অভিমত

গণতন্ত্রের জন্য বিএনপির নির্বাচনে আসা জরুরি

Looks like you've blocked notifications!

রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে বাধ্য করার জন্য শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন। যে দলটি জনগণের আশার কথা বলবে। জনগণ তার সুযোগ-সুবিধাগুলো সঠিকভাবে পাচ্ছে কি না তা দেখভাল করবে। না পেলে প্রয়োজনে রাজপথে আন্দোলনে নামবে। সর্বোপরি জনগণের অধিকারের কথা বলার জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী বিরোধীদল।

কিন্তু আমাদের দেশে কি বর্তমানে সেই প্রধান বিরোধী দলকে চর্ম চোখে আদৌ দেখা যায় ?  শুধু বক্তৃতা বিবৃতিতে টের পাওয়া যায় বিরোধী দলের উপস্থিতি। যারা শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মাঝেমধ্যে সরকার এই করছে , ওই করছে বলে বেড়ায়। এর বাইরে জনগণের দুর্ভোগ নিয়ে রাজপথে আন্দোলন বা সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা যায় না।

আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় দফা ক্ষমতায় আসার পর দেশ একটি পুতুল বিরোধী দল পেল। বিরোধীদলীয় নেত্রী হলেন জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ। ‘যেমনি নাচায় তেমনি নাচে পুতুলের কি দোষ ?’--সেই প্রবাদ বাক্যটি সত্য হয়ে সামনে এলো। সুতরাং জনগণের আশা ভরসা সব ভেস্তে গেল। তাদের সুযোগ সুবিধা আদায়ে কথা বলার মতো সংসদে কেউ থাকল না।  সরকার যেভাবে চালাবে দেশ সেভাবে চলবে। এখনো সেভাবেই চলছে। বিদ্যুৎ-গ্যাস-চাল-তেল-মাংস-তেল-চিনি ও লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে হু হু করে। জনগণ সব সয়ে যাচ্ছে।

আসি বিএনপির অবস্থা এখন কেমন?

বিএনপির অবস্থাটা এমন যে,  নির্বাচনে যেতেও মন চাইছে আবার শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলে কেমন দেখায় ?  সেটাও ভাবছে। এভাবে শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থার মধ্যে হঠাৎ করে বিএনপি তার ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করে বসল। এসব কিসের ইঙ্গিত বহন করে?  ভিশন ২০৩০ ঘোষণাকে নির্বাচনী ইশতেহার বললেও বোধকরি ভুল বলা হবে না। কারণ যেসব ঘোষণা খালেদা জিয়া দিয়েছেন তা অনেকাংশে নির্বাচনী ইশতেহারের মতোই।

আসলেই মনে হচ্ছে ,  বিএনপি এবার নির্বাচনমুখী। দলের অনেক নেতাকর্মীর ইচ্ছে ২০১৪ সালের মতো আর ভুল করতে রাজি না তারা। সে জন্য ভেতরে ভেতরে দল গোছানোর তাগিদ অনুভব করছে। সারা দেশে নীরবে হিসাব করা শুরু করেছে তারা। গত ২০০১ ও ২০০৮ সালে প্রত্যেক জেলায় কারা কারা নির্বাচন করেছিলেন। তাদের বর্তমান অবস্থা কার কেমন। এলাকার সাথে যোগাযোগ কতটুকু, সব মিলিয়ে নির্বাচনের দিকে যেতে চাচ্ছে তারা। দলের ভেতরে যারা সংস্কারপন্থী ছিল তাদের ডেকে ডেকে আলাদাভাবে কথা বলেছেন নেত্রী।

অনেক নেতা মনে করেন ২০১৫ সালের টানা আন্দোলনে তাদের ক্ষতিই হয়েছে বেশি। দেশ-বিদেশে তাদের ভাবমূর্তিও নষ্ট হয়েছে। অনেক নেতাকর্মী মারা গেছে। মামলা মাথায় নিয়ে অনেকে এখনো ঘরছাড়া। সুতরাং বিএনপি নির্বাচন করবে এটা নিশ্চিত প্রায়। অন্তত ভিশন ২০৩০ ঘোষণা তারই ইঙ্গিত বহন করে।

এই নির্বাচনমুখী হওয়ার জন্য দলের ভেতর কোন্দল দূর করা সবার আগে প্রয়োজন। কারণ গত ৬ মে সারা দেশে কর্মিসভায় যেসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে তাতে মনে হয়েছে কিছু বিশৃঙ্খলা দলের ভেতরে বিরাজ করছে। যেমন বরিশালে কর্মিসভা চলাকালে চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। টাঙ্গাইলেও একই ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়টা খুব স্বাভাবিক, এত দিন ক্ষমতার বাইরে থেকে অনেকেই হামলা মামলা সহ্য করেছে। বর্তমানে দল গঠনের কথা ভাবছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। জেলা শহরে নেতাকর্মীদের ভেতরে নির্বাচনের সুবাতাস বইছে। আবার ক্ষমতার ঘ্রাণ পাওয়া যাবে সেই আশায় নেতাকর্মীদের অন্তর্কোন্দল চাঙ্গা হতেই পারে। তবে গণতন্ত্রের কথা ভেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের উচিত সব কোন্দল মিটিয়ে ফেলা। কারণ কোন্দল না মিটলে দলের ভেতরে একাধিক গ্রুপ তৈরি হয়ে গেলে ভোটের বাক্সের অবস্থা কী হবে সেটা সবাই জানে। আর ২০১৮ সালের শেষে বা ২০১৯ সালের শুরুতে যে নির্বাচন হবে বলে দেশের মানুষ ভাবছে, সেই নির্বাচনে ইতিবাচক সারা না পেলে বাংলাদেশে বিএনপির অস্তিত্ব থাকবে কি না সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

দেশের সাধারণ জনগণের আশা, যেকোনো মূল্যেই বিএনপি এবার নির্বাচন করুক। আর ক্ষমতাসীন দলের কাছে দাবি একটা সুষ্টু নির্বাচন দিন। জাতির কাছে প্রমাণ করুন আওয়ামী লীগ সত্যিকারের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। কারণ, কেন আপনাদের শুনতে হবে ২০১৪ সালে প্রহসনের নির্বাচন করে আপনারা ক্ষমতায় এসেছেন। সেবার বিএনপি নির্বাচন করেনি, সেটা তাদের ভুল ছিল। আর যেন তারা বিশ্বের কাছে দেশকে অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে না পারে সে জন্য দেশবাসীকে একটা পরিচ্ছন্ন নির্বাচন উপহার দিন। সেই নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে জাতির কাছে প্রমাণ করুন ২০১৪ সালের নির্বাচন প্রহসনের নির্বাচন ছিল না।

আমরা বাংলাদেশকে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি। একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার প্রেরণা জুগিয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা সত্যিকার গণতন্ত্র চর্চ্চা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আর কোনো স্বৈরশাসক এ দেশে আসবে না।

জাতির জনকের সোনার বাংলা হোক গণতন্ত্র চর্চার সূতিকাগার। সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার এমন একটি নির্বাচন, যে নির্বাচনে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোটটা নিজের পছন্দের মানুষকে দিতে পারবে। তার ভোট কোনো সন্ত্রাসী ছিনিয়ে নিতে পারবে না। কিংবা সন্ত্রাসীর ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবে না সাধারণ মানুষ, এমন ভোট যেন না হয় এই বাংলার মাটিতে। এ মাটিতে শুয়ে আছে হাজারও সোনার ছেলে, যারা একাত্তরে প্রাণ দিয়েছে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য। যাদের চেতনায় ছিল ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

সেই মহাকবির অমর বাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে যুদ্ধে ঝঁপিয়ে পড়েছিলেন বীর সন্তানেরা। তাঁদের ত্যাগের কথা স্মরণে রেখে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন বাংলাদেশে। জনগণ বিচার করবে কারা যোগ্য কারা অযোগ্য। দেশটা তো আসলে জনগণেরই।

লেখক : ছড়াকার ও সাংবাদিক।