ভোগান্তি

সড়কে সড়কে পশুর হাট, তীব্র যানজট

Looks like you've blocked notifications!

বছর ঘুরে দরজায় কড়া নাড়ছে আরো একটি ঈদ। কয়েক দিন পরেই আমরা উদযাপন করব পবিত্র ঈদুল আজহা। জমে উঠতে শুরু করেছে পশুর হাটগুলো। এই গরুর হাটগুলো প্রতিবছরের মতো এবার বসছে সড়কের পাশে। আর নাড়ির টানে বাড়ির পানে ছুটছে হাজারো মানুষ। যাত্রী ও কোরবানির পশুবাহী গাড়ির চাপ বৃদ্ধিসহ নানা কারণে মহাসড়কে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। এবারও চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। গত শুক্রবার থেকে যাত্রীদের ভোগান্তি নিয়ে বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল, পত্রিকা ও টেলিভিশনে বিভিন্ন রকম সংবাদ দেখা যাচ্ছে।

এবার ঈদের সরকারি ছুটির সপ্তাহখানেক আগেই বাস, ট্রেন ও লঞ্চের কাউন্টারগুলোতে ভিড় জমাচ্ছে হাজার হাজার যাত্রী। প্রত্যাশা নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানো। দীর্ঘ অপেক্ষা ও নানান সমস্যার প্রতিকূলতা পেরিয়ে স্বপ্নের টিকেটটি হাতে পেয়ে উচ্ছ্বাসও ছিল যাত্রীদের চোখে-মুখে।

কিন্তু টিকেট পেলেও সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না সরকারের নির্দেশনা না মেনে সড়কের পাশে পশুর হাট বসানো, মহাসড়কজুড়ে দীর্ঘ যানজট ও জলাবদ্ধতা এবং খানাখন্দে ভরে থাকার কারণে। এসব কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পরও মহাসড়ক পেরিয়ে নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না হাজার হাজার যাত্রী।

তবে বেশি ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের। এ মহাসড়কজুড়ে রয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ ও বড় বড় গর্ত। বর্ষার জলাবদ্ধতায় উঠে গেছে সড়কের কার্পেটিং। সম্প্রতি এটি মেরামতের কাজ চলছে। এতে দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। কারণ, এ রুটের বিভিন্ন অংশে প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়ক খানাখন্দে ও গর্তে ভরা। তার মধ্যে ভোগড়া চৌরাস্তা, মালেকের বাড়ি, বোর্ডবাজার, গাজীপুরা, হোসেন মার্কেট, টঙ্গীর চেরাগআলী মার্কেট, স্টেশন রোড—এসব এলাকার বেহাল অবস্থা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী অংশে স্বস্তির দেখা মিললেও সিলেট অঞ্চলের বিকল্প সড়ক হিসেবে পরিচিত পাঁচদোনা টঙ্গী আঞ্চলিক সড়কে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়া ঢাকা-খুলনা, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া-ফরিদপুর মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কগুলোতে খানাখন্দ ও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পথে চলাচলকারী ঘরমুখো মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হবে রাজবাড়ী এলাকায়।

গত শুক্রবার দেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে যানজটে আটকা পড়েন হাজার হাজার যাত্রী, ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিক। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৪৫ কিলোমিটার, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৩০ কিলোমিটার ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট দেখা যায়।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ও গোলাকান্দাইল এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কের সংযোগস্থলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ওই দুই মহাসড়কের উভয় দিকে আটকা পড়ছে শত শত যানবাহন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর পর্যন্ত চার দিন ধরেই যানজটের কবলে পড়ছেন যাত্রীরা। এ ছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কোনাবাড়ী-চন্দ্রা এলাকায় যানজট দেখা গেছে। যানজটের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। এক ঘণ্টার স্থলে সময় লাগছে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। যানজটে আটকা পড়ে প্রচণ্ড রোদে ও খাবার-পানি সংকটে পাঁচটি গরু মারা যাওয়ার খবরও আমরা দেখতে পেয়েছি।

সকাল থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কের উভয় দিকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে মহাসড়কের রূপগঞ্জ ভুলতা-গাউছিয়া পয়েন্ট থেকে এশিয়ান হাইওয়ের কাঞ্চন সেতু ও অন্যদিকে সোনারগাঁর মদনপুর এলাকা পর্যন্ত তীব্র যানজট দেখা যায়।

পবিত্র ঈদুল আজহার চাঁদ দেখার পর থেকে পশুবাহী যানবাহন দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটে যাচ্ছে। এ ছাড়া গাউছিয়া অঞ্চলের ভুলতার পশুর হাট ও স্থায়ী হাট হিসেবে পরিচিত গোলাকান্দাইল হাটে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পশুবাহী যানবাহনগুলোর কারণেও যানজট বৃদ্ধি পেয়েছে।

উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চার/পাঁচ জেলার রাজধানীর সঙ্গে সড়কপথে একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম সিরাজগঞ্জের সলঙ্গার হাটিকুমরুল গোলচত্বর। এখান দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে। অথচ মহাসড়কে খানাখন্দ ও সরু সেতুর কারণে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গার হাটিকুমরুলে গত ঈদুল ফিতর থেকে চলতি আগস্ট পর্যন্ত যানজট পিছু ছাড়ছে না। কখনো হালকা, আবার কখনো তীব্র যানজট হচ্ছে। এর ওপর মহাসড়কের কোলঘেঁষে কেবল হাটিকুমরুল এলাকাতেই বসানো হচ্ছে কোরবানি উপলক্ষে পাঁচটি পশুহাট। এমনিতেই যানজট তার ওপর পশুহাট বসানো হলে যানজট আরো ভয়াবহ আকার ধরবে, এটাতে কোনো সন্দেহ নেই। এরই মধ্যে ভোগান্তির খবর গণমাধ্যমগুলোতে দেখা যাচ্ছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল-উত্তরবঙ্গ সড়কে যানজটে কাহিল হয়ে পড়ছেন উত্তরাঞ্চলের মানুষ। ছয় ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা চলে যাচ্ছে। ফলে আগে ঘরে ফেরার প্রস্তুতি নিয়েও চরম ভোগান্তির মধ্যেই পড়তে হচ্ছে তাদের।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নগরীতে আটটি কোরবানির পশুর হাটের অনুমোদন দিলেও সেটির তোয়াক্কা করছে না কেউই। নগরবাসীর সুবিধার্থে বন্দর-পতেঙ্গা এলাকায় চারটি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমোদন দিয়েছে চসিক। এ চারটি স্থানের বাইরে কোনো গরু বাজার না বসাতে হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করা হয়েছিল। চসিককে অগ্রাহ্য করে বিমানবন্দরগামী সড়কের ওপরই বসানো হয়েছে গরুর হাট। রাস্তার দু'পাশে বাঁশ দিয়ে গরু ওঠানোয় এখনই দীর্ঘ যানজটে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। এতে চট্টগ্রামে আসা বিদেশিদের পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। বিপাকে পড়তে হচ্ছে হজযাত্রীদেরও। যানজটে পড়ে ফ্লাইটও মিস করছেন অনেকে।

এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর পর্যন্ত চার দিন ধরেই যানজটের কবলে পড়ছেন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা। এ মহাসড়কের ওই অংশে প্রতিদিনই কমবেশি ৪৫ কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। দাউদকান্দি ব্রিজ পার হতেই দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগছে। সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখেন। ফলে এক লেনের সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কোনাবাড়ী-চন্দ্রা পথের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের কবলে পড়ে শত শত যানবাহনের হাজার হাজার যাত্রীকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও প্রতিনিধি, বাংলাদেশ প্রতিদিন।