কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছে এনটিভি

Looks like you've blocked notifications!

বাংলাদেশে এখন অনেক স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল। ইন্টারন্যাশনাল টেলিভিশন চ্যানেল লি. (এনটিভি) যখন যাত্রা শুরু করে, তখন হাতেগোনা দু-একটি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল ছিল। ২০০৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এনটিভির সম্প্রচার শুরু হয়। সেই যাত্রার শুরু থেকেই যুক্ত আছি নন্দিত এই স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলটির সঙ্গে।

ইকবাল টাওয়ারের অফিসে আমরা প্রথম কাজ শুরু করি। কীভাবে আমরা টিভি চ্যানেলটি সাজাব, কীভাবে আমাদের কার্যক্রম শুরু করব, বিশ্বমানের একটি চ্যানেল কীভাবে দর্শকপ্রিয় হয়ে উঠবে, সে বিষয়গুলো নিয়েই মূলত কাজ শুরু ইকবাল টাওয়ারে। এনটিভির কার্যালয় হিসেবে আমরা কারওয়ান বাজারে বিএসইসি ভবনকে সিলেক্ট করি।

এখানে আসার পর দ্রুত সম্প্রচারের জন্য সবাই মিলে আমরা দিনরাত কাজ করেছি। এমনকি আমাদের সবার বসার জায়গাও ছিল না শুরুতে। মূল উদ্দেশ্য ছিল, কীভাবে সম্প্রচারে যাব।

অবশেষে ২০০৩ সালের ৩ জুলাই আমরা সম্প্রচারে আসি। ‘সময়ের সাথে আগামীর পথে’ স্লোগান নিয়ে দর্শক-চাহিদা পূরণ করে এগিয়ে চলে এনটিভি এবং শুরুতেই এনটিভি সবার প্রশংসা পায়। অবদানের কথা বলতে গেলে, এনটিভির সব পর্যায়ের কর্মকর্তার ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে আমাদের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী, তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও জোরালো ভূমিকা না থাকলে আমরা এত দ্রুত সম্প্রচারে আসতে পারতাম না।

চেয়ারম্যান স্যারের সুন্দর পরিকল্পনা অনুযায়ী, সবার সহযোগিতায় ভালোই চলছিল সব। তবে আমাদের দুঃসময়টা আসে ২০০৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি, বিএসইসি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। সে সময়ের কথা মনে হলে এখনো শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে। সেদিন যে আমরা বেঁচে থাকব, সেটি চিন্তাও করতে পারিনি। আমাদের মধ্যে তিনজন মারা গিয়েছিলেন সেই অগ্নিকাণ্ডে। শতাধিক আহত হয়েছিলেন, অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। তখন আমাদের বসে কাজ করার উপায় ছিল না।

তখন আমরা সুন্দরবন হোটেলে বসে অফিস করেছি। অ্যাকাউন্টসের লোকজন ব্যাংকে বসে কাজ করেছে। ২৬ তারিখ অগ্নিকাণ্ড হওয়ার পরও আমরা ১ তারিখে সবাইকে বেতন দিতে সক্ষম হই। এটা আসলে কল্পনাতীত ব্যাপার ছিল। আর মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে আমরা আবারও সম্প্রচারে আসি, যা নজিরবিহীন।

শুরু থেকেই আমার ডিপার্টমেন্ট থেকে আমি বেতন-বোনাস যেন সময়মতো হয়, সে বিষয়ে সচেষ্ট ছিলাম। ম্যানেজমেন্টের সহযোগিতায় সব সময় তা সময়মতো দিতে পেরেছি। সবার জন্য হেলথ ইন্স্যুরেন্স করেছি। যেন অসুস্থ হলে সবাই চিকিৎসা পায়। শুধু আমাদের কর্মীই নয়, তার গার্ডসদের জন্যও এই ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে প্রভিডেন্ট ফান্ড, যা কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের জন্য আশীর্বাদ।

আমাদের আরেকটি বিশেষ বিষয় হচ্ছে, আমরা সরকারি ট্যাক্স-ভ্যাট কখনো ফাঁকি দিই না। সব সময় ভ্যাট-ট্যাক্স সময়মতো পরিশোধ করি।

আমাদের বড় আরেকটি সাফল্য হচ্ছে, আইএসও সার্টিফিকেট পাওয়া। এই সার্টিফিকেট ম্যানেজমেন্ট, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট, এমপ্লয়িদের সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান থাকলে তবেই দেওয়া হয়। আমরা সব ক্রাইটেরিয়া ফিলআপ করতে পেরেছি বলেই তা পেয়েছি। এটি এনটিভির সম্মান অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে, যা এনটিভি পরিবারের জন্য গর্ব।

আমাদের চ্যানেলের স্লোগান হচ্ছে ‘সময়ের সাথে আগামীর পথে’। এখন অনলাইনের যুগ, সেই হিসেবে আমরা এনটিভি অনলাইন চালু করি ২০১৫ সালে। যাঁরা সময়মতো খবর বা নাটক বা পছন্দের অনুষ্ঠানটি দেখতে পারেননি, তিনি নিজের সময়মতো তা দেখতে পারেন। এমনকি সবার আগে দেশ-বিদেশের সব সংবাদ পেয়ে থাকেন এখান থেকে। শুধু বাংলাদেশে নয়, এটি আমরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পেরেছি। যা আমাদের বড় একটি সাফল্য।

এখন জোর কদমে এগিয়ে যাচ্ছে এনটিভি। টিভি চ্যানেল হচ্ছে একটি টিমওয়ার্ক। এটির কমতি এনটিভিতে কখনো ছিল না। দর্শকের জন্য নিত্যনতুন অনুষ্ঠান উপহার দিতে এনটিভি কখনো কার্পণ্য করেনি। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও আমরা এ বিষয়ে সচেষ্ট ছিলাম। ভালো কিছু করতে আমরা কখনো পিছপা হইনি। সুচিন্তিত মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা সব সময় অর্থ জোগান দিতে চেষ্টা করেছি।

বর্তমানে এনটিভি ও এনটিভি অনলাইন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে এগিয়ে চলেছে। সেই হিসেবে আমাদের ডিপার্টমেন্টের সহযোগিতা সব সময় অব্যাহত থাকবে।

শুরু থেকেই এনটিভির সুখে-দুঃখে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে আছি। দুঃখের স্মৃতির চেয়ে মধুর স্মৃতিই আসলে বেশি। সবার সঙ্গে হাসিখুশিভাবে আমরা কাজ করি। আমাদের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানগুলো ছিল খুবই চমকপ্রদ। তখন এই দিনটি আমরা খুবই উপভোগ করতাম। সবাই মিলে সরাসরি অনুষ্ঠান উপভোগ করা হতো, দিনব্যাপী অফিসে অতিথিদের আপ্যায়ন, জ্ঞানীগুণী শিল্পীদের সমাবেশ, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ সবার আগমনে এনটিভি অফিস সরগরম হয়ে উঠত। বর্তমানে করোনার যে প্রভাব, তার আঁচ আমাদের এনটিভিতেও লেগেছে। হায় রে করোনা, বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানও করতে দিল না! এই করোনার মধ্যে জীবন বাজি রেখে কাজ করতে গিয়ে অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন। কিছুদিন আগে আমাদের প্রিয় সহকর্মী শ্রদ্ধেয় গুরুজন মোস্তফা কামাল সৈয়দ চলে গেছেন। তাঁর স্মৃতি কিছুতেই ভুলবার নয়।

করোনার এই সময়ে বিশ্ব অর্থনীতির মতো আমাদের এনটিভিতেও প্রভাব পড়েছে, যা অস্বীকার করার উপায় নেই। এই করোনা পরিস্থিতিতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাবস্থা বিরাজ করার পরও এনটিভির ম্যানেজমেন্ট নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠানটির সাংবাদিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা মাসের পহেলা তারিখেই দিয়ে আসছে। এর আগে আমরা দুবার আগুনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করেছি। ঠিক সেভাবে আমরা সবাই মিলে করোনার এই সময়টাও পার করব এবং সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ। সবার শুভকামনাই আমাদের দৃঢ়তার চাবি।

লেখক : অর্থ বিভাগ প্রধান, এনটিভি