এনটিভির আইটি বিভাগের স্বপ্ন আকাশছোঁয়া

Looks like you've blocked notifications!

আমি বর্তমানে এনটিভির তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের নেটওয়ার্ক অ্যান্ড সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পদে আছি। এনটিভি সম্প্রচারের শুরু থেকে কর্মরত। আমার সঙ্গে কাজ করছে দক্ষ-পেশাদার সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং টিম, ওরাই আসলে আইটি বিভাগ ও এনটিভিকে অসামান্য করে রেখেছে। ২০০৩ সালে সম্প্রচার বিভাগের সাবেক প্রধান বিলাল আমানের অধীনে সাবেক সিস্টেম অ্যাডমিন এম এম সায়েম এবং সিস্টেম অ্যাডমিন খন্দকার নাজমুস সাকিবের সঙ্গে কাজে যোগ দিই আমি।

আইটি বিভাগ গোছানোর কাজটা আসলে ধারাবাহিক একটি প্রক্রিয়া, যা দিন, মাস বা বছরে শেষ হওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়। আইটিতে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে গেলেও প্রতিদিন হাঁটার প্রয়োজন পড়ে, আর ‘সময়ের সাথে আগামীর পথে’ চলতে গেলে আমাদের রীতিমতো ছুটতে হয়। তাই পরিবর্তিত প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন কিছু শেখা ও গোছানোর কাজটি আজও চলছে।

এ সময় অডিও-ভিজ্যুয়াল সম্প্রচারযজ্ঞে টিভি চ্যানেলে আইটি বিভাগের ভূমিকা বলার অপেক্ষা রাখে না। দু-দশক আগেও লিনিয়ার টেলিভিশন সম্প্রচারে তথ্যপ্রযুক্তি অনেকটা রান্নায় লবণ দেওয়ার মতো অথবা দিতে ভুলে গেলেও সমস্যা নেই, এমন একটা বিষয় ছিল। কিন্তু এখন এটাই প্রায় মূল খাবারে পরিণত হয়েছে! তাই চ্যানেলে প্রযুক্তিবান্ধব কর্মধারা তৈরি করা, নিত্যনতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে টিভি চ্যানেলকে যান্ত্রিক উৎকর্ষের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, যা সম্প্রচার-প্রক্রিয়ার উন্নতি ও গুণগত মান বজায় রাখতে সহায়তা করবে। সর্বোপরি মস্তিষ্কের একটা বড় অংশ সব সময় চ্যানেলের পর্দার জন্য বরাদ্দ রাখা চাই, যেন তাৎক্ষণিক কারিগরি দুর্যোগ পুনরুদ্ধারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে না হয়, অন্তত আমার অভিজ্ঞতা তাই বলে।

২০০৩ সালে অক্টোপাস নিউজরুম সিস্টেমের জাভা ইন্টারফেসের জন্য যখন আমরা বাংলা ইনপুট লকেল ও ইউনিকোড ফন্ট বানানোর মতো কঠিন একটা বিপদে পড়েছিলাম, ঠিক তখনই উন্মুক্ত সফটওয়্যার অভ্র কিবোর্ড ও বাংলা সাগর ফন্ট আমাদের মুশকিল আসান করেছিল। সেই থেকে অভ্র কিবোর্ড সফটওয়্যারের ডা. মেহেদী হাসান খান ও সাগর ফন্টের অমি আজাদ ভাইদের কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ ও ঋণী হয়ে আছি। এ রকম অনেক ঘটনাই আছে, কিন্তু কারিগরি প্রতিকূলতার গল্প পাঠক নিশ্চয়ই শুনতে পছন্দ করবেন না। টিভির পর্দায় কী দেখানো হবে, সেটা দেখবার অনেক গুণী মানুষ এখানে আছেন, আর সে কারণেই আমরা ও সম্প্রচার বিভাগ একসঙ্গে চেষ্টা করে যাচ্ছি কোনোরকম কারিগরি ত্রুটি যেন পর্দায় এসে না পড়ে।

এরই মধ্যে ২০০৭ ও ২০১৪ সালে দু-দুবার প্রতিষ্ঠানে আগুন লেগেছিল এবং সবাই মিলে অল্প সময়ের মধ্যে আবার এনটিভিকে স্বরূপে হাজির করেছি। তবে আমার ধারণা, ২০০৭ সালের অগ্নিকাণ্ডের পর আমাদের কর্মীদের মনস্তত্ত্বে কিছু একটার উদ্ভব ঘটেছিল, যা পর্দা ও দর্শকের প্রতি দরদ আরো বাড়িয়ে তুলেছিল। তাই ২৪ ঘণ্টা তাজা খবরের চ্যানেলের ভিড়ে এখনো যখন অনেক দর্শক আমাদের রাতের খবরটা দেখে ঘুমাতে যান, আমরা তাঁদের জন্য কাজ করে আনন্দ পাই। আর এমনটা ভাবতে ভাবতে রোজ রাত করে আমরাও বাড়ি ফিরি। এভাবেই এখানে ১৭ বছর কেটে গেল। কখন ছোটরা বড় হলো, বড়রা বুড়ো হয়ে গেল, কেউ হিসাব রাখিনি—পরিবারে ঠিক যেমনটা হয়।

এনটিভির অনেক সাফল্য রয়েছে। এনটিভি দেশের সর্বপ্রথম ডিজিটাল অটোমেশনভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল। ২০০৩ সালের অ্যাভেকো (AVECO) অটোমেশন চলেছিল দীর্ঘদিন অবধি, তারপর ২০১২ সাল থেকে এখনো চলছে সম্পূর্ণ অ্যাপেল ম্যাকভিত্তিক ফর্ক (FORK) প্রোডাকশন ও প্লে-আউট অটোমেশন।

অতিদ্রুত সংবাদ সংগ্রহ, চিত্রগ্রহণ ও পরিবেশনায় আমরা সফলতা পেয়েছি বেশ কিছু ঐতিহাসিক ঘটনায়। দর্শকের নিশ্চয়ই মনে আছে, ২১ আগস্টের সেই নির্মম গ্রেনেড হামলার ফুটেজের কথা কিংবা জেএমবি শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের গ্রেপ্তারের সেই সরাসরি সম্প্রচার?

একবার এক প্রতিনিধি সম্মেলনে খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি তাহের ভাই তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন। সেখানকার আদালতে কোনো এক মামলার শুনানিতে বিজ্ঞ বিচারক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে জানতে চেয়েছিলেন, ওই প্রসঙ্গে এনটিভি কী সংবাদ প্রচার করেছিল! সংবাদ পরিবেশনে নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার আর কী উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে, আমার জানা নেই।

আরেকটা ঘটনা বলি, অনেক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের একজন দর্শক ই-মেইল করে তাঁর অভিমান ও অভিযোগ জানালেন, ওনার দামি প্লাজমা টিভিতে এনটিভির লোগো বার্ন হয়ে স্থায়ীভাবে বসে যাচ্ছিল, কেননা তাঁর পরিবারের সদস্যরা বেশির ভাগ সময় শুধু এনটিভিই দেখেন। অতএব, তিনি আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবেন, যদি এনটিভির লোগো রি-পজিশন অথবা অ্যানিমেটেড না করা হয়।

যা হোক, ওনার স্পর্শকাতর টিভির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া ছাড়া তখন আমাদের হাতে অন্য উপায় ছিল না। কিন্তু তার পরের রিইন্টিগ্রেশনে (Reintegration) আমরা অবশ্য লোগো অ্যানিমেটেড করে সেই পাপমোচন করতে সক্ষম হয়েছিলাম!

এই করোনা মহামারিতে আইটির কাজ ও ভোগান্তি বেড়েছে দুই গুণ। কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি। জানি আমাদের পর্দার জন্য কী করতে হবে, তাই করছি। পাশাপাশি তীব্রভাবে অনুধাবন করতে পারছি অনুষ্ঠান পরিচালক, প্রযোজক ও সংবাদ সহকর্মীদের তথ্যপ্রযুক্তি বিদ্যমান অ্যাপ্লিকেশনে পারদর্শিতা এ মুহূর্তে আমাদের কাজের প্রক্রিয়াকে কতটাই না সহজ ও ত্বরান্বিত করতে পারে! তাই সে লক্ষ্যে কিছু কাজের উদ্যোগ নিয়েছি, যেন আরো ভালো ফল পাওয়া যায়। আমাদের পর্দা ও ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট ওটিটি প্ল্যাটফর্মে শিগগিরই নিয়ে আসার পরিকল্পনায় অনলাইন বিভাগের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। এনটিভি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে, এই আপৎকালীন সময় কাটিয়ে উঠলে দ্রুতই এনটিভিকে নতুন অটোমেশন প্রক্রিয়ায় এইচডি (HD) ও ফোরকে রেডি (4K Ready) সম্প্রচারে নিয়ে আসার কাজ শুরু করতে চাই। এনটিভিকে নিয়ে আইটি বিভাগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আকাশছোঁয়া, বলে শেষ করার নয়!

লেখক :  নেটওয়ার্ক অ্যান্ড সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, এনটিভি