ওয়ার্কিং ফ্রম হোম : কর্মীদের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

Looks like you've blocked notifications!

চলমান করোনা পরিস্থিতিতে কর্মক্ষেত্রে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য ‘ওয়ার্কিং ফ্রম হোম’ বা বাড়িতে অবস্থান করে কাজ করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে এটি একটি ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ পদ্ধতি। বাড়িতে অবস্থান করে কাজ করার পদ্ধতি সেসব প্রতিষ্ঠানই গ্রহণ করেছে, যেগুলো অনলাইনে তাদের অফিশিয়াল কাজগুলো সম্পাদন করে থাকে। যেমন ব্যাংকিং, ফাইন্যান্স, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং প্রকাশনা সংস্থা।

সাধারণত তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারকারী অফিসগুলো অফিসের কম্পিউটারে অরিজিনাল সফটওয়্যার ইনস্টল করে থাকে। কর্মীরা তা বিনামূল্যে ও স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে পারে। অরিজিনাল সফটওয়্যারে কাজের মান ও গতিকে প্রত্যাশিত পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়। বাড়িতে অবস্থান করে কাজ করতে হলে একজন ব্যক্তি বা কর্মীর যথাযথ লজিস্টিক সহায়তা প্রয়োজন। অর্থাৎ অনলাইনে কাজ করার জন্য উন্নতমানের কম্পিউটার, স্মার্টফোন ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেটের প্রয়োজন।

বাড়িতে বসে অনলাইনে নির্ধারিত কাজ করে তা অফিসকে শেয়ার করতে চাইলে উপরোক্ত লজিস্টিক উপকরণগুলো বাড়িতে থাকা প্রয়োজন। কিন্তু তা সম্ভব কি? সবার ক্ষেত্রে সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ, অফিসে ব্যবহৃত অরিজিনাল সফটওয়্যারগুলোর মূল্য ব্যক্তিগতভাবে সবার পক্ষে কেনা সম্ভব হয় না। যেমন বহুল ব্যবহৃত সফটওয়্যার মাইক্রোসফট অফিসের কথাই ধরি। ইনফরমাল মার্কেটে এটির ক্রয়মূল্য পঞ্চাশ টাকার কম বা বেশি। বলা বাহুল্য, এই কম মূল্যের সফটওয়্যারটি পাইরেটেড কপি। ব্যক্তিগত বা কম জরুরি কাজের জন্য এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অফিশিয়াল কাজগুলো খুবই প্রাতিষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক পর্যায়ের। সেজন্য প্রয়োজন অরিজিনাল সফটওয়্যার, এটি কেনা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। কিছু ক্ষেত্রে সফট ফাইলগুলোর গোপনীয়তা রক্ষা করতে হয়। ফাইলগুলো একাধিক সহকর্মীর মধ্যে ইলেক্ট্রনিক উপায়ে শেয়ারও করতে হয়। ফলে এতগুলো জটিল কাজ সাধারণ মানের বা ট্রায়াল ভার্সন সফটওয়্যার দ্বারা করাটা কর্মীদের পেশাদারত্বকে ঝুঁকির সম্মুখীন করে। কাজে ভুলও হতে পারে। সে কারণে কোনো কর্মীর চাকরি চলে যাওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

তা ছাড়া বাড়িতে বসে অনলাইনে কাজ করার কর্মঘণ্টা কি নির্ধারণ করা হয়েছে? কর্মীরা কি আগের মতো আট ঘণ্টা কাজ করছে? বাড়িতে কাজ করার কারণে অতিরিক্ত চাপ ও কর্মঘণ্টা কি আগের চেয়ে বেড়েছে? ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ পদ্ধতিতে কাজ করার প্রসঙ্গে উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উদয় হওয়া খুবই প্রাসঙ্গিক। এ ছাড়া সবাই বাড়িতে অফিসের পরিবেশ তৈরি করার সামর্থ্য রাখে না। প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করার জন্য কর্মীদের পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হয়; নির্দিষ্ট রুম দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যবহার করতে হয়। ফলে পরিবারের বাকি সদস্য সেই রুম ব্যবহার করা থেকে বঞ্চিত হয়। তা ছাড়া অফিসের কাজ বাড়িতে সম্পন্ন করতে গিয়ে গৃহের অনানুষ্ঠানিক পরিবেশ বিঘ্নিত হয়।

দেখা যাচ্ছে, বাড়িতে বসে কাজ করতে গেলে একজন কর্মীকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। পারিবারিক ও মানসিক চাপ নিতে হচ্ছে। চাকরি হারানোর ভয়ও আছে। সুতরাং, করোনা পরিস্থিতিতে উদ্ভূত ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ পদ্ধতিটি কর্মীদের একই সঙ্গে আরামদায়ক ও অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে ফেলেছে। কর্মীদের কাছ থেকে অফিস নিশ্চয়ই সন্তোষজনক সার্ভিস প্রত্যাশা করে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, অফিসগুলো কি তাদের কর্মীদের প্রত্যাশা পূরণে বদ্ধপরিকর? তারা কি তাদের কর্মীদের স্বাস্থ্যের খবর নিচ্ছে? সামনে ঈদুল ফিতর। কর্মীরা কি যথাযথভাবে বেতন ও ঈদ বোনাস পাচ্ছে? প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রযুক্তিগত লজিস্টিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে? 

ধারণা করা যায়, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি খুব দ্রুত ঘটবে না। বহু কর্মীকে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ পদ্ধতিতে দীর্ঘদিন কাজ চালিয়ে যেতে হবে। তাই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের অর্থনৈতিক দিকটি সুবিবেচনায় রাখবে, সে প্রত্যাশা করি। 

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়