বিশাল বাজেটের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সম্ভাবনা
দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল থাকলেও অনেক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি অর্থনীতিতেও রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ সামনে রেখেই অর্থমন্ত্রী দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার এক বিশাল বাজেট পেশ করেন। এ বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ শতভাগ বাড়ানোর পাশাপাশি জ্বালানি ও পরিবহন খাতে সর্বাধিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ আট হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর এবং এনবিআরবহির্ভূত করের লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা এবং পাঁচ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। কর ছাড়া আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২৬ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি পুরোপুরি অর্জিত হবে বলে মনে হচ্ছে না।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির পাঁচ ভাগের সমান আর মাঝে দেশীয় উৎস থেকে আসবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং বাকিটা বৈদেশিক উৎস থেকে। কিন্তু বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ সংগ্রহের কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায় কোনো কারণে ঋণ সংগ্রহ করতে না পারলে ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভর করতে হবে, যা বেসরকারি বিনিয়োগ এবং দামের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
পোশাক খাতে করের বোঝা বাড়িয়ে দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে তিন গুণের বেশি বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে যেখানে আগে ১০০ টাকার পোশাক রফতানির জন্য ৩০ পয়সা কর দিতে হতো, সেখানে দিতে হবে এক টাকা। যার জন্য উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গিয়ে শিশু শিল্পগুলো ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রথমবারের মতো শিশুদের কল্যাণ এবং অধিকার সুরক্ষায় ৫০ কোটি টাকার শিশু বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এ বাজেটের অন্তর্ভুক্ত হবে।
বিশাল আকারের বাজেট পেশ করা হলেও বিগত বছরের মতোই তা বাস্তবায়নের কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। ফলে বিশাল বাজেটের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধান কতটুকু কমে, এটাই এখন প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়।
আলফারুন্নাহার রুমা, সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
ত্রিশাল, ময়মনসিংহ