বাংলাদেশের ক্রিকেট, তরুণ বন্দনা

Looks like you've blocked notifications!

ক্রিকেট বাংলাদেশ এখন জোরেশোরে উচ্চারিত হওয়া এক নাম, এ ধারা অবশ্য বেশ আগেই শুরু হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন ছন্দে, নতুন লয়ে বাংলাদেশের তরুণরা নিজেদের শৌর্য-বীর্যের কথা জানান দিয়েছেন। বাংলাদেশের কলুষিত রাজনীতি ও রাজপথের ধারাবাহিক সংঘাত, সীমিত গণতন্ত্র, ছোট অর্থনীতি, সময়ঘাতী যানজট, বড়সড় দুর্নীতির খবর, সন্ত্রাস এবং লুটপাট সত্ত্বেও যদি জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশ সম্পর্কে কোন খবরটি ইতিবাচক দেশে কিংবা বিদেশে? ঘুরেফিরে উত্তর আসবে বাংলাদেশের আছে সুন্দরবন, কক্সবাজার, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং ক্রিকেট।

ক্রিকেটকে এ জন্যই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইতিবাচক বিজ্ঞাপন বলা হয়ে থাকে। কমবেশি যাঁদের বিদেশে যাতায়াতের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁরা খুব ভালো বলতে পারবেন যে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশিদের ধারণা কিংবা জ্ঞান কতটুকু। একবার বিদেশে অবস্থানকালে এক বিদেশি বন্ধুর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, বাংলাদেশ সম্পর্কে তুমি কী জান? সে সহাস্যে জবাব দিয়েছিল, মিরপুরের ক্রিকেট মাঠ, আশপাশে উঁচুউঁচু দালানকোঠা এবং সাকিব-মুশফিক- এসব।

নানা হতাশা এবং সংঘাতের খবরও প্রায়ই বাংলাদেশকে ঘিরে বিশ্বজুড়ে ফলাও হয়, অথচ ক্রিকেট যে বার্তা বহন করে তা আনন্দের, উচ্ছ্বাসের এবং পুরোটাই ইতিবাচক। পৃথিবী এখন বাংলাদেশকে ভিন্ন মেজাজে, ভিন্ন বোধে চিনে থাকে, মানুষ এখন জানে যে, বাংলাদেশের জনসাধারণের আকাঙ্ক্ষা এবং সৃষ্টিশীল ক্ষমতাও আকাশছোঁয়া এবং যে সংঘাত আর বহুমুখী দারিদ্র্যের কথা দীর্ঘকাল ধরে প্রচার হচ্ছে, প্রকৃত কথা হলো এর বাইরেও আরো খবর রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটাররা ভারতের বিপরীতে পরপর দুটি ওয়ানডে ম্যাচে যে অভাবনীয় জয় পেয়েছেন তা নিঃসন্দেহে নিরঙ্কুশ প্রশংসার দাবি রাখে, নতুন এই প্রজন্মই দেখিয়ে দিয়েছে কোনো অসাধ্যই তাদের জন্য অসাধ্য নয়, তাঁরা প্রকৃতির মতো চঞ্চল এবং দুর্দমনীয়। ভারতীয় ক্রিকেট টিম যখন বাংলাদেশে এলো তখন আমাদের গণমাধ্যমই সেসব খবরগুলোকে দারুণ রং চড়িয়ে, ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার এবং প্রকাশ করতে থাকল, তারা যেন বলতে চাইল যে, বাংলাদেশ দলের সামনে ভয়ানক বিপদই আছে। অথচ মুহূর্তেই সেসব হাঁকডাক ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে এ দেশের তরুণরা প্রমাণ করলেন তাঁরা বরাবরই দুর্জয়।

প্রতিদিন তরুণরা দেশের আনাচকানাচ থেকে উঠে আসছেন, লড়ছেন দেশের পক্ষে এবং ছিনিয়ে আনছেন সুনাম ও যশ। এগুলোই আমাদের বড় অর্জন, আমাদের সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর ভেতরে বড় ঘটনা। আমরা যখনই দেশের নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় হতাশ থাকি, তখনই আমাদের তরুণরা কোনো না কোনো ভালো খবর নিয়ে হাজির হয়, আমরা ভরসা পাই, আশা দেখি। যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল মাঠে নামে তখন টেলিভিশনের সামনে বসে থাকা হাজারো তরুণকে সংহতি জানাতে দেখি, যখন ক্রিকেটার দল ভালো কিছু করে দেখায় তখন টেলিভিশন সেটের সামনে বসা তরুণদের দেখি তারা সমস্বরে বাংলাদেশ-বাংলাদেশ বলে সর্বশক্তি নিয়ে মেতে উঠছে।

ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রশংসার পাশাপাশি মুস্তাফিজের পারফরমেন্সে অভিভূত ও বিস্মিত। এ ছাড়া দল হিসেবে অর্জন কম নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এখন র‌্যাংকিংয়ে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। একই সঙ্গে ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিতব্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণের যোগ্যতাও অর্জন করেছে। এই তরুণরা শুধু বাংলাদেশপন্থী, এঁদের একটিই ঠিকানা, সেটি বাংলাদেশ। এই দেশকে কেউ কোনোদিন হারাতে পারবে না, এই তরুণরাও কোনোদিন দিকভ্রান্ত হবেন না। বাংলাদেশের জয় হোক, জয় হোক বাংলাদেশের ক্রিকেট এবং তরুণদের। 

লেখক : অধ্যাপক, গণিত বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়