আন্তর্জাতিক
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নতুন জানালা
চার বছর আগে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরে যে ইতিবাচক দিকগুলোর সূচনা ঘটেছিল তারই গতিশীল অগ্রগতি সূচিত হতে যাচ্ছে ৬ জুন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারতের লোকসভা এবং রাজ্যসভায় সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য যে বিল পাস হয়েছে তাতেই রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দেশবাসী আশাবাদী হয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং আমাদের দেশ সফর করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্কের সূত্রপাত। ভারতের অকুণ্ঠ সমর্থন ও যুদ্ধের সময় সহযোগিতার ঋণ এ দেশের মানুষ কখনো ভুলতে পারবে না। এ জন্য মনমোহন সিংয়ের আগমন ঐতিহাসিক সফর হিসেবে গণ্য হয়েছিল। ভারতের মন্ত্রীরাও বলছেন তাঁদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীর আবেগ ও আস্থার সম্পর্ক। সে দেশের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলো মনমোহনের সফরের মধ্য দিয়ে মীমাংসা হয়েছে; আরো হওয়ার অপেক্ষায় আছে। বলা হচ্ছে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে পানি বণ্টন চুক্তি হবে। অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে ভারত- এ ভাষ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। তবে আমরা কেউ ফেলানির মতো হতভাগ্য কিশোরীর লাশ কাঁটাতারে ঝুলে থাকার দৃশ্য দেখতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরে একাধিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। অবকাঠামোগত চুক্তিসহ স্বাক্ষরিত হয়েছে- ১. নবায়নযোগ্য জ্বালানি চুক্তি ২. ফিশারিজ কো-অপারেশন ৩. বাংলাদেশ টেলিভিশন ও ভারতের দূরদর্শন ৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় ৫. সুন্দরবন সংরক্ষণ ও রয়েল বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণ ৬. ভারত ও বাংলাদেশের রেলওয়ে সমঝোতা স্মারক ৭. অনিষ্পন্ন ও অপদখলীয় জমির নিষ্পন্ন, ছিটমহল বিষয়ক সীমানা প্রটোকল স্মারক। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারে ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বিনিয়োগ সুবিধার জন্য ইতিমধ্যে দেশের মধ্য দিয়ে ভুটানের ট্রাক চলাচলের চুক্তি বহাল রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর থেকে। সেপ্টেম্বরে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টার দিল্লি সফরে অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে।
২.
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মাধ্যমে ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি’ স্বাক্ষর ছিল একটি মাইলস্টোন। ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ সেই চুক্তির বিষয় ছিল শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। ১৯৯৭ সালের ১৮ মার্চ সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ১৯৯৬ সালে ১২ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে ৩০ বছর মেয়াদি ‘গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি’স্বাক্ষরিত হয়। ১ জানুয়ারি ১৯৯৭ থেকে চুক্তিটি কার্যকর হয়। উল্লেখ্য, ১৯৬১ থেকে শুরু হয়ে ১৯৭৪ সালে শেষ হয় ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণকাজ। ১৯৭৫ থেকে বাঁধ চালু হয়। ১৯৭৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পাঁচ বছর মেয়াদি ‘গঙ্গার পানি বণ্টন’ চুক্তিস্বাক্ষর হয়েছিল। ১৯৮২ সালে তার মেয়াদও শেষ হয়। গঙ্গার পানি প্রবাহ ইস্যুটি ১৯৯৫ সালে জাতিসংঘে উত্থাপন করা হয়। ফারাক্কায় গঙ্গার পানি বণ্টন সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল দুই দেশের জনগণের পারস্পরিক কল্যাণে। বন্যা ব্যবস্থাপনা, সেচ, নদী অববাহিকার উন্নয়ন ও পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনে এই অঞ্চলের পানি সম্পদের সর্বাধিক ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে এই চুক্তি সম্পন্ন করা হয়। সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত সমাধান খুঁজে বের করার যে প্রচেষ্টা সেই চুক্তিতে প্রকাশিত হয় তা ভবিষ্যতে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলোর মাধ্যমে কোনো পক্ষের স্বার্থ বা অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে না অথচ সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে; দেশ এগিয়ে চলছে।
ফারাক্কায় বাঁধ দেওয়ার ফলে কুষ্টিয়া-যশোরে স্থাপিত দেশের প্রথম ‘গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প’ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির পরও দেশের অর্থনীতি ও পরিবেশের ক্ষতি মোচন হয়নি। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে পদ্মা শুকিয়ে গেছে। গড়াই নদী বিপন্ন হয়েছে। একইভাবে বগুড়া, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ৩৫টি থানা নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প ‘তিস্তা সেচ প্রকল্প’ হুমকির সম্মুখীন হয় ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবায় মহানন্দা নদীতে বাঁধ নির্মাণ করায়। ১৯৮৩ সালের ভারত-বাংলাদেশ তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি অনুসারে ৩৬ ভাগ বাংলাদেশ, ৩৯ ভাগ ভারত ও ২৫ ভাগ সংরক্ষিত হলেও বাংলাদেশের ১৮ লাখ একর জমিতে পানি সেচের ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে। কারণ উজানের দেশ হওয়ায় ভারত আগেই বাঁধ ও সেচ-খালের মাধ্যমে পানি সরিয়ে ফেলায় বাংলাদেশে সেচ প্রকল্প শুষ্ক মৌসুমে অকার্যকর হয়ে পড়ে। আবার বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি প্রবাহ ছেড়ে দেওয়ায় বাংলাদেশে বন্যা ও নদীভাঙনের সৃষ্টি হয়। মঙ্গাকবলিত উত্তরাঞ্চলে দারিদ্র্য দূর করার একমাত্র উপায় তিস্তার পানিপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধান। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪টি অভিন্ন নদী আছে। এর ভেতর ২৩টি পঞ্চগড় দিয়ে প্রবেশ করেছে। এসব নদীতে বছরের পর বছর পানিপ্রবাহ কমেছে। নদী বাঁচাতে পানি দরকার। পানির ভাগাভাগি নয়, দৃষ্টি দিতে হবে অববাহিকাভিত্তিক নদী ব্যবস্থাপনার ওপর। পানি বণ্টন করে সমস্যার সমাধান হবে না। অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনা মানে সমুদ্র পর্যন্ত নদীর গতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা। পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলো নদীর পানি ভাগাভাগি করে না, করে নদীর অববাহিকাভিত্তিক যৌথ ও সমন্বিত ব্যবহার, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ। ফলে নদীর অববাহিকার সব দেশের পক্ষে সমভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব, পরিবেশ ও নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা সম্ভব। বহু বছর ধরে তিস্তার পানি পশ্চিমবঙ্গের সেচ কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তুলনামূলকভাবে ভারত সুবিধা বেশি পাচ্ছে। অথচ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তা চুক্তিতে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। কারণ পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবার পয়েন্টে অবস্থিত পানির ভাগ দিতে চায় না সেখানকার জনগোষ্ঠী। আমরা মনে করি সেখানকার পানি ভাগাভাগি নয় বরং শুকনো মৌসুমে ভারতের উদারতা ও সহমর্মিতা এবং তিস্তার গতিপথে পানি প্রত্যাহারের বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে সামনে আনা দরকার। ইতোমধ্যে দিল্লির সঙ্গে মমতার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।
এসব ক্ষেত্রে সমঝোতার চাবি ভারতের হাতে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকেই পূর্ব বাংলা ও ভারতের মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিশেষত পাকিস্তানি শাসকদের কারণে সেসব সমস্যা দীর্ঘদিন পর্যন্ত বহাল থাকে। মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে এবং বর্তমান সরকারের সময় সেসব সমস্যা দূর হয়েছে। অনেক দিন পর সীমান্ত মানচিত্র তৈরি হয়েছে। বর্তমানে ছিটমহল ও অবৈধ দখলিকৃত জমি মুক্ত করা, তিন বিঘা করিডোরে যাতায়াত সমস্যার সমাধান, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এসব ইস্যুতে দীর্ঘ মেয়াদি বন্ধুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে; আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য যা খুব প্রয়োজন ছিল। আমরা খুশি যে ট্রানজিট, পোর্ট ব্যবহার, সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ, রেল যোগাযোগ (তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি বণ্টন বাদে), সীমান্ত সমস্যা মীমাংসা হওয়ায় ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নের ফলাফল হিসেবে চিহ্নিত। বর্তমানে সামগ্রিক সহযোগিতার প্রসঙ্গটি বারবার সামনে আসছে। সেটির জন্য ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। আবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে দ্বিধা-বিভক্ত হয়েছেন এটিও বিবেচনায় আসছে আমাদের কাছে। কারণ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ও যাতায়াত বেশি। সেখানকার বাঙালিরা বাংলাদেশিদের আপন মনে করে থাকেন। এদিক থেকে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে মমতার দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী অনেক বিষয়ে কেন্দ্রকে প্রভাবান্বিত করে আমাদের স্বার্থ সংরক্ষণও করতে পারেন; এটাও বিবেচনায় আনা দরকার। চিকিৎসার জন্য যে বিপুল রোগী কলকাতায় যায় তাদের ভিসামুক্ত প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি কেন্দ্রের কাছে তুলে ধরার সময় এখনই। অবশ্য সার্কভুক্ত দেশের জন্য ভিসামুক্ত প্রবেশের দাবি অনেক দিনের।
৩.
ট্রানজিটও বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়। কারণ ১৯৭৬ সালে নেপাল-বাংলাদেশ ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতা চুক্তি হওয়াটাই স্বাভাবিক। বিশ্বজুড়ে বহুস্তর বিশিষ্ট যোগাযোগ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অনিবার্য হয়ে উঠেছে। তবে ভারত, নেপাল ও ভুটানকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে যেসব রুট প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলোর বদলে নতুন ১৫টি রুট চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অর্থাৎ এ সংক্রান্ত কোরগ্রুপের ১৭টি রুটের প্রস্তাব বহাল থাকছে না। ১২টি সড়ক ও তিনটি রেল রুট অর্থাৎ এই ১৫টি রুটের সবই চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরকেন্দ্রিক। রেল রুটের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম বা মংলা-রাজশাহীর বিরল-রাধিকাপুর(ভারত), চট্টগ্রাম বা মংলা-রাজশাহীর রোহনপুর-সিঙ্গাবাদ(ভারত) এবং চট্টগ্রাম বা মংলা-দর্শনা-গেদে(ভারত)। দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে ট্রানজিটের রেল, সড়ক ও নৌপথের যোগাযোগকে সবাই গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ একদিকে নেপাল ও ভুটান বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বহির্বিশ্বের সঙ্গে দ্রুত ও সহজে যোগাযোগব্যবস্থা পাবে, অন্যদিকে বাংলাদেশও ভারতের ওপর দিয়ে নেপাল ও ভূটানে সড়ক- রেল যোগাযোগ বাড়াতে সক্ষম হবে। আর সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলো। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ তাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সম্পৃক্ত করবে দ্রুততার সঙ্গে। বাংলাদেশ রাজস্ব পাবে বন্দর ব্যবহারের বিনিময়ে। কিন্তু ট্রানজিট ব্যবহার করে কেবল ভারতীয় পণ্য উত্তর-পূর্ব রাজ্যে কম খরচে সরবরাহ করা শুরু হলে বাংলাদেশি পণ্য তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে এটাও মনে রাখতে হবে। এ জন্য শুল্ক বাধাগুলো দূর করে বাংলাদেশি পণ্য ভারতীয় বাজারে বিক্রির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তা ছাড়া ট্রানজিট অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় নির্বাহের জন্য পূর্ব থেকে ব্যবস্থা থাকা দরকার। নির্ধারিত ফি ধার্য করে ট্রানজিট সুবিধার চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
৪.
আমরা বিশ্বাস করি প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে তা পারস্পরিক আস্থা ও মর্যাদার ভিত্তিতে হওয়া দরকার। তিস্তার পানি বণ্টন, সমুদ্রসীমা, সীমান্ত হত্যাসহ দুই দেশের মধ্যকার সমস্যাগুলোর সম্মানজনক সমাধান হবে বলে আশা করছি। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে ‘গ্যারান্টি ক্লজ’(বাধ্যবাধকতামূলক শর্ত) রাখার দাবি জানিয়েছে কেউ কেউ। তবে দুই দেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হলে যে কোনো চুক্তি ফলপ্রসূ হবে। কেউ কেউ বলছে চুক্তি করে বাংলাদেশ কখনো লাভবান হয়নি। পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে ফারাক্কা ইস্যুতে ভারতের উদারতার অভাব রয়েছে। সেই বাঁধের প্রভাবে বাংলাদেশের ২০টি নদী আজ মৃত। পানিকে ঘিরে টানাপড়েনের অবসান চায় সবাই। আমরা মনে করি ‘ভারত প্রতিবেশীকে ছাড় দেয় না’- এটা এই মহাজোট সরকারের আমলে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিক চুক্তি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। দুই পক্ষ লাভবান হবে বিভিন্ন চুক্তিতে। শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় দুই দেশের অনেক দিনের সমস্যাগুলো সমাধান হয়েছে এবং আরো হতে যাচ্ছে। সীমান্ত সংকট মীমাংসা হয়েছে। ভারত সীমান্তজুড়ে বাংলাদেশের ২৮ জেলার মানুষ বাস করে। বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে চার হাজার কিলোমিটারের সীমানা। আড়াই হাজার কিলোমিটার কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। তবু অবৈধ অনুপ্রবেশ ও চোরাচালানি আছে। এ জন্য সীমান্ত নিরাপত্তা করতে চুক্তি হয়েছে; গুলি চালানো বন্ধ হয়েছে। সীমান্তের নিরীহ মানুষ হত্যা বন্ধ হবে এবং পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তি ঘটবে বাংলাদেশ-ভারতের সুসম্পর্কের প্রধান প্রত্যাশা এটাই।
ড. মিল্টন বিশ্বাস : সহযোগী অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়