পূজা

দেবীর আগমনে ঢাকার প্রস্তুতি

Looks like you've blocked notifications!

শারদীয় দুর্গা উৎসব সমাগত। অকালবোধনে দেবী আসছেন পৃথিবীতে ভক্তের পূজা পেতে। মঙ্গলবার থেকে দেশজুড়ে ৩০ হাজারের বেশি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুর্গাপূজা।

সারা দেশে শারদীয় এই আনন্দে মিশে আছে রোহিঙ্গাদের কান্না। দেশের হাওর অঞ্চল আর বন্যাদুর্গত এলাকায়ও মানুষ বিপন্ন অবস্থার মধ্যে আছে। সব দিক বিবেচনায় অনেক অঞ্চলেই দুর্গাপূজায় ব্যয় কাটছাঁট করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় পূজা কমিটি থেকেও ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশের মানুষ ও রোহিঙ্গাদের দুর্দশার জন্য যেখানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সহমর্মী হচ্ছেন, তখন দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁদের মরমে আঘাত দিয়ে ঘটছে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা। শেষ ভাংচুরের খবর মিলেছে ফরিদপুরে জেলার নগরকান্দা উপজেলার তালমা বাজারে সার্বজনীন কালীমন্দিরে। তারপরও সব ছাপিয়ে মঙ্গল আলোয় সুন্দরের বারতা ছড়ানোর অপেক্ষায় আছেন সকলে। শাস্ত্রমতে, নৌকায় আগমন ঘটছে এবার দেবী দুর্গার। কৈলাশে ফিরে যাবেন ঘোড়ায়।

রাজধানীজুড়ে পূজামণ্ডপগুলোতে এবার দেখা যাবে ঐতিহ্য আর থিমের প্রতিযোগিতা। রাজধানীর ৪৯টি ওয়ার্ডে এ বছর ২৩১টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেজেগুজে প্রায় তৈরি দেবী দুর্গা। ফিটফাট তার সঙ্গী-সাথিরা। প্রস্তুতির শেষে রয়েছে মণ্ডপগুলো।

১১ বছর ধরে কলাবাগান মাঠে দুর্গাপূজার আয়োজন করছে ধানমণ্ডি সার্বজনীন পূজা কমিটি। বরাবরের মতো এবারও তাদের বাজেট প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি। পুনের স্বর্ণমন্দিরকে থিম করে সাজানো হয়েছে এবারের মণ্ডপ। পূজার পাঁচ দিনই বিতরণ করা হবে প্রসাদ।

অভিজাত এলাকা বনানী মাঠে পূজা করছেন গুলশান-বনানী পূজা ফাউন্ডেশন। এ বছর এই পূজা ১০ এ পা রাখল। কলকাতার দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের আদলে তৈরি করা হয়েছে এখানকার পূজামণ্ডপ। দেড় মাস ধরে ৩০০ শ্রমিক কাজ করছেন। মণ্ডপের প্রায় ৯৫ ভাগ কাজ শেষ। মাঠের মধ্যস্থলে তৈরি মণ্ডপের পাশেই বিশেষ মঞ্চ। যে মঞ্চে পূজার থিমে চলবে বিশিষ্ট শিল্পীদের গান পরিবেশনা। থাকবে প্রসাদ।

ফার্মগেট এলাকার খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে পূজার বয়স ২৬ বছর। গোল্ডেন মোটিফে দেবী দুর্গা এখানে স্থান পেয়েছেন বেলুড় মঠের থিমে।

নতুন ঢাকার পূজায় থিমের ছড়াছড়ি থাকলেও পুরান ঢাকার পূজায় রয়েছে ঐতিহ্য আর বনেদিপনা।

শত বছরের পুরোনো মন্দির রায়েরবাজার মহাপ্রভু আখড়া মন্দিরের দুর্গাপূজার বয়সও পেরিয়েছে শত বছর। ঐতিহ্য আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিশেলে এই মন্দিরে পূজা পান দেবী।

বায়ান্ন বাজার তেপান্ন গলির আরেক গলি শাঁখারীবাজার। সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত এই বাজারে পূজার সব সরঞ্জামই মেলে। বর্ষীয়ান প্রতিমা কারিগর হরিপদ পাল এই গলিতেই প্রতিমা গড়েন। আর লম্বা রাস্তার কয়েক গজ পরপরই রয়েছে পূজামণ্ডপ। এখনাকার বনেদি পূজামণ্ডপ ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো না হলেও সঙ্ঘমিত্রের পূজার রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। এখানকার প্রতিমা গড়েছেন মানিকগঞ্জের শিল্পী সুকুমার পাল। শাঁখারীবাজারে পূজা হচ্ছে আটটি। এর পাশেই তাঁতীবাজারেও পূজা হচ্ছে নয়টির মতো।

ঐতিহ্যের পূজা ছড়িয়েছে শ্যামবাজার, সূত্রাপুর। শ্যামবাজারের গোকুল চন্দ্র এস্টেটের পূজার বয়স শত বছরের বেশি। স্বর্গীয় গোকুল চন্দ্রের উত্তরাধিকার নকুল চন্দ্র এলাকার সবাইকে পূজাটি টিকিয়ে রেখেছেন।

সূত্রাপুর থানার বিহারীলাল জিউ মন্দিরে পূজা হচ্ছে পঁচাত্তর বছর ধরে। পাশেই মালাকারটোলা সার্বজনীন পূজা কমিটির পূজা এ বছর পা রেখেছে ৮৪ বছরে।

থিম আর ঐতিহ্যের মিশেলে ঢাকাজুড়েই পূজা প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার রায় এরই মধ্যে জানিয়েছেন, শারদ উৎসবকে বরণ করতে তাঁরা প্রস্তুত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে তারা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা আশ্বাস পেয়েছেন।

মঙ্গলবার সকালে ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ আর সন্ধ্যায় অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পাঁচ দিনের শারদীয় উৎসব।

লেখক : সাংবাদিক।