প্রতিক্রিয়া

মডেলদের আত্মহত্যা ও কিছু কথা

Looks like you've blocked notifications!

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই খবরের কাগজ খুলে র‌্যাম্প মডেল ও অভিনেত্রী রিসিলা বিনতে ওয়াজের আত্মহত্যার খবর দেখতে পেলাম। গতকাল দুপুর ২টার দিকে নিজ ঘরে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। মাত্র তিন দিন আগে স্বামীর সঙ্গে সামান্য বিষয় নিয়ে মনোমালিন্যও হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রিসিলা মাদকাসক্ত ছিলেন এবং হতাশায় ভুগছিলেন। যার কারণে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। মডেল রিসিলা আত্মহত্যার আগে মায়ের বাসা বাড্ডা এলাকায় নিজের চার বছরের মেয়েকে রেখে আসেন। এর পরই সুবাস্তুর ওই বাসায় এসে আত্মহত্যা করেন।

শুধু রিসিলা নন, এই মডেলের আত্মহত্যার কথা ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ে গেল গত ৩ ফেব্রুয়ারির কথা। সেদিন চট্টগ্রাম মহানগরীর আগ্রাবাদ বারিক বিল্ডিংয়ের নিজ বাসায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন মডেল জ্যাকলিন মিথিলা। মিথিলার প্রকৃত নাম জয়া শীল, বয়স ২২ বছর।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে যেটা জানতে পারি, আত্মহত্যার আগে জ্যাকলিন মিথিলা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। মিথিলা বিবাহিত ছিলেন। তাঁর স্বামীর নাম উৎপল রায়। স্বামীর বাড়ি ফটিকছড়ির ধুরং ইউনিয়নে। স্বামীর সঙ্গে তাঁর প্রায়ই ঝগড়া লাগত। এ ছাড়া সুইসাইড নোটে মিথিলা তাঁর স্বামী ও স্বামীর আত্মীয়স্বজনের নিয়মিত অপমানের কথা লিখে গেছেন। এবং এ কারণেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে উল্লেখ করেন। দাম্পত্য কলহ ছাড়াও প্রায় নগ্ন ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করে দুই বছর ধরে ব্যাপক বিতর্কের মুখে পড়েন মিথিলা। একটি চলচ্চিত্রে আইটেম গানেও পারফর্ম করেছিলেন তিনি। কিন্তু কোনোভাবেই আলোচনায় আসতে পারছিলেন না তিনি। বরং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়েন এই উঠতি মডেল। এই নিয়ে বেশ হতাশায়ও ভুগছিলেন তিনি।

খোলামেলা ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে এবং নিজেকে বাংলার সানি লিওনি দাবি করা এ মডেলের ফেসবুক ওয়ালে ঢুকে আত্মহত্যা সম্পর্কিত দুটি স্ট্যাটাস পাওয়া গিয়েছিল। একটি ৩০ জানুয়ারি রাত ১১টা ৪৯ মিনিটে দেওয়া। এতে তিনি লিখেন, 'কালকে আমি আত্মহত্যা করব। কেউ আমাকে প্রত্যাখ্যান করে নাই। আমিও কাউকে প্রত্যাখ্যান করি নাই। কিন্তু আমি আত্মহত্যা করব।' আবার ৩১ জানুয়ারি সকাল ৭টা ২৮ মিনিটে লিখেছিলেন, 'ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে পা বাড়াচ্ছি।'

২৪ মে ২০১৬। মঙ্গলবার ভোর ৫টা। মিরপুরের রূপনগরে বাসার ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন মডেল সাবিরা। এই মডেলও আত্মহত্যার আগে ফেসবুক দুটি স্ট্যাটাস ও ভিডিও বার্তা দেন। সাবিরা বেশ কিছু পণ্যের স্থিরচিত্রে মডেল হয়েছিলেন। মডেলিং ছাড়া উপস্থাপনায়ও তাঁকে দেখা গেছে। আর পুরোপুরি পেশাগত জীবনে তিনি গানবাংলা টিভিতে কর্মরত ছিলেন।

সাবিরার ফেসবুক স্ট্যাটাসে সর্বশেষ লিখেছিলেন তাঁর আত্মহত্যার বিষয়টি নিয়ে। সঙ্গে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সেখানে চাকু হাতে বারবার পেটে ও গলায় চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কাজ না হওয়ায় নয় মিনিটের ওই ভিডিওর শেষে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যর্থ, আপাতত। ওকে, নেক্সট অ্যাটেম্প নেব।’

স্ট্যাটাসে নির্ঝর সিনহা রওনক নামের এক ফটোগ্রাফারকে উদ্দেশে সাবিরা লেখেন, 'আমি তোমাকে দোষ দিচ্ছি না। এটা তোমার ছোট ভাইকে বলা। সে আমাকে যা ইচ্ছে বলেছে। আর বেস্ট পার্ট হলো, প্রত্যয় আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। আর আমার প্রশ্ন হলো, তোমার কি একটুও ফিল হয়নি?' আর শেষে ফটোগ্রাফারকে ট্যাগ করে লেখেছিলেন, 'আমার মৃত্যুর জন্য সে দায়ী। যদি আমি মারা যাই, তাহলে এর দায় তার।'

১৬ জুন ২০১৬। মডেল সাবিরা আত্মহত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই সিলিংফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেন মডেল সিনহা রাজ। স্বামীর সঙ্গে আর্থিক টানাপড়েনের জের ধরে সৃষ্ট মনোমালিন্যের ফলেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এই মডেল। এই মডেলের স্বামী অভিনেতা ও পরিচালক অভিজিৎ অভি।

কিন্তু কেন আত্মহত্যা করছেন মডেলরা? ওপরের সামান্য ওই বিবরণগুলো পড়ে পাঠকের মনে নানা রকম প্রশ্ন জাগতে পারে। নানা রকম কারণ রয়েছে এই মডেলদের আত্মহত্যার পেছনে। তবে বড় কথা হলো, পৃথিবী যখন তাঁদের কাছে অসহ্য লাগছে, তখন তাঁরা অন্য কোনো পথ বেছে না নিয়ে আত্মহত্যার পথই বেছে নিচ্ছেন। মডেলরা যদি এভাবে আত্মহত্যা করতে থাকেন, তবে আগামী দিনে এর প্রভাব কতটা ভয়াবহ হতে পারে, সেটা সহজেই অনুমেয়।

লেখক : শিক্ষার্থী ও প্রতিনিধি, বাংলাদেশ প্রতিদিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।