সম্প্রীতি, সাম্য এবং ঔদার্যের ঈদ

Looks like you've blocked notifications!

ঈদ সমাগত সবার দুয়ারে, ঈদ এমন একটি উৎসব যা সবাইকে আনন্দের জোয়ারে সয়লাব করে দেয়। আহমদ ছফার মতো বৃষ্টির সঙ্গে আমরা ঈদকেও তুলনা করতে পারি। অন্তত বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলাই যায় যে, ঈদ যখন এসে যায়, সে সবাইকে আনন্দের জোয়ারে ভাসায়, যে ভাসতে চায়, তাকেও, এমনকি যে চায়না সেও আনন্দের জোয়ারে প্লাবিত হয়। ঈদকে কেন্দ্র করে যে সুখ আমরা অনুভব করি তাকে পরম সুখের সঙ্গেই তুলনা করা চলে, শৈশবের সেই আনন্দ এখন অবশ্য খুঁজে পাই না, এখনকার দিনে মানুষের ঈদযাত্রায় হাকডাক যোগ হয়েছে, বেড়েছে দুর্ভোগও। বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও আকাশপথে মানুষ এখন বাড়ির দিকে ছুটে চলে রুদ্ধশ্বাসে। এই ঊর্ধ্বমুখী ছুটে চলায় মানুষ যে কেবল যন্ত্রণাই ভোগ করে এমন দাবি পুরোপুরি সত্য নয় বরং মানুষ তাদের স্বজনদের মুখ দেখেই ভুলে যায় যাত্রাপথের দীর্ঘ অশান্তি আর যন্ত্রণার কথা। সেটি সুদূর ঢাকা থেকে কবিগুরুর স্মৃতিধন্য কুষ্টিয়ার শিলাইদহে এসেও আমি যেমন অনুমান করতে পারছি, তেমন বাংলাদেশের অন্য নাগরিকদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। 

বাংলাদেশে ঈদে ঘরমুখো মানুষের  দুর্ভোগের আর শেষ নেই, পথে পথে তাদের শিকার হতে হয় নানা হয়রানির। এর মূলে হরেক রকমের কারণও আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের এখানে যথেষ্ট তৎপর নয়, তাদের নামের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নানা কিচ্ছা-কাহিনী। ঘুষ-দুর্নীতি আমাদের প্রাণশক্তিকে কেড়ে নিচ্ছে, মানুষের বিবেকের তীক্ষ্ম জায়গাগুলোকে তলানিতে নামিয়ে আনছে।

ঈদকে কেন্দ্র করে যদিও অন্যান্য বছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত অস্বস্তির বড় কোনো খবর আমাদের কানে আসেনি। তবে যে কথাটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ সেটি হলো, অধপতন ঘটেছে আমাদের ধৈর্য-বিবেক এবং বোধে। মানুষ দিন দিন বড় বেশি রকম অসুহিষ্ণু হয়ে উঠছে। সিলেটে শিশু রাজনকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে পৈশাচিক কায়দায় হত্যাসহ সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা সে কথাই জানান দেয়। সামগ্রিকভাবে আমরা অধৈর্য হয়ে উঠার পেছনেও কিছু বিষয় অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশে এখন বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রায় প্রতিষ্ঠা পেয়ে চলেছে, রাজনৈতিক খুন, হানাহানি, অবিচার এবং লুটপাটের কারণেই সাম্প্রতিক এই অধঃপতন বলে আমাদের ধারণা। 

নানান অঘটনের এই দেশে তবু আমরা আশায় বাঁধি বুক। একটা ইতিবাচক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যেখানে সব মানুষ শান্তি এবং স্বস্তিতে বসবাস করতে পারবে। এবারের ঈদ আমাদের আরো বেশি সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করুক, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গেয়ে উঠি আনন্দের গান। ঈদ মোবারক।

লেখক : অধ্যাপক, গণিত বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়