নারায়ণগঞ্জে নারী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে মাঠে ছিলেন প্রার্থীদের স্ত্রীরা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনে হেভিওয়েট প্রার্থীদের নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় তাদের স্ত্রীরাও মাঠ চষে বেড়িয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) শেষ নির্বাচনি প্রচারে স্বামীর পক্ষে উন্নয়নের ফিরিস্তি ও নানা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে ভোট চেয়েছেন তারা। বিশেষ করে নারী ভোটারদের টার্গেট করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলেছে তাদের গণসংযোগ, প্রচারপত্র বিলি ও উঠান বৈঠক। ফলে ভোটের মাঠে প্রার্থীদের স্ত্রীদের ভোট প্রার্থনা নতুন মাত্রাযুক্ত করেছে নির্বাচনি প্রচারণায়। তবে সবকিছুর নেপথ্যে রয়েছে ভোটের দিন নারী ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানো।
রূপগঞ্জ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকে ভোটযুদ্ধে বিজয়ী করার জন্য প্রচারে নামেন তার স্ত্রী তারাব পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজী।
গোলাম দস্তগীর গাজী একদিকে প্রচারণার গেলে, অন্যদিকে গিয়েছেন হাসিনা গাজী। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ, প্রচারপত্র বিলি ও উঠান বৈঠক করেছেন তিনি।
এ সময় ভোটারদের হাসিনা গাজী বলেন, তার স্বামী গত ১৫ বছর ধরে তিনবারের সংসদ সদস্য। দীর্ঘ এই সময়ে তিনি রূপগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। উপজেলার এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তাই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আবারও তার স্বামী গোলাম দস্তগীর গাজীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
একই আসনে গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব ও দলের মনোনীত প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের পক্ষে নির্বাচনি প্রচারে দিনরাত শ্রম দিয়েছেন তার স্ত্রী ফারজানা হালিমা। তবে তিনি আলাদাভাবে প্রচারে না গেলেও প্রচারণার সময় স্বামীর পাশে থাকছেন।
আড়াইহাজার আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুর স্ত্রী আড়াইহাজার উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়মা আফরোজ ইভা সরকারি কর্মকর্তা হয়েও স্বামীকে বিজয়ী করতে ভোটের মাঠে নেমেছেন।
যদিও সরকারি কর্মকর্তা হয়ে স্বামীর পক্ষে নির্বাচনি প্রচারে অংশ নেওয়ার কারণে নারায়ণগঞ্জ জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা তাকে শোকজ করেছেন। তারপরও নানাভাবে তিনি আড়ইহাজার উপজেলায় তার স্বামীর উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছেন ভোটারদের কাছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তার স্বামী নজরুল ইসলাম বাবুকে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সোনারগাঁ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের নির্বাচনি প্রচারে নারীদের নিয়ে প্রতিদিন পর্যায়ক্রমে সোনারগাঁ উপজেলা চষে বেড়িয়েছেন তার স্ত্রী রুবিয়া সুলতানা। গণসংযোগ, প্রচারপত্র বিলি ও উঠান বৈঠক করেছেন তিনি।
ভোটারদের রুবিয়া সুলতানা বলেন, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার স্বামী এই আসনে সংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর পাঁচ বছর সোনারগাঁয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তাই আবারও তার স্বামীকে ভোট দেওয়ার জন্য ভোট প্রার্থনা করেন।
একই আসন থেকে দুইবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকাকে আবারও ভোটের লড়াইয়ে বিজয়ী করতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গণসংযোগ, প্রচারপত্র বিলি ও উঠান বৈঠক করেছেন তার স্ত্রী সোনারগাঁ উপজেলা জাতীয় মহিলা পার্টির উপদেষ্টা ডালিয়া লিয়াকত। গত ১০ বছরে সোনারগাঁয়ে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে সেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আবারও তার স্বামীকে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন তিনি।
ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে তার নির্বাচনি এলাকা চষে বেড়িয়েছেন তার স্ত্রী জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান সালমা ওসমান লিপি। প্রতিদিন শিডিউল মেইন্টেন করে সকাল-বিকেল দুই বেলা গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন তিনি। তার বক্তব্যে দুটি দিক প্রাধান্য পেয়েছে। একটি হলো তার স্বামীর করা উন্নয়ন। দ্বিতীয়টি হলো ভোটকেন্দ্রে নারী ভোটারের উপস্থিতি বাড়ানো।
সদর-বন্দর আসনে এ কে এম শামীম ওসমানের বড় ভাই দুই বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা সেলিম ওসমানের স্ত্রী নাসরিন ওসমানের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে নির্বাচনি মাঠে। তবে তিনি আলাদাভাবে কোনো প্রচার-প্রচারণায় যাননি। সেলিম ওসমানের সঙ্গে প্রচার-প্রচারণায় উপস্থিত ছিলেন তিনি।
এদিকে প্রার্থীদের স্ত্রীদের প্রচার-প্রচারণায় নারীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এতে ভোট দিতে উৎসাহ বেড়েছে বলে জানান এই প্রার্থীদের স্ত্রীরা। তা ছাড়া নারী ভোটাররা প্রার্থীদের সঙ্গে সরাসরি তাদের মতবিনিময় করতে না পারলেও তাদের স্ত্রীদের মাধ্যমে তাদের চাহিদা উপস্থাপন করতে পেরে বেশ আত্মতৃপ্তি অনুভব করেছেন।
প্রার্থীরাও তাদের স্ত্রীদের মাধ্যমে জেনে আশ্বাস দিয়েছেন, নির্বাচিত হলে নারীদের বিভিন্ন সমস্যা ও চাহিদা বাস্তবায়ন করবেন।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে ৭ জানুয়ারি নারী ভোটারদের উপস্থিতি প্রমাণ করবে প্রার্থীদের স্ত্রীরা কতটা উজ্জীবিত করতে পেরেছেন নারী ভোটারদের।