প্যানেল নয়, সবার আগে প্রয়োজন ডাকসু নির্বাচন

Looks like you've blocked notifications!

দেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালের প্রণীত অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর বা আচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী, ভিসি নিয়োগের জন্য বিদায়ী ভিসির সভাপতিত্বে সিনেট অধিবেশনে তিন সদস্যের প্যানেল নির্বাচন করবেন সিনেট সদস্যরা। প্যানেল থেকে একজনকে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি। যার মেয়াদ হবে চার বছর।

এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ ১৯৭৩-এর ২০(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে পাঁচ সদস্যের ছাত্র প্রতিনিধি থাকবেন। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নির্বাচন ও বাজেট অধিবেশনে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন।

এই অধ্যাদেশ না মেনেই গত ২৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অনুষ্ঠিত হয় সিনেট অধিবেশন। ওই অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি নির্বাচনের জন্য তিনজনের প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন বর্তমান ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বর্তমান কোষাধ্যক্ষ কামাল উদ্দীন ও বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন মো. আব্দুল আজিজ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। তাদের মধ্যে বাঁধে সংঘর্ষ। শিক্ষার্থীদের দাবি, ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া ভিসি প্যানেল ঘোষণা অবৈধ। তারা এই সিদ্ধান্ত মানবেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের মাধ্যমে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি সিনেটে থাকবেন। তারাও ভিসি প্যানেল নির্বাচনে ভোট দিবেন। শিক্ষার্থীদের এই দাবি যৌক্তিক।

এই ঘটনা নিয়ে সারাদেশে চলছে সমালোচনা। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগছে- ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র প্রতিনিধি সিলেক্ট করা, না উপাচার্য প্যানেল ঘোষণা করা, কোনটির প্রয়োজন আগে?  যেখানে অধ্যাদেশে স্পষ্ট করে উল্লেখ রয়েছে, ভিসি প্যানেল নির্বাচনে ছাত্র প্রতিনিধি থাকতে হবে। সেখানে ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া প্যানেল ঘোষণা করা কি সঠিক সিদ্ধান্ত?

বর্তমান উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিকের মেয়াদ শেষের (২৪ অগাস্ট) আগে সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তাহলে অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্যানেল নির্বাচনের আগে ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ সবার আগে নেওয়ার কথা। এই ডাকসু নির্বাচনের পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধিও উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে ভোট দেওয়ার কথা। কিন্তু ১৯৯০ সালের পর থেকে বন্ধ রয়েছে ডাকসু নির্বাচন। অথচ প্রতি বছর এই ডাকসু নির্বাচনের জন্য বাজেটও বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, গত দুই যুগ ধরে ঢাকা বিশ্বদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) অকার্যকর থাকায় ছাত্র প্রতিনিধিদের ভোট ছাড়াই ভিসি নির্বাচিত হচ্ছেন। আর ডাকসু নির্বাচনের জন্য ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছয় লাখ ৮৬ হাজার টাকা, ২০১০-১১ অর্থবছরে সাত লাখ ৬৭ হাজার টাকা এবং এভাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সংশোধিত পাঁচ লাখ ৯০ হাজার টাকা ও ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে ৪২ টাকা করে চাঁদাও আদায় করা হচ্ছে।

সবচেয়ে বড় কথা, রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্ধারণ না করে সিনেটে উপাচার্য প্যানেল মনোনয়নের এই উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য থেকেই। কয়েকজন শিক্ষকসহ ১৫ জন রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট এই সভা আটকাতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে স্থগিতাদেশও পেয়েছিলেন। কিন্তু আপিল বিভাগের আদেশে সভার পথ খুলে যায়। ১০৫ সদস্যের সিনেটের অর্ধেকের মতো সদস্য গত ২৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী ভবনে সভায় বসেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া আরো ৪৫ জন সিনেট সদস্য নেই। সিন্ডিকেট মনোনীত গবেষণা সংস্থার পাঁচজন প্রতিনিধি, অধিভুক্ত কলেজগুলোর পাঁচজন অধ্যক্ষ ও ১০ জন শিক্ষক প্রতিনিধি, ২৫ জন রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি। 

তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী বৈধ পন্থায় ভিসি প্যানেল ঘোষণা করতে হলে অবশ্যই সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে ছাত্র প্রতিনিধি। সুতরাং প্যানেল নয়, সবার আগে প্রয়োজন ডাকসু নির্বাচন।

লেখক : শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, বাংলাদেশ প্রতিদিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।