জরুরি সেবা ‘৯৯৯’

Looks like you've blocked notifications!

‘৯৯৯’  একটি জরুরি সেবা প্রদান নম্বর। যা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের একটি উদ্যোগ। এটি পরীক্ষামূলক ভাবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ফায়ার সার্ভিস, পুলিশি সাহায্য বা অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিয়ে কাজ করছে। যেকোন মোবাইল ফোন নম্বর থেকে সম্পূর্ণ টোল ফ্রি কল করে বাংলাদেশের নাগরিকরা এই সেবা পাবেন। ৯৯৯ সার্ভিসের প্রশিক্ষিত প্রতিনিধিরা জরুরি মুহূর্তে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ বা অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন।

গত বছরের (২০১৬ সাল) ১১ অক্টোবর ‘ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস-৯৯৯’ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। ওই বছরই তখন নাগরিকদের পক্ষ থেকে ৯৯৯-এ বেশিরভাগ কল এসেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা নেওয়ার বিষয়ে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে গত ৮ অক্টোবর (২০১৭ সাল) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে আন্তমন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে এ সার্ভিসের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশ সদর দপ্তরকে। পরে পুলিশের একজন অতিরিক্ত ডিআইজির নেতৃত্বে একটি টিম এই সেবা কার্যক্রম চালুর প্রক্রিয়া শুরু করেন। এরইমধ্যে এ প্রক্রিয়া শেষ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

তাই সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৫ ডিসেম্বর সকালে ওসমানী মিলনায়তনে এই সেবাটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়। তথ্য প্রযুক্তিতে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

মূলত সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ পরিচালিত একটি পাইলট কর্মসূচির আওতায় এ সেবা পরীক্ষামূলক কাঠামোর মাধ্যমে নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজনে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদানের জন্য চালু হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্লাস ওয়ানের সেবাগুলোর সমন্বয়ে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

বর্তমানে সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে এ কার্যক্রম চালু রয়েছে। উদ্বোধনের পর ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে এই সেবা। পরীক্ষামূলক অবস্থাতেই সীমিত আকারে পুলিশি সহায়তা, অ্যাম্বুলেন্স সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে, অনেকেই উপকৃতও হচ্ছেন। ৯৯৯ হেল্প ডেস্ক মোবাইল অ্যাপলিকেশন ডাউনলোড লিংক : http://bit.ly/2fqnhey.।

মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে ৯৯৯ জরুরি সেবার কল সেন্টারে সরাসরি ফোন, লাইভ চ্যাট, বিভিন্ন তথ্য খোঁজার জন্য সার্চ অপশন ব্যবহার করতে পারবেন নাগরিকরা। এ ছাড়া এই অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জরুরি প্রয়োজনে জরুরি সেবার বিভিন্ন তথ্য লোকেশনসহ জানা যাবে। কল সেন্টারের মাধ্যমে শুধু জরুরি সেবা পাওয়া গেলেও ৯৯৯ হেল্প ডেস্কের ডিজিটাল মাধ্যম মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা ওয়েবসাইটে জরুরি (http://nhd.gov.bd/) সেবা ছাড়াও সাধারণ সরকারি সেবা, জীবন ও জীবিকাবিষয়ক নানাবিধ তথ্য ও সেবা পাওয়া যাবে।

‘৯৯৯ হেল্প ডেস্ক’ মোবাইল ফোন অ্যাপলিকেশন ব্যবহার করে গ্রাহক নিজের ও নিকটবর্তী মানুষের জরুরি প্রয়োজনে কল সেন্টারে সরাসরি কথা বলতে পারবে। কল সেন্টারের প্রশিক্ষিত এজেন্ট সেবাগ্রহীতার চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস বিভাগের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে দেবেন এবং প্রয়োজনীয় মুহূর্তে নাগরিকদের অ্যাম্বুলেন্স-সেবা প্রাপ্তিতে সহযোগিতা করবে।

এই অ্যাপ ব্যবহার করে সরাসরি কনটেন্ট এক্সপার্ট ও এজেন্টের সঙ্গে লাইভ চ্যাটের সুবিধাও রয়েছে। কেউ চাইলে জরুরি প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় সেবা প্রাপ্তি সম্পর্কে আগে থেকেই অবহিত হতে পারবেন। এ তথ্য প্রতিনিয়ত পরিমার্জন, পরিবর্ধন ও হালনাগাদ করা হবে। ৯৯৯ অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে জরুরি বা সাধারণ সেবা সম্পর্কে যেকোনো তথ্য খোঁজার জন্য একটি শক্তিশালী সার্চ অপশন রয়েছে, যা বাংলাদেশের সব সরকারি (.gov.bd)   ওয়েবসাইট থেকে তথ্য খুঁজে পেতে সহায়তা করবে এবং এই অ্যাপের নিজস্ব কনটেন্ট ব্যাংক থেকে আপনাকে তথ্য প্রদর্শন করবে।

১। সেবা গ্রহণে যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ :

সঠিক ও মানসম্মত সেবা দিতে এজেন্টরা কিছু প্রযুক্তিগত সহায়তা পেয়ে থাকেন। তবুও যখন কোনো নাগরিক ৯৯৯-এ কল করবেন বেশকিছু বিষয় খেলা রাখা প্রয়োজন।

জরুরি সেবা পাওয়ার জন্য সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রার্থীর ঠিকানা জানা। অপারেটরকে(এজেন্ট)যতটা সম্ভব সঠিক অবস্থান বলতে হবে। সাহায্যপ্রার্থীর সঠিক অবস্থান না জানা থাকলে পাশের বড় রাস্তা, বাজার বা মহাসড়কের নাম বলা যাবে।

আবার ৯৯৯ নম্বরে কল করলে সেখান থেকে কল ব্যাক করা হতে পারে জানিয়ে পুলিশ যে নম্বর থেকে কল করা হয়েছে, সেটি চালু রাখার পরামর্শ দিয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস বা অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষও সাহায্যপ্রত্যাশীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে বলেও নম্বরটি চালু রাখা জরুরি।

২। প্রশ্নের সঠিক উত্তর :

অপারেটর বা জরুরি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস বা অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ) সেবা গ্রহীতাকে কিছু প্রশ্ন করবেন। তারা যথাযথ কর্মকর্তা বা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজন জানাবেন অথবা জীবন রক্ষাকারী কিছু পরামর্শ বা করণীয় সম্পর্কে জানাতে পারেন।

এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য একই প্রশ্নের উত্তর একাধিকবার দেওয়া হতে পারে। বিশেষ করে ৯৯৯ থেকে কল ট্রন্সফার হয়ে পুলিশ বা ফায়ার সার্ভিস বা হাসপাতালে পাঠানো হলে এমনটা হতে পারে।

৩। ধৈর্যশীল থাকা :

কলের সময়ে শান্ত থাকতে হবে এবং সমস্যা বিস্তারিত তুলে ধরতে হবে। ভাবাবেগে আক্রান্ত হয়ে অপ্রয়োজনীয় কথা চলবে না। এতে অপাটেরের মূল সমস্যাটা ধরতে অসুবিধা হতে পারে।

৪। জরুরি পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা :

জরুরি পরিস্থিতি ব্যাখ্যার সময়ে কয়েকটি বিষয়ে সর্তক থাকার পরামর্শ দিয়েছে উদ্যোক্তারা। এর মধ্যে আছে সেবাগ্রহিতা নিজে নাকি কাছের কেউ সমস্যায় পড়েছেন, কীভাবে ঘটনাটি ঘটল, কোনো ধরনের জরুরি সেবার প্রয়োজন, পুলিশ নাকি অ্যাম্বুলেন্স লাগবে? কেউ আহত হলে তার অবস্থা কেমন, ব্যক্তির অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক কি না, তার চেতনা আছে কি? তিনি নিঃশ্বাস নিতে পারছেন কি না, তার শরীর থেকে রক্ত বের হচ্ছে কি না?

সাহায্যপ্রার্থী নিজে বিপদে পড়লে অসুবিধা হলে পাশের কাউকে দিয়ে কথা বলানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে ৯৯৯-এ সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে।

৫। পুলিশের সেবা যেভাবে মিলবে :

পুলিশি সাহায্যের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিকটস্থ থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে হয়। লিখিত অভিযোগ ছাড়া অনেকক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত শুরু করতে পারে না।

তবে জরুরি পুলিশি সেবার ক্ষেত্রে ৯৯৯ অপারেটর সাহায্যপ্রার্থীকে টিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করিয়ে দেবে।

কোনো অপরাধ ঘটতে দেখলে নিরাপদ অবস্থানে থেকে ৯৯৯-এ কল করার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। অপরাধীকে চিনে থাকলে তা জানানো বা কাউকে সন্দেহ হলে কী কারণে সন্দেহ করছেন তা জানানোর পরামর্শ দিয়েছে বাহিনীটি।

অপরাধী দেখতে কেমন, তার বয়স, উচ্চতা, কাপড়ের রং প্রভৃতির তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। আবার অপরাধী পালিয়েছে কি না, গেলে কোন দিকে গেছে, তাদের কোনো গাড়ি ছিল কি না, থাকলে কোন ধরনের গাড়ি?, গাড়ির মডেল, রং এবং আকার কতটা সে দিকে লক্ষ রাখা এবং সম্ভব হলে গাড়ির নম্বর টুকে রাখতে বলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি।

৬। মিলবে ফায়ার সার্ভিসের সেবা

অগ্নি নির্বাচন ছাড়াও ফায়ার সার্ভিস সড়ক দুর্ঘটনা, নৌ দুর্ঘটনা, আটকেপড়া মানুষ বা পশু,পাখি উদ্ধার করে থাকে। এই ধরনের সেবার প্রয়োজন হলেও ৯৯৯-এ ফোন করা যাবে।

৭। অ্যাম্বুলেন্স সেবা বিনামূল্যে নয়

৯৯৯ নম্বরে মাধ্যমে যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাওয়া যাবে তা বিনামূল্যে দেওয়া হবে না। অপারেটররা কেবল বিভিন্ন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাকে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। ফলে অ্যাম্বুলেন্সের ধরন, গন্তব্যস্থল ইত্যাদি অনুযায়ী ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারিত হয়। তাই অ্যাম্বুলেন্স সেবা চাইতে এসব তথ্য অপারেটরকে সঠিকভাবে জানাতে হবে।

তবে ৯৯৯ থেকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হবে না।

৮। অকারণে ফোন না করার অনুরোধ

৯৯৯ নম্বরে অকারণে হয়রানিমূলক বিশেষ করে শিশুরা যেন অকারণে ফোন না করে সে দিকে নজর রাখার তাগিদ দিয়েছে সেবাদাতারা। অকারণে ফোন করলে প্রকৃত বিপদগ্রস্তরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে তারা। শিশুদেরও ৯৯৯-এ অকারণে ফোন করার ক্ষতির বিষয়টি বুঝিয়ে বলা আর কোনটা জরুরি পরিস্থিতি, সেটিও তাদের জানানোর পরামর্শ দিয়েছে সেবাদাতারা।

৯। হয়রানিমূলক কল হলে আইনি ব্যবস্থা

রেফারেন্সের জন্য ৯৯৯-এ কল রেকর্ড করা হবে জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে কেউ মজা করতে বা হয়রানি করতে বা কাউকে ফাঁসাতে ফোন করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আবার অসর্তকতার কারণে যেন ৯৯৯ এ কল না যায় সেজন্য মোবাইল ফোন লক করে রাখার পরামর্শও দিয়েছে পুলিশ ।

লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও প্রতিনিধি, বাংলাদেশ প্রতিদিন