নিরাপত্তা হেফাজত কী ও কেন জরুরি
ন্যায়বিচার পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। কিন্তু অনেক সময় অপরাধের বিচার চেয়ে মামলা দায়েরের পর মামলার বাদী নিরাপত্তা হীনতা, ভীতি ও আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করেন। কারণ আসামি পক্ষ বেশির ভাগ সময় সামাজিকভাবে অনেক প্রতাপশালী হয়ে থাকে। এ কারণে আসামিকে প্রাণনাশ এবং গুম হওয়ার আশঙ্কায় রাষ্ট্রীয় আশ্রয়ে থাকতে হয়। যাকে আইনের দৃষ্টিতে নিরাপত্তা হেফাজত বলা হয়। বাংলাদেশে প্রচলিত ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ২০১৩ সালের শিশু আইনে ‘সেফ কাস্টডি’ বা নিরাপত্তা হেফাজতের বিধান উল্লেখ রয়েছে। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
নিরাপত্তা হেফাজত কী?
নিরাপত্তা হেফাজত কোনো কারাগারে নয়, বরং সরকার-প্রত্যায়িত কোনো বিশেষ স্থান কিংবা কোনো বেসরকারি সংস্থা এমনকি কোনো ব্যক্তির হেফাজতও হতে পারে। তবে এটি নির্ধারণ করেন আদালত।
যদি কোনো নারী ও শিশু ফৌজদারি মামলায় যুক্ত থাকে; তখন তারা সামাজিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। যেমন ধর্ষণের শিকার একজন নারী কিংবা নির্যাতনের শিকার একটি শিশু যখন ধর্ষক কিংবা নির্যাতকের বিরুদ্ধে আদালতে ফৌজদারি মামলা করে, তখন ক্ষতিগ্রস্ত সেই নারী কিংবা শিশুটিকে প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে থাকতে হয়।
নিরাপত্তা হেফাজত আইন
বাংলাদেশ নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ২০০০ এবং ২০০৩ সালে সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী; ট্রাইব্যুনাল নারী বা শিশুকে কারাগারের বাইরে সরকারি হেফাজতে অন্যত্র বা সরকার অনুমোদিত কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি নিরাপত্তা হেফাজতে রাখার আদেশ দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ওই নারী বা শিশুর মতামত বিবেচনা করতে হবে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন কোনো অপরাধের বিচার চলাকালে ট্রাইব্যুনাল যদি মনে করেন, কোনো নারী বা শিশুকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা প্রয়োজন; তাহলে ট্রাইব্যুনাল উক্ত নারী বা শিশুকে কারাগারের বাইরে ও সরকার কর্তৃক এই উদ্দেশে নির্ধারিত স্থানে সরকারি কর্তৃপক্ষের হেফাজতে বা ট্রাইব্যুনালের বিবেচনায় যথাযথ অন্য কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিতে পারেন।
২০০৩ সালের আগ পর্যন্ত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখার বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ইচ্ছার কোনো মূল্য দেওয়া হতো না। পরে ২০০৩ সালে আইনটির ২০ ধারায় নতুন উপধারা (৮) যুক্ত করে সংশোধন করা হয়। এ ধারায় বলা হয়- কোনো নারী বা শিশুকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখার আদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল উক্ত নারী বা শিশুর কল্যাণ ও স্বার্থ রক্ষার্থে তার মতামত গ্রহণ ও বিবেচনা করবেন। সুতরাং, এই সংশোধনী আনার পর থেকে নিরাপত্তা হেফাজতে প্রদানের ব্যাপারে আদালত অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ইচ্ছার মূল্যায়ন করবেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির যদি সরকার কর্তৃক প্রত্যায়িত কোনো স্থানে থাকতে রাজি না হয়, তাহলে তার ইচ্ছা অনুসারেই তাকে কোনো এনজিও কিংবা কোনো আত্মীয়র কাছেও সোপর্দ করা যেতে পারে।
শিশুদের জন্য নিরাপত্তা হেফাজত আইন
১৯৭৪ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন আইনকে সংশোধন করে ২০১৩ সালে শিশু আইন তৈরি করা হয়। এ আইনের অষ্টম অধ্যায়ে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র কিংবা প্রত্যায়িত প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে এবং এসব স্থানে শিশু পরিচর্যায় ন্যূনতম মানদণ্ড কী হবে তা বলা আছে।
নয় বছরের কম বয়সী শিশুদের এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে নয়, বরং বিকল্প পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তার মা-বাবার সঙ্গে তার পুনঃএকত্রীকরণের দিকটি গুরুত্ব দিতে হবে। বিভিন্ন বয়সী শিশুর আবাসনের ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানে পৃথক পৃথক ব্যবস্থা রাখতে হবে। শিশুর জিম্মাদারির দায়িত্ব যাকেই দেওয়া হোক না কেন তার ওপর আদালতের নিয়ন্ত্রণই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
করণীয়
অপরাধীরা নিজেদের অপরাধের বিচার বিঘ্নিত করতে মামলার বাদীকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে থাকে। এ অবস্থায় বিচার শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত মামলার বাদীকে নিজের পরিচিত ব্যক্তি অথবা রাষ্ট্রীয় হেফাজতে থাকা ভালো। অন্যথায়, বিচার বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।