অভিমত

আন্দোলন যখন ফেসবুকে

Looks like you've blocked notifications!

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন দেশ-বিদেশে যে অনেক শক্তিশালী তা বলার অপেক্ষা রাখে না।এটি সাধারণ মানুষের দাবি প্রকাশের বড় একটি মাধ্যমে রূপ নিয়েছে বর্তমান সময়ে। দিন দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের শক্তি বাড়ছে। বিশেষ করে ফেসবুক আমাদের দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক ভূমিকা রাখছে।

স্মার্টফোন বা ইন্টারনেটের এই যুগে মানুষ বেশির ভাগ সময় তথ্যপ্রযুক্তি নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকছে। তা যেকোনো কারণে হউক। এই সেক্টরে মানুষ প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছেন। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কারণে আগামীতে এর জনপ্রিয়তা  আরো বাড়বে সন্দেহ নেই। তাই বলা হয়, তথ্য-প্রযুক্তিতে যারা এখন বেশি পারদর্শী সেই সমাজ-রাষ্ট্রে নিজের বেশি জায়গা তৈরি করতে পারছে। নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারছে।

বর্তমান সময়ে সভ্যতা অনেক দূর এগিয়েছে। হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে মেক্সিকান সভ্যতায় মানুষের হৃদপিণ্ড বের করে খেলাধুলা করে অন্যরা আনন্দ নিতেন। আজ পৃথিবী সেই অবস্থা থেকে অনেক সভ্য হয়েছে। এখনকার সভ্য মানুষ মাঠে নেমে নিজের দাবির কথা তুলে ধরবেন সেটাতেও তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে না। তারা এটাতে বিরক্ত হচ্ছে অনেকাংশেই। তাই মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে নিজেদের চাওয়া-পাওয়া বা দাবি আদায়ের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে।

বিশেষ করে ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ, গ্রুপ বা নিজস্ব ওয়ালে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছে। তাদের দাবির বিষয়ে মুখ খুলছে।

দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে সব আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এখনো তাই হচ্ছে। তবে ৪৬ বছর আগের চিত্র এখনকার থেকে কিছুটা ভিন্ন ছিল। বর্তমান সময়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বড় একটা অংশ ক্ষমতাবানদের সঙ্গে থাকছে। সেটা যে দলেরই হোক না কেন। এই শ্রেণিটি আর তেমন আন্দোলন-সংগ্রামে আসছে না। আর যে অংশটা ক্ষমতার বাইরে আছে তারা মাঠে নেমে আন্দোলন করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেই তারা আন্দোলনের জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছে।

গত সাত-আট বছরে দেশের আন্দোলন-সংগ্রাম দেখলে বোঝা যায়, যারা মাঠে নামছে তাদের বড় একটা অংশ নিম্নবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে হাতেগোনা কয়েকজন মধ্যবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির সদস্য। এই শ্রেণির আন্দোলনও দিনে দিনে কমে আসছে নানা কারণে।

তাই আন্দোলন বা দাবি আদায়ের মাধ্যম হিসেবে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ফেসবুকসহ নানা  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগাচ্ছে।এই মাধ্যমে মতামত তুলে ধরে অনেককে আবার বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। যারা বেকাদায় পড়েছে তারা মাঠে গিয়ে কিছু করেনি। ফেসবুকে তাদের কথা তুলে ধরেছিল মাত্র।   

তাই বোঝা যাচ্ছে, দিন দিন এই মাধ্যমের প্রভাব অনেকের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যারা অন্যদের দমিয়ে রাখতে চায় তাদের কাছে এই মাধ্যম এক ভয়ঙ্কর বোমা হয়ে আবির্ভাব হচ্ছে মাঝে মাঝে। তাই বিভিন্নভাবে এই মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের দেশে এই প্রচেষ্টা অনেক আগেই শুরু হয়েছে।

দেশের সরকারও যে ফেসবুককে খুব গুরুত্ব দিচ্ছে তার সর্বশেষ প্রমাণ গতকাল সোমবারের ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ও ইন্টারপোলের সদস্যদের সঙ্গে এক সঙ্গে বৈঠক করা থেকে। এই বৈঠকে ‘ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বা অন্য কোনো পরিচয়পত্রের তথ্য সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক করতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে পুলিশ।’ সাইবার অপরাধ কমাতেই এই প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। যদিও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সেটা মেনে নেয়নি।

এর আগে ফেসবুক নিয়ন্ত্রণ করতে ওই প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে ক্ষমতাসীনদের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন। তাদের কাছে এখন ফেসবুক যে অনেক গুরুত্বপুর্ন হয়ে উঠেছে তা এসব উদ্যোগ থেকেই বোঝা যায়। এখন দেখার বিষয়, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কী সিদ্ধান্ত নেয়।

তবে এই মাধ্যমের শক্তি যে মানুষের মাঠে নামার ইচ্ছে শেষ করে দিচ্ছে তা ভালোভাবেই প্রমাণিত হচ্ছে। তবে নিজের মত তুলে না ধরে চুপ থাকাটা এক ধরনের স্বার্থপরতা বলেই মনে করি। তাই যেখানেই হোক দেশের জন্য, সমাজের জন্য বা সামগ্রিক মঙ্গল কামনায় নিজেদের মত তুলে ধরতেই হবে। হোক না সেটা ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।  

লেখক : সাংবাদিক