অভিমত

প্রবল ও দুর্বল, জালেম ও মজলুম

Looks like you've blocked notifications!

প্রাণিজগতে লক্ষ করা যায় কিছু প্রাণী দুর্বল আর কিছু প্রাণী প্রবল। তাদের মধ্যে বিরাজ করছে খাদ্য-খাদক সম্পর্ক। দুর্বল প্রাণী প্রবল প্রাণীর খাদ্য আর প্রবল প্রাণী দুর্বল প্রাণীর খাদক। বাঘ, সিংহ, হাঙর, কুমির, তিমি, বোয়াল, শিয়াল, শকুন প্রভৃতি প্রাণী গরু, মহিষ, হরিণ, ছাগল, হাঁস, মুরগি, মাছ ইত্যাদি মেরে খায়। অনেক প্রাণী খাদ্য ও খাদক দুই-ই। বড় মাছ ছোট মাছকে ধরে খায়, ছোট মাছ আরো ছোট মাছকে ধরে খায়। প্রাণিজগতের এই নিয়মকে মাৎস্যন্যায় বলে অভিহিত করা হয়। প্রাকৃত পরিবেশে মানুষও খাদ্য ও খাদক দুই-ই। খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বেলায় ‘অহিংসা পরম ধর্ম। জীব হত্যা মহাপাপ’। এই নীতির কার্যকারিতা কি সম্ভব? প্রকৃতি তো ন্যায়-অন্যায়ের প্রশ্নে সম্পূর্ণ উদাসীন।

ন্যায়-অন্যায় সম্পূর্ণই মানবীয় ব্যাপার, প্রকৃতির মতো মাৎস্যন্যায়। অবশ্য মানুষ প্রকৃতিরই অংশ। দুর্বল প্রাণীর কষ্ট লাঘবের জন্য মানুষের শুভবুদ্ধি দ্বারা কিছু নীতি কার্যকর করা যেতে পারে। কোনো প্রাণীকে জবাই করার সময় কষ্ট যাতে কম হয় তার জন্য ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করার নীতি চালু আছে। কিন্তু মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীর বেলায় এমন নীতি কি সম্ভব? যুদ্ধ-বিগ্রহে, হিংসা-প্রতিহিংসায়, গণহত্যায় কী নীতি অবলম্বন করা হয়? বিপ্লববাদীরা কী নীতি অবলম্বন করেন? ন্যায়যুদ্ধ, অন্যায়যুদ্ধ ব্যাখ্যা  করেছেন কোনো কোনো বিপ্লববাদী।

মানুষের সমাজেও প্রবল ও দুর্বল আছে, শাসক ও শাসিত আছে, শোষক ও শোষিত আছে, জালেম ও মজলুম আছে। মানুষের সমাজে নৈতিক চেতনা আছে, ন্যায়-অন্যায় বোধ আছে। মানুষের নৈতিক চেতনা সম্পূর্ণ ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, পরিবেশকেন্দ্রিকও—সামাজিক পরিবেশ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। ব্যক্তির স্নায়ুমণ্ডলী ও মস্তিষ্ক সক্রিয় হয় ও চেতনার প্রকাশ ঘটে পরিবেশের স্পর্শে কিংবা প্রভাবে। আপনিতেই চেতনার পরিচয় পাওয়া যায় না। নীতিরোধ বা নৈতিক চেতনা সামগ্রিক চেতনারই অন্তর্গত।

আমাদের জানা, ইতিহাসের সবটা জুড়েই প্রবল ও দুর্বল আছে। শারীরিক শক্তির দিক দিয়ে প্রবল, মানসিক শক্তির বা বুদ্ধির দিক দিয়ে প্রবল, মনোবলের দিক দিয়ে প্রবল, ধন-সম্পদে প্রবল, অস্ত্রশস্ত্রে প্রবল—নানা দিক দিয়ে প্রবল সব সময়ই আছে। প্রবলের সংখ্যা চিরকাল স্বল্প। দুর্বলও আছে এবং দুর্বলের সংখ্যা চিরকাল অনেক বেশি।

প্রবলরা দুর্বলদের ওপর নানাভাবে কর্তৃত্ব করে। প্রবলরা শাসক হয়, দুর্বলরা শাসিত হয়। শাসনব্যবস্থায় জুলুম-জবরদস্তি স্বেচ্ছাচার-স্বৈরাচার, ভাঁওতা-প্রতারণা, মিথ্যাচার ইত্যাদি আছে। যারা শাসিত হয় তাদের মধ্যেও শুধু দুর্বলতাই নয়, আরো নানা রকম ত্রুটি-বিচ্যুতি লক্ষ করা যায়। শাসক-শাসিত, শোষক-শোষিত, জালেম-মজলুম সম্পর্ক সব সময়ই দেখা যায়। কয়েক বছর আগে What do the rulers do when they rule নামে একটি বই পড়েছিলাম। লেখকের নাম মনে নেই। মনে পড়ে, তাতে লেখক সেই দাস যুগ থেকে আরম্ভ করে বিংশ শতাব্দীর প্রায় সবটাব্যাপী ইউরোপের কয়েকটি দেশের শাসকদের শাসনকৌশল ও শাসিতদের প্রতি আরোপিত কূটনীতি দেখিয়ে দিয়েছেন। শাসিতদের মানবপ্রবণতা ও দুর্বলতাও দেখিয়েছেন। শাসিতদের শক্তিশালী হওয়ার ও শাসনক্ষমতা দখলের চেষ্টার কথাও উল্লেখ করেছেন। দুর্বলরা যখন শক্তিশালী হয়, শাসক হয় তখন, তারাও নিপীড়ক ও শোষক হয়ে ওঠে। ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে সরলভাবে বলে দেওয়া যায় না যে দুর্বলরা ভালো আর প্রবলরা মন্দ। ভালো-মন্দ মিলিয়ে মানুষ। প্রবল ও দুর্বল উভয়ের মধ্যে এ বৈশিষ্ট্য আছে। ভালো সব সময় ভালো থাকে না, খারাপও সব সময় খারাপ থাকে না। মানবীয় সম্পর্কের মধ্যে আছে হাজারো জটিলতা, সামাজিক সংহতি আছে, আছে শিথিলতাও। অবস্থা একরকম থাকে না। পরিবর্তিত হয়। পরিবর্তনে মানুষের ভূমিকা থাকে, চেষ্টা থাকে, সংগ্রাম ও সাধনা থাকে, ক্ষয়ক্ষতি ও জয়-পরাজয় থাকে। সমাজ গঠনের, রাষ্ট্র গঠনের সংস্কৃতি সৃষ্টির, প্রগতির, সভ্যতার ইতিহাস আছে। সে ইতিহাসে প্রবল ও দুর্বলদের, শাসক ও শাসিতদের, জালেম ও মজলুমদের নানা রকম চেষ্টা, আন্দোলন, জয়-পরাজয় ও আপস থাকে। মানবজাতি কিংবা বিভিন্ন জাতি কি ধীরে ধীরে শান্তি ও প্রগতির, সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারায় চলছে? মানুষ কোনো কোনো দিক দিয়ে উন্নত হচ্ছে। বিজ্ঞানের আবিষ্কার-উদ্ভাবন চলছে, জ্ঞানের ও শিল্প-সাহিত্যেরও বিকাশ ঘটছে। কিন্তু মানুষের নৈতিক চেতনার কি উন্নতি হচ্ছে না? মানুষের মানবীয় গুণাবলি কি বিকশিত হচ্ছে না?

দুর্বল থাকলে নির্জিত, বঞ্চিত ও শোষিত হতেই হয়। দুর্বল থাকা অন্যায়। প্রবল হতেই হবে। কী করে দুর্বল মানুষ প্রবল হতে পারে? প্রবলদের বৈশিষ্ট্য কী? দুর্বলদের বৈশিষ্ট্য কী?

প্রবলরা সদাসক্রিয়, তাদের মধ্যে কর্তৃত্বলিপ্সা, ক্ষমতালিপ্সা, শোষণলিপ্সা, প্রতারণার প্রবণতা, ক্ষমতা দখলের ও ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার প্রবণতা অত্যন্ত প্রবল। তারা সচেতনভাবে superiority complex প্রদর্শন করে চলে। নিজেদের দুর্বলতা তারা নানাভাবে ঢেকে রাখে এবং প্রবলতা প্রদর্শন করে চলে। প্রবলরা নিজেদের মধ্যে ঐক্য রক্ষা করে চলে।

দুর্বলদের মধ্যে অনৈক্য থাকে। দুর্বলরা প্রবল হতে পারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে। প্রকৃতি অসাম্য তৈরি করে দিয়েছে। প্রবলরা আইন-কানুন, বিধি-ব্যবস্থা, প্রচারকার্য ইত্যাদি দ্বারা সেই অসাম্যকে বাড়িয়ে তোলে। প্রাকৃতিক অসাম্যের সঙ্গে মানুষের তৈরি অসাম্য যুক্ত হয়ে দুর্বলদের জন্য, শাসিতদের জন্য সৃষ্টি করে পরাজিত থাকার অবস্থা। কখনো কখনো অন্যায়-অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সাধারণ মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। দুর্বলরা যখন তাদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তখন তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হয়, নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে হয়, আদর্শ ও আদর্শ-অভিমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করতে হয়।

ধর্মপ্রবর্তকরা যুগে যুগে ধর্মের মাধ্যমে দুর্বলদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করেছেন। আধুনিক যুগে মানববাদ, উপযোগবাদ, দৃষ্টবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদ ইত্যাদি অবলম্বন করে সর্বসাধারণের উন্নতির জন্য কাজ করেছেন। কোনো চেষ্টাই স্থায়ী ফল ফলাতে পারেনি। ধর্মের নামে, গণতন্ত্রের নামে, সমাজতন্ত্রের নামে, জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকবাদের নামে ধর্মবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী, সমাজতন্ত্রবিরোধী, জাতীয়তাবাদবিরোধী ও আন্তর্জাতিকতাবাদবিরোধী কার্যকলাপও কম হয়নি।

রেনেসাঁসের কালে বিভিন্ন জাতি ঈশ্বরকেন্দ্রিক, ধর্মগ্রন্থকেন্দ্রিক, পরকালমুখী দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তা ও চেষ্টা পরিহার করে মানবীয় চেষ্টা দ্বারা পৃথিবীকেই স্বর্গে উন্নীত করার লক্ষ্যে সাধনা ও সংগ্রাম চালায়। দার্শনিক-বৈজ্ঞানিক, কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী, রাষ্ট্রচিন্তক ও রাজনীতিবিদ কাজ করে চলেন এই লক্ষ্যে। কিন্তু নৈতিক উন্নতির অভাবে উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ দেখা দেয়। অপশক্তি ক্ষমতায় আসে। তাতে ছোট-বড় যুদ্ধ চলতে থাকে এবং একসময় বিশের শতকে সংঘটিত হয় দুই বিশ্বযুদ্ধ। দুই বিশ্বযুদ্ধের পরে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি প্রাধান্য বিস্তার করে চলে। জাতিসংঘ কার্যত পরিণত হয় সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রশক্তিগুলোর সংঘে। আশির দশকের শুরু থেকেই দেখা যায় ইতিহাসের চাকা পেছন দিকে ঘুরছে। পুরোনো, পরাজিত সব সংস্কার-বিশ্বাস পুনরুজ্জীবিত হয়ে চলছে। আসলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো ও দুর্বল রাষ্ট্রগুলোতে তাদের অনুসারীরা একটি বিশ্বপরিকল্পনা নিয়ে নিজেদের হীনস্বার্থে ইতিহাসের চাকাকে পেছন দিকে ঘোরাচ্ছে।

ফরাসি বিপ্লবের পর মুক্তির মতবাদ হিসেবে দেখা দিয়েছিল সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল। তখন আত্মপ্রকাশ করেন মার্কস-এঙ্গেলস। তাঁরা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের বা কমিউনিজমের মতবাদ বিকশিত করেন। এই মতাদর্শ অনুযায়ী সংঘটিত হয় রুশ বিপ্লব, চীনা বিপ্লব ইত্যাদি। মার্কসবাদকে অবলম্বন করে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ মানবজাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশান্বিত ছিলেন। সাম্রাজ্যবাদী মহল সর্বশক্তি দিয়ে মার্কসবাদকে ও মার্কসবাদীদের ধ্বংস করতে চেষ্টা চালাচ্ছিল। মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে চলছিল তীব্র আদর্শগত বিরোধ। শেষ পর্যন্ত মস্কো তার আদর্শ নিয়ে টিকতে পারল না। সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্ত হয় ১৯৯১ সালে। তখন থেকে মার্কসবাদ ও সমাজতন্ত্র আবেদনহীন হয়ে পড়ে। সাম্রাজ্যবাদীরা গণতন্ত্রকে উদার গণতন্ত্র নাম দিয়ে নির্বাচনতন্ত্রে পর্যবসিত করেছে। তাতে সাম্রাজ্যবাদীদের ও ধনিক-বণিকদের ছাড়া অন্যদের কাছে গণতন্ত্র আর আকর্ষণীয় নেই। পৃথিবীতে বিরাজ করছে  আদর্শগত শূন্যতা। এই শূন্যতার মধ্যে পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে পুরোনো-পরাজিত সব সংস্কার-বিশ্বাস। মধ্যপ্রাচ্যে ইঙ্গ-মার্কিন শক্তি ও ন্যাটো যে যুদ্ধ চালাচ্ছে, সৈন্য সমাবেশ করেছে, তার প্রতিক্রিয়ায় আত্মপ্রকাশ করেছে তালেবান, আল-কায়েদা, আইএস ইত্যাদি জঙ্গিবাদী শক্তি। কালক্রমে ধর্মীয় ধারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির ও ন্যাটোর আয়ত্তের বাইরে চলে গেছে। সারা দুনিয়ার সাধারণ মানুষ এখন নির্জিত, মনোবলহারা, নেতৃত্বহারা, আদর্শহারা—ঘুমন্ত।

মার্কসবাদকে পর্যবসিত করা হয়েছিল ধর্মে। কোনো কোনো দেশে  মার্কসবাদ নিয়ে যেসব চরমপন্থী গ্রুপ দেখা দিয়েছিল, তাদের চিন্তা-ভাবনা ছিল বাস্তবতাবর্জিত। ধর্মের যেসব সীমাবদ্ধতা, সেগুলো মার্কসবাদের মধ্যেও দেখা দিয়েছিল। বুর্জোয়া, প্রলেতারিয়েত, পুঁজিবাদ, বুর্জোয়া চরিত্র, প্রলেতারীয় চরিত্র, শ্রেণিচ্যুতি ইত্যাদি ধারণা যেভাবে প্রচারিত হয়েছে তা বাস্তবসম্মত ছিল না। সর্বোপরি ডিক্টেটরশিপ অব দ্য প্রলেতারিয়েত বা শ্রমিকশ্রেণির একনায়কত্ব বলে যে লক্ষ্য নিয়ে মার্কসবাদীরা কাজ করেছিলেন, তাও বাস্তবসম্মত নয়। বস্তুবাদকে যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, অনেক দেশেই, বিশেষ করে বাংলাদেশে, মার্কসবাদীরা বস্তুবাদ বলতে মনে করেছেন ধর্মবিরোধিতা। যেভাবে তাঁরা বস্তুবাদ প্রচার করেছেন, তাতে জনগণের ধারণা হয়েছে মার্কসবাদীরা শুধু নাস্তিকতা প্রচার করেন। তাঁদের কোনো রাজনৈতিক চিন্তা নেই।

যে আদর্শগত শূন্যতা আজ পথিবীতে বিরাজ করছে, ৯৫ শতাংশ মানুষের মুক্তির জন্য তা পূরণ করা এখন কেন্দ্রীয় কাজ। Nihilism, Negativism, pessimism থেকে উদ্ধার লাভের জন্য দরকার মৌলিক আদর্শগত পুনর্গঠন।

প্রবল ও দুর্বল, শোষক ও শোষিত, জালেম ও মজলুম ইত্যাদির ধারণা অবলম্বন করে বাংলাদেশের জনজীবনের অবস্থা বিচার করলে কী দেখা যায়? বাংলাদেশে গত ১০ বছর অবস্থা শান্ত যাচ্ছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে বছর দুই উত্তেজনা ও খুনোখুনি ছিল। এর মধ্যে বৌদ্ধ মন্দির, হিন্দু মন্দির, হিন্দু বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। এগুলোকে বলা হয় সাম্প্রদায়িক শক্তির কাজ। আসলে এসব যারা করেছে, তারা দুষ্কৃতকারী, অপশক্তি। তাদের সাম্প্রদায়িক বলে সমাদর করার কোনো মানে হয়? সাম্প্রদায়িকরা তো নিজ সম্প্রদায়ের কল্যাণে কাজ করেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, গণজাগরণ মঞ্চ, হেফাজতে ইসলামের উত্থান ইত্যাদি ঘটনা দেখা গেছে। বিএনপির  নেতাকর্মীরা  মামলা-মোকদ্দমা ও নির্যাতনে পড়েছে। তবে সরকারকে মনে হয় শক্তিশালী অবস্থায় আছে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টের পর আজকের আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া আর কোনো সরকারই এতটা স্থিরতার মধ্যে ছিল না। প্রায় সব সময়ই সরকার উৎখাতের আন্দোলনে ছিল। এখন সরকারকে সবাই মেনে চলছে। জনসাধারণের মধ্যে কোনো অসন্তোষ নেই, ক্ষোভ নেই, প্রতিবাদ নেই। রাজনীতি নিয়ে জনমনে কোনো উচ্চারণ নেই। তবে জনগণ সহজে হুজুগে সাড়া দেয়। বলা কি যাবে যে বাংলাদেশে প্রবল-দুর্বল সম্পর্কের মধ্যে সামঞ্জস্য আছে, শোষণ-পীড়ন সহনসীমার মধ্যে আছে, সামনে আমরা ভালো অবস্থায় উত্তীর্ণ হব? পত্রপত্রিকার সম্পাদকীয় কী বলে? টক শো কী ধারণা দেয়? সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনগুলো বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রদর্শিত পথ ধরে চলতে চলতে বাংলাদেশের জনগণ কি একদিন সুদিনের সাক্ষাৎ পাবে? সমাজের নিচের স্তরের ৯৫ শতাংশ মানুষ কি আজ আওয়ামী লীগের শাসনে ভালো আছে? জনগণের জন্য ভালো কিছু করার জন্য অন্য কোনো দল কি আছে? মানুষ ভোট দিতে কেন যায়? ভোট দিয়ে, ক্ষমতার উত্থান-পতন ঘটিয়ে কয়জন লাভবান হয়? মানুষ হুজুগে মাতে কেন? ভাঁওতা-প্রতারণায় সাড়া দেয় কেন? সাধারণ মানুষের মধ্যে কি আত্মজিজ্ঞাসা দেখা দিতে পারে না?

লেখক : প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ