বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাবে

Looks like you've blocked notifications!

পানি একটি অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ। তবে অবহেলা করে এর অপব্যবহার করলে এ গুরুত্বপূর্ণ পানি সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়, যা সহজে পূরণযোগ্য নয়। পানির মৌলিক উৎসগুলোর মধ্যে বৃষ্টির পানি অন্যতম। অপরদিকে র্ভূগর্ভস্থ পানি হলো একটি গৌণ উৎস মাত্র। কিন্তু আমরা যেন গৌণ উৎসের পানি ইদানীং এতবেশি ব্যবহার শুরু করে দিয়েছি যে, সেটাকে এখন ব্যবহার না বলে অপব্যহার বলাই শ্রেয়। কাজেই ২০১০ সালের পর থেকে ভূগর্ভস্থ পানির পরিবর্তে বিকল্প পানির উৎস হিসেবে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। একে কেন্দ্র করে চলছে আলোচনা ও সমালোচনা। চলছে গবেষণাও।

এ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবনপূর্বক গত ৯ মার্চ রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজন করা হয় এক আন্তর্জাতিক সেমিনারের। এতে দেশি-বিদেশি অনেক বিজ্ঞানী ও পানি বিশেষজ্ঞগণ উপস্থিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ‘রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং কনভেনশন’ নামের উক্ত সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করেন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেনিং নেটওয়ার্ক (আইটিএন-বুয়েট), সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (সিইসি) এবং রেইন ফোরামের সহযোগিতায় ওয়াটার এইড বাংলাদেশ।

সেমিনারের আলোচনায় কিছু ভয়াবহ বিষয় উঠে এসেছে। সেখানে এক সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, বর্তমানে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে প্রতিবছর পানির স্তর কমপক্ষে তিন পর্যন্ত নিচে নেমে যাচ্ছে। ঢাকা শহরে ভূগর্ভে ১০০ মিটারের মধ্যে কোন পানির স্তর পাওয়া যায় না। তা ছাড়া শহরের প্রয়োজনীয় অনেক পানি প্রায় আশপাশে পাওয়া যায় না বলে ৩৩ কিলোমিটার দূর থেকে আনতে হয়। অপরদিকে সারা দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪৫টি জেলাতেই নাকি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে গেছে। এর মূল কারণ হলো সেচের পানির জন্য নিয়ম না মেনে যত্রতত্র ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন।

আমাদের স্মরণ থাকার কথা, বিগত কয়েক বছর আগে রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রাণকেন্দ্রখ্যাত সোনারগাঁও হোটেলের পাশে একটি দালানের পাইলিংয়ের সময় ভূমিধস হয়ে মারাত্মক ভবন ধসের কবলে পড়েছিল। সেটার কারণও ছিল ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন। কাজেই যদি প্রধান ও মুখ্য উৎস হিসেবে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া যায় তবে মারাত্মক ক্ষতিকর ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন অনেকাংশে কমে গিয়ে তার ওপর চাপ কমে যাবে।

এখন প্রশ্ন হলো, এটি কীভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব? এর আগে বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবিলার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব স্থানের সব নির্মিতব্য নতুন বিল্ডিংয়ে সোলার প্যানেল লাগানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। ঠিক তেমনিভাবে যেকোনো স্থানে বিল্ডিং করার সময় তার পানি ব্যবস্থাপনার জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির উৎসের ব্যবস্থার সঙ্গে বিকল্প হিসেবে রেইন ওয়াটার হারভেস্ট করার একটি ব্যবস্থা বাধ্যতামূলকভাবে রাখতে হবে। কিন্তু সোলার প্যানেল লাগানোর বিষয়টি প্রভিশন থাকলেও সেটা বাধ্য করার জন্য কোনো মনিটরিং না থাকায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এ ক্ষেত্রেও এমনটি হলে আমরা নিজের পায়েই নিজে কুড়াল মারলাম বলে গণ্য করতে হবে।

কারণ আস্তে আস্তে যেভাবে আশঙ্কাজনকভাবে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের পানির জন্য হাহাকার ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। অথচ বাংলাদেশের কোনো কোনো পাহাড়ি এলাকাসহ বিশ্বের অনেক দেশ রয়েছে যেখানে বৃষ্টির ধরে রাখা পানিই একমাত্র তাদের সম্বল। উদাহরণস্বরূপ ভারতের পর্যটন নগরী দার্জিলিংয়ের কথা বলা যেতে পারে। সেখানে নিত্যব্যবহার্যসহ সবধরনের পানির একমাত্র উৎস হলো বৃষ্টির পানি। সেটা দিয়েই তো সব কাজ করছে তারা। তাহলে আমরা কেন পারব না।

আর পানির সঙ্গে পরিবেশের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গেও সম্পর্ক। সেজন্য এখন সময় এসেছে পুকুর, নালা, খাল, বিলসহ মুক্ত জলাশয়ে পানি ধরে রাখা এবং সেগুলো দিয়ে সেচের পানি সরবরাহ করা। অপরদিকে গৃহস্থালিসহ অন্য প্রয়োজনীয় পানির জন্য অবশ্যই বৃষ্টির পানির ব্যবহার বৃদ্ধি করা। কারণ ভূ-গর্ভস্থ পানিকে ইদানীং আর্সেনিক বিষ ছাড়াও আরো অনেক ক্ষতিকর রাসায়নিক মিলে জনজীবনে ক্ষতি বয়ে আনছে। তার একটিই সমাধান, আর তা হলো রেইন ওয়াটার হারভেস্ট ও ব্যবহার। 

লেখক : ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়