। গতবারের মতো এবারও ঢাকায় বসে সিসিটিভিতে মনিটরিং করা হবে এ নির্বাচন।
এদিকে, নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়মকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান। তিনি বলেন, ‘জাতির সামনে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রচেষ্টায় কমিশন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। গাইবান্ধা উপনির্বাচন সুষ্ঠু এবং অবাধ করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অনিয়মের কারণে গাইবান্ধা উপনির্বাচনটা বন্ধ করা হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে সতর্কতার সঙ্গে গাইবান্ধার প্রত্যেকটা সিচুয়েশন আমরা মনিটর করছি এবং নির্দেশনা দিচ্ছি, অ্যাকশন নিচ্ছি। এ উপনির্বাচনে পুনরায় কেউ অনিয়মের চেষ্টা করলে কঠোর হাতে তা দমন করা হবে।’
গত ২৩ জুলাইয়ে সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার মৃত্যুতে এ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে অনিয়ম ও দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ মেলায় রিটার্নিং কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশের পাঁচ উপপরিদর্শক (এসআই) ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাসহ ১৩৪ জনের বিরুদ্ধে বরখাস্তসহ নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ আইন অনুসারে বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তির সুপারিশ করে ইসি, যা বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। পরে গত ৬ ডিসেম্বর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের পুনঃভোটের জন্য ৪ জানুয়ারি নতুন তারিখ ঠিক করে ইসি।
এই উপনির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন, জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু, বিকল্পধারা মনোনীত জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্রপ্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাত এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। যদিও, গত ২৫ ডিসেম্বর আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ বগুড়ায় এক সংবাদ সম্মেলন করে ভোট কারচুপির আশঙ্কায় এই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীর লোকজন ও সমর্থকরা দৌঁড়ঝাপে ব্যস্ত থাকলেও ভোটারদের তেমন আগ্রহ নেই। তবে, ১২ অক্টোবরের উপনির্বাচনকে ঘিরে হাটবাজার ও চায়ের দোকানগুলোতে আলোচনার ঝড় উঠেছিল।
এ নির্বাচনের সহকারী-রিটার্নিং কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযুক্ত ১৩৪ জনকে নির্বাচনি দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সাঘাটা-ফুলছড়ির বাইরের উপজেলা থেকে নতুন করে প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সরকারের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারা এই নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্বে থাকবেন। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সব ধরনের ব্যবহস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
ইসির যুগ্ম সচিব ও জনসংযোগ শাখার পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতির পাশাপাশি ১৪৫টি ভোটকেন্দ্রে এক হাজার ২৪২টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে, যা পর্যবেক্ষণের জন্য উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং সেল গঠন করেছে ইসি। প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ থেকে ১৭ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ থেকে ১৮ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের ছয়টি ভ্রাম্যমাণ ও চারটি স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোটের মাঠে থাকবে।
এ উপনির্বাচনে ১৪৫টি কেন্দ্রের ৯৫২টি বুথে ইভিএম ভোটগ্রহণ করার জন্য ১৪৫ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ৯৫২ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও এক হাজার ৯০৪ জন পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, মোট ভোটার তিন লাখ ৩৯ হাজার ৯৮ জন। নিরাপত্তার জন্য প্রতি কেন্দ্রে দুইজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ চারজন পুলিশ সদস্য এবং ১২ জন আনছার ও ভিডিপি দায়িত্ব পালন করছেন। তবে, ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলের ১০টি কেন্দ্রে ১০ করে পুলিশ সদস্য ও ১৬ জন করে আনছার ও ভিডিপি দায়িত্ব পালন করবেন।
একইভাবে সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চলের তিনটি কেন্দ্রেও ১০ জন করে পুলিশ সদস্য ও ১৬ জন করে আনছার ও ভিডিপি দায়িত্ব পালন করবেন।
ইসি জানিয়েছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য র্যাবের ৯টি টিম, চার প্লাটুন বিজিবি ও অস্ত্রধারী আনসার সদস্য ছাড়াও এক হাজার ২৮৫ জন পুলিশ নিরাপত্তা প্রদানে দায়িত্ব পালন করছেন।
গাইবান্ধা-৫ আসনটি ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। প্রতি ইউনিয়নে একজন করে মোট ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দুজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।