ইচ্ছেমতো ভালো থাকি পবিত্রতায়

Looks like you've blocked notifications!

বয়স বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বুদ্ধি বিবেচনা। জীবন মৃত্যুর ভাবনা। কোথা থেকে এলাম? কোথায় যাব। কেন এলাম? কী করা উচিত ছিল। কী করতে এলাম। আর কী বা করলাম? প্রশ্নের শেষ নেই। উত্তর সহজ নয়। তাই বলে ভাবনা থেমে থাকে না। নিজের মতো করে ভাবি। আমি ধর্মবোদ্ধা না, জ্ঞানী মানুষও না। তবুও আমার মতো করে ভাবনার অধিকার আমার আছে। সে ভাবনা শিশু সুলভ হতে পারে। তা নাও মিলতে পারে আপনার সঙ্গে। তবু ভাববার অধিকার আমার আছে। আমার বোকা ভাবনা আপনার কাছে হাসির খোরাকও হতে পারে। তবু ভরসা কি জানেন, আমি জানি এই পৃথিবীতে একই সঙ্গে একই রকম ভাবনার একাধিক মানুষ থাকে। আচ্ছা আমি কি আপনার মতো ভাবি? দেখুন না মেলে কি না আপনার আমার ভাবনা?

আমার ভাবতে ভালো লাগে স্বয়ং আল্লাহ আমাকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য।  বিশ্বাস করতে ভালো লাগে আমার বুকের মধ্যে যে আল্লাহ বসে আছেন সেই তিনি আপনার বুকের মধ্যেও । যাকে আমি ডাকি আল্লাহ। আপনি ভগবান। যিশু কিংবা বুদ্ধ। নাম যাই হোক একজনকেই ডাকি একই অনুভূতিতে।

জন্মগত কারণে ভিন্ন পরিবেশে একজনকেই ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকতে শিখেছি আমি আপনি। এ ছাড়া তেমন কোনো পার্থক্য নেই। জানেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বিশ্বাসও বাড়ছে আমার তিনি সব কিছু ঠিক করে রেখেছেন। আমি যে আজ মতিঝিল থেকে মগবাজার আসবো তা তিনি নির্ধারণ করে রেখেছেন। এই আসবার পথে কি কি করব সেইটুকু শুধু আমার হাতে ছেড়েছেন। বুঝলেন না তো? আচ্ছা বুঝিয়ে বলছি, এই চলতি পথে অসহায় কাওকে দেখে আমি সাহায্যের হাত বাড়াব না কি চোখ বুজে চলে আসব সেই টুকু আমার ওপর ছেড়েছেন তিনি। আমি ইচ্ছে করলে সাহায্যের হাত বাড়াতে পারি। ইচ্ছে করলে এড়িয়ে চলেও আসতে পারি। কোনটা করব সেটা বেছে নেওয়ার বিবেচনাটুকু তিনি দিয়েছেন আমায়। মূলত মানবিক এই বোধটুকু দিয়ে তিনি ছেড়েছেন আমায়। এখন  আমি যা চাইবো তা তিনি করে দেন। মানবিক হলেও করে দেন। অমানবিক হলেও। শুধু হিসাবটা টুকে রাখেন। প্রাপ্য পুরস্কার দিতে।

আমি এমনো বিশ্বাস করি এই যে, অসহায় মানুষকে আমার এক চিলতে সহানভূতিতে এগিয়ে দিলাম তা রিজার্ভ ব্যাংকে জমা হয় সঞ্চয় নামে। অন্য একদিন যখন  আমি কোন মানবিক সাহায্যের অপেক্ষায় থাকব সেইদিন অন্য কেউ একজন আমার এই সঞ্চয় পৌঁছে দেবে আমার কাছে তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে।কোনো কিছুই বৃথা যায় না এ জগতে। আরো সহজ করে যদি বলি তো ব্যাপারটা এমন, ধরুন আপনি আপনার আত্মীয়কে নিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন পথে সি এনজি পাচ্ছেন না। ইমারজেন্সি অথচ কেউ যাচ্ছে না। দেখবেন হঠাৎ চলতি পথের একজন তার সিএনজি গাড়ি খানি ছেড়ে আপনাকে তুলে দিবে। কেন দেবে জানেন? কারণ এটা আপনার সঞ্চয়।  আপনার বুকের মধ্যে বসে থাকা সুপার পাওয়ার আপনার এই সঞ্চয় টুকু এন্ট্রি করে রেখেছিলেন যখন অন্য আর একজনের বিপদে আপনি এগিয়েছিলেন। 

মহান আল্লাহ কী বলেছেন জানেন, তোমরা চেয়ে নাও আমার কাছে। আচ্ছা আপনিই বলুন তো পাশের মুদি দোকানে আপনি যে প্রায়ই বাকিতে বাজার করেন সেই দোকানে যদি একদিন একই সময় আমি আর আপনি ঢুকি দু রকম উদ্দেশ্যে ঢুকি তবে কী হবে?  ধরুন আপনি বাজার করবেন বাকিতে আর আমি নগদ টাকায়। এটা কি খুব স্বাভাবিক নয় যে,  দোকানি আমাকে আগে বিদায় করে আপনাকে পরে বাজার দেবে। কারণ আমি নগদ কাস্টমার। আপনি দেনাগ্রস্ত।

ব্যাপারটা কিন্তু ওরকমই। আপনি মহান আল্লাহর কাছে বাকিতেও চাইতে পারেন। তিনি সবাইকে ভালোবাসেন। বলছিলাম কি সারাক্ষণ বাকিতে না চেয়ে  মহান আল্লাহকে কিছু দিয়ে কিছু চেয়ে নিই। ব্যাপারটা এমন,  চলুন আমার আপনার পাশের বাড়ির কিংবা রাস্তার পাশের গলিতে পরে থাকা গরিব অসহায় একটি পরিবারের পাশে আজ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। কিংবা পেটে ব্যথায় কাতর রহিমুদ্দিনের হাত ধরে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে আসি। প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে দিয়ে ঘরে ফিরে আল্লাহর কাছে চেয়ে নিই এভাবে,  আল্লাহ তোমার এক বান্দার পাশে দাঁড়িয়েছি তুমি আমার পাশে দাঁড়াও। আমার একটি বিপদ মুক্ত করে দাও।

আমার ভাবতে ভালো লাগে আমার বুকের মধ্যে যে আল্লাহ বসে আছেন সেই তো আপনার বুকেও। সেই তিনি রহিমুদ্দিনের বুকেও ছিলেন। আর তাই ভালো কাজের সঞ্চয় প্রয়োজন মতোই ফিরিয়ে দেন আল্লাহ। কারণ তিনি ওয়াদা বদ্ধ। চাও আমার কাছে। আমি দিব তোমাকে। চলুন না নিজেদের ইচ্ছে মতো চেয়ে নিই। ভালো থাকি। পবিত্রতায়। শুভ্রতায়।শান্তিতে।

 

লেখক : তরুণ উদ্যোক্তা, লাকী আইডিয়াবিডি ডটকম।