পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিশ্লেষণ
পাকিস্তানের বর্তমান ইস্যু—রাজনৈতিক অর্থনীতি। ইমরান খান এখন যে সংকটে রয়েছেন, এ রকমই একটি সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। কাজেই এমন পরিস্থিতির ব্যাপারে তিনি অভিজ্ঞ। সম্ভবত, শেষ পর্যন্ত আগামী তিন মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তিনি আবারও জিতে আসবেন, এটা আশা করা যায়। কিন্তু, তিনি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অত্যন্ত দুর্বল একজন প্রধানমন্ত্রী হবেন।
এর কয়েকটি কারণ রয়েছে।
১. যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান-রাশিয়া সম্পর্ক : যখন রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট শুরু হয়ে গেল, তখন তখন প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই ইমরান খান রাশিয়া সফরে গেলেন। যেটা সরাসরি আমেরিকার স্বার্থের বিরুদ্ধে গেল। আমেরিকা এটা পছন্দ করল না। পাকিস্তানের ভেতরে অত্যন্ত শক্তিশালী বাহিনী হলো পাকিস্তান সেনাবাহিনী। সেটি আবার মার্কিন বলয়ের আওতায়। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের সময় ইমরান রাশিয়ায় গেলেন পাকিস্তানের সমর্থন প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের ভেতরে আরেকটি পাওয়ার হোল্ডার রয়েছে, যারা সশস্ত্র বাহিনী। তারা মার্কিন প্রভাবিত। আর, আমেরিকা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে। তখন থেকেই সংকট ঘনীভূত হলো।
২. পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সামরিক বাহিনী বনাম রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার সমীকরণ : এখানে ইতিহাস হলো—পাকিস্তানের ইতিহাসের পুরো সময়ের প্রায় অর্ধেকজুড়ে ক্ষমতায় ছিল সামরিক বাহিনী, আর অর্ধেক সময় ছিল রাজনীতিক দলগুলো। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা, রাজনৈতিক বাহিনী এবং রাজনৈতিক দলগুলো কার্যত শেয়ার করে পরিচালনা করেছে।
যেহেতু এ সংকট ইমরান খানের জন্য নতুন নয়, এটা তাঁর কাছে পরিচিত। কেননা এ সংকটের মধ্যেই তিনি জিতে এসেছেন। এ সংকট কীভাবে ওভারটেক করতে হবে, মোকাবিলা করতে হবে, তা তিনি ভালো জানেন। এবং খুব সম্ভবত এ রকম একটি সংকট মোকাবেলা করে তিনি আবারও ক্ষমতায় আসবেন। কিন্তু, আমেরিকা ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক দুর্বল হয়ে গেছে। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আগের চেয়ে দুর্বল হবেন। কারণ, সাউথ এশিয়াতে মার্কিন নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত শক্তিশালী। রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ অতটা শক্তিশালী নয়।
৩. দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও মার্কিন প্রভাব বাড়ানোর অসংখ্য দৃশ্যমান ও অদৃশ্য ঘটনা চলতে থাকবে : পাকিস্তানের সরকারকে যদি দুর্বল করে দেওয়া যায়, তবে তারা খুব বেশি মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে নড়াচড়া করতে পারবে না। তেমনি সাউথ এশিয়ার অন্য দেশের সরকারকে দুর্বল করে দেওয়া যায়, তাহলে তারাও খুব বেশি মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে নড়াচড়া করতে পারবে না। এবং মার্কিন স্বার্থ যারা রক্ষা করে এ সব প্রতিনিধি, গোষ্ঠী, বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট—সব কিছুর পেছনে এবং সব কিছুর আগে-পরে একটি রাজনৈতিক অর্থনীতি জড়িত। এ রাজনৈতিক অর্থনীতি কী?
সারা পৃথিবীতে রাশিয়ার যে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে, সেটির প্রেক্ষাপটে মার্কিন নেতৃত্ব, বিশেষ করে মার্কিন রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং অর্থনৈতিক নেতৃত্ব দৃঢ়ভাবে দেখানোর পুনরায় সময় এসেছে। নইলে সারা পৃথিবীর মানুষ কেন আমেরিকার নেতৃত্ব মেনে নেবে? আমেরিকা এখন দক্ষিণ এশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন জায়গার যত সংকট তৈরি হবে, সে সংকটগুলোর অর্থনৈতিক সংকটগুলো আমেরিকা প্রোভাইড করবে। এটার মাধ্যমে তারা দেখাবে যে, তারা এখনও সারা বিশ্বের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমাধান দেওয়ার একমাত্র একচ্ছত্র বড় শক্তি।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।