নোটারি কী ও কেন
সরকারি কর্মকর্তাকে দিয়ে ছবি সত্যায়িত করার অভিজ্ঞতা নিশ্চয় আছে আপনার? নোটারিও সত্যায়িত করার ব্যাপার, তবে ছবি নয়, আপনার বিভিন্ন দলিল বা ডকুমেন্ট সরকারিভাবে সত্যায়িত করাকেই নোটারি বা নোটারি পাবলিক বলা হয়।
নোটারি পাবলিককে সংক্ষেপে নোটারি বলা হয়ে থাকে। নোটারি শব্দের মূল নামপদ ‘note’ এবং ‘ary’ অনুসর্গ নিয়ে গঠিত। শব্দটি এসেছে লাতিন ভাষার nota+arius থেকে, এর অর্থ শর্টহ্যান্ড লেখক, কেরানি ইত্যাদি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নোটারির প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশের আইন অঙ্গনেও নোটারি পাবলিক এক অতি পরিচিত নাম। কোনো গুরুত্বপূর্ণ দলিল বা ডকুমেন্টকে সত্যায়িত করতে গেলেই নোটারি পাবলিকের প্রয়োজন পড়ে। আমাদের দেশে সাধারণত নোটারি পাবলিকের কাজ অনুমোদিত আইনজীবীরাই করে থাকেন। এ বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হয় নোটারিস অর্ডিন্যান্স এবং নোটারিস রুলস-১৯৬৪ দ্বারা।
নোটারি কেন করা হয়
গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে ডকুমেন্ট উপস্থাপন করতে হলে সাধারণত নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সত্যায়িত করে জমা দিতে হয়। বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই সত্যায়িত করা বাধ্যতামূলক। জমিজমা সংক্রান্ত দলিল-দস্তাবেজ, হলফনামা, বিবাহবিচ্ছেদ, গাড়ি বেচাকেনা, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, চারিত্রিক সনদপত্র, জন্ম-মৃত্যুর সনদপত্র এবং বিদেশে নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে নোটারি পাবলিক দিয়ে সত্যায়িত করা বাধ্যতামূলক।
এ ছাড়া পেমেন্ট অথবা ডিমান্ডের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা জোরদার করতে, বটম্রি এবং রেসপনডেনটিয়া বন্ড (bottomry and respondantia bonds ), চার্টার পার্টি এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক দলিলপত্র তৈরিতে নোটারির ব্যবহার রয়েছে।
কীভাবে করতে হয়
নোটারি পাবলিক করতে গেলে আইনজীবী আপনার মূল কাগজপত্র যাচাই করে দেখবেন। এরপর তিনি নিশ্চিত হলে তা সত্যায়িত করবেন। মূল কাগজপত্র বলতে বোঝানো হচ্ছে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জন্ম ও মৃত্যুর সনদ, চারিত্রিক সনদ ইত্যাদি। আর আপনি যদি বিয়ে, তালাক কিংবা হলফনামা তৈরি করতে চান তাহলে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে আপনার নোটারি করতে হবে। নোটারি বিধিমালা (৬০ক) অনুযায়ী, একজন নোটারিয়ান বা যিনি নোটারি করে দেন তাঁর নির্দিষ্ট কার্যালয় থাকতে হবে। আর নোটারি করার সাইনবোর্ড কার্যালয় ছাড়া অন্য কোথাও ঝোলানো যাবে না।
নোটারি করতে খরচ
নোটারি পাবলিক করতে কত খরচ হয়? অনেকে মনে করেন, নোটারি পাবলিকের জন্য হাজার খানেক টাকা লাগে। এটি ভুল। এমন ভুল ধারণা ছড়ানোর অবশ্য কারণও রয়েছে। এক শ্রেণীর দালাল নোটারি পাবলিকের ব্যবসা খুলে সাধারণের কাছ থেকে হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। কিন্তু এ কাজের জন্য সরকারের নির্ধারিত ফি রয়েছে। সরকার নির্ধারিত ফি সত্যায়নের কাজে ১০ টাকা, আর যেকোনো স্ট্যাম্পে হলফনামা, চুক্তিপত্রের ক্ষেত্রে ২০-২৫ টাকা খরচ হয়। অথচ অনেক নোটারি পাবলিক প্রার্থীদের কাছ থেকে ৫০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে থাকেন।
প্রতারণা থেকে সাবধান
নিয়মানুযায়ী কাগজপত্র নোটারি করার সময় আপনার নিজের আইনজীবীর সামনে উপস্থিত থাকতে হবে। অনেক সময় প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে নোটারির কাজ সম্পাদন ও ভুয়া কাগজপত্রের ভিত্তিতে নোটারি করা হয়। নোটারির কাজ হয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। অনেক অবৈধ নোটারি পাবলিক নিজেরাই সিলমোহর বানিয়ে প্রতারিত করে থাকেন। কাজেই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া মারা গেছেন এমন নোটারি পাবলিকের সিলমোহর ব্যবহার করেও অনেকে প্রতারিত করতে পারেন। বয়সের মিথ্যা তথ্য দেওয়া সনদ, বিবাহবিচ্ছেদ ও মামলার কাজে মিথ্যা হলফনামা, পেছনের তারিখে দলিল তৈরি, মৃত ব্যক্তিকে জীবিত বানিয়ে আমমোক্তারনামা বানানো, মিথ্যা চুক্তিপত্র, ভুয়া আপসনামাসহ বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা সনদ এবং দলিল সম্পাদনার কাজ করছেন এক শ্রেণীর অবৈধ নোটারি পাবলিক। ভুয়া নোটারিরা অনেক ক্ষেত্রে সাদা কাগজে নোটারির কাজ সম্পন্ন করে অপরাধী চক্রকে বিভিন্নভাবে অপরাধ করতে সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অতএব নোটারি করার আগে নোটারি পাবলিক সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন।
কারা নোটারি করতে পারবেন
নোটারিস অর্ডিন্যান্স এবং নোটারিস রুলস-১৯৬৪ দ্বারা বাংলাদেশে নোটারি পাবলিকের বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হয়। সাধারণত কোনো ব্যক্তি, যিনি কমপক্ষে সাত বছর আইনজীবী হিসেবে কর্মরত আছেন অথবা বিচার বিভাগের সদস্য হিসেবে কমপক্ষে পাঁচ বছর কর্মরত ছিলেন অথবা সরকারের আইনি খসড়া এবং সরকারের আইন প্রণয়নকাজে নিয়োজিত ব্যক্তি নোটারি পাবলিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য।