আইন মেনে পশু জবাই না করলে যে শাস্তি
আমাদের দেশে সারা বছর পশু জবাই হয়ে থাকে। তবে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে লাখ লাখ পশু জবাই হয় একদিনে। এসব পশু নির্ধারিত স্থানে জবাই করার জন্য সরকার আইন করলেও অনেকে এ আইনের তোয়াক্কা করে না। এতে করে পশুর বর্জ্যের কারণে দুর্গন্ধসহ পরিবেশ বিঘ্নিত হয়ে থাকে। এতে করে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয় নগরবাসী। নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই না করলে আইন অমান্যকারীর কী শাস্তি, তা নিচে তুলে ধরা হলো :
পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইন
জবাইখানার বাইরে পশু জবাই করা যাবে না। জবাইয়ের পরিবেশ হতে হবে মানসম্মত। থাকতে হবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। পশু জবাই কর্মীদের সংক্রামক রোগ থাকা যাবে না। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এ বিষয়গুলো পরিদর্শন করবেন। পশু জবাইখানা ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১১-তে এমন অনেক ভালো কথাই আছে। তবে ঈদুল আজহা, ঈদুল ফিতর বা অন্য কোনো ধর্মীয়, সামাজিক অনুষ্ঠান এবং সরকার কর্তৃক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা ঘোষিত অন্য কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানে জবাইখানার বাইরে পশু জবাই করা যাবে। তবে জবাই ও বর্জ্য ফেলতে হবে সিটি করপোরেশন কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে।
পশু জবাইকারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা
আইন অনুযায়ী, পশু জবাই, মাংস প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মী সংক্রামক অথবা ছোঁয়াচে রোগমুক্ত কি না, তা উপযুক্ত চিকিৎসক কর্তৃক প্রত্যায়িত হতে হবে এবং উপযুক্ত চিকিৎসক কর্তৃক প্রদত্ত সনদপত্র জবাইখানা, মাংস বিক্রয় স্থাপনা, মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানার মালিক, ব্যবস্থাপক বা অন্য কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি সংরক্ষণ করবেন এবং প্রয়োজনে ভেটেরিনারি কর্মকর্তা বা ভেটেরিনারিয়ানকে প্রদর্শন করতে বাধ্য থাকবেন।
যেখানে জবাই করতে হবে
পশু জবাইখানা আইনের ৩ ধারায় লেখা আছে, ‘ঈদ বা কোনো উৎসবে বা পারিবারিক ভোজনের জন্য জবাইখানার বাইরে পশু জবাই করতে হলে পানি বা পানির উৎস, বায়ু বা পরিবেশের অন্য কোনো উপাদান দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না; এবং নির্ধারিত পদ্ধতি অনুযায়ী পশু জবাই ও বর্জ্য অপসারণ করা যায় এমন স্থানে পশু জবাই করতে হবে।’
জবাইখানার সংকট
রাজধানীতে প্রায় দেড় কোটি অধিবাসীর জন্য প্রতিদিন শত শত গরু-ছাগল-মহিষ জবাই হলেও জবাইখানা চালু রয়েছে মাত্র চারটি। হাজারীবাগ ও কাপ্তানবাজার এবং উত্তরে মোহাম্মদপুর ও মিরপুরে একটি করে জবাইখানা আছে। তবে ঈদুল আজহা উপলক্ষে দুই সিটি করপোরেশনে কয়েকশ জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মাংস ব্যবসায়ীরা বলেন, আইন অনুযায়ী বাইরে পশু জবাই নিষিদ্ধ হলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক জবাইখানা নেই বলেই বাজার বা নর্দমার পাশে বহু পশু জবাইয়ের কাজ হচ্ছে।
জবাইয়ের আগে-পরে যা করতে হবে
আধুনিক স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে পশুকে তিন দিন জবাইখানায় রেখে পরে জবাই করার নিয়ম। জবাইয়ের আগে পশুকে পরীক্ষা করা, জবাই করার পর মাংস একটি ঠান্ডা ঘরে সাত-আট ঘণ্টা রাখা, মাংস আবার পরীক্ষার পর উন্নতমানের যানে করে বাজারে নেওয়াসহ বিভিন্ন নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। তবে ডিসিসির জবাইখানাগুলোতে এর কোনো কিছুই মানা হয় না। কাপ্তানবাজার জবাইখানায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার পরিবেশ নোংরা। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশেই পশুর চামড়া ছাড়িয়ে মাংস কাটা হচ্ছে। জবাইখানায় ঢোকার পথেই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ডাস্টবিন।
জবাইখানার পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিসিসি দক্ষিণের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো পরিবেশ ভালো রাখার চেষ্টা করি। আর জবাইখানায় মোটামুটি সুস্থ গরুগুলোই আনা হয়। অসুস্থ গরু কেউ এখানে আনতে চায় না। তবে বাইরে যেসব পশু জবাই হয়, সেগুলোর বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই। আমরা মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালাই এবং জরিমানা করি।’
আইন অমান্য করলে শাস্তি
পশু জবাইখানা আইন, ২০১১-এর ২৪(১) উপধারা অনুযায়ী, ‘যদি কোনো ব্যক্তি এই আইনে প্রণীত বিধির কোনো বিধান লঙ্ঘন করেন বা তদনুযায়ী দায়িত্ব সম্পাদনে অথবা আদেশ অথবা নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হন, তাহা হইলে তিনি অনুরূপ লঙ্ঘন অথবা ব্যর্থতার দায়ে অনূর্ধ্ব ১(এক) বৎসর বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা অন্যূন ৫ (পাঁচ) হাজার এবং অনূর্ধ্ব ২৫,০০০ (পঁচিশ হাজার) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
দ্বিতীয়ত, ‘একই ব্যক্তি যদি পুনরায় এ আইন বা বিধির কোনো বিধান লঙ্ঘন করেন বা তদনুযায়ী দায়িত্ব সম্পাদনে বা আদেশ বা নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হন, তাহা হইলে তিনি অনুরূপ লঙ্ঘন বা ব্যর্থতার দায়ে অনূর্ধ্ব-২ (দুই) বৎসরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অন্যূন ১০ (দশ) হাজার ও অনূর্ধ্ব ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ডনীয় হইবেন।’