অভিমত

এ কেমন সাংবাদিকতা?

Looks like you've blocked notifications!

সাংবাদিকরা দিনরাত এক করে, কখনো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনসাধারণের কাছে প্রতিদিনের খবরাখবর তুলে ধরার মহৎ কাজটি করে থাকেন। জাতির সামনে অকপটে তুলে ধরেন সমস্যা, সম্ভাবনা। অল্প কিছু নামধারী সাংবাদিকের জন্য এ মহৎ পেশাকে মানুষ ভিন্নভাবে দেখছে-এটি সবার জন্যই দুঃখজনকই নয়, লজ্জাজনকও বটে। কিছু কিছু অনলাইন পোর্টাল রয়েছে, যেগুলো ভিউয়ার বাড়ানোর জন্যে যতটা নিচে নামা যায়, তারা ততটা নিচে নামছে। এদের অবস্থান এতটাই নিচুতে যে, এরা একবার জীবিত কোনো বরেণ্য মানুষকে মৃত বানাচ্ছে, আবার কখনো কোনো মৃতকেও জীবিত বানাচ্ছে। এসব ভূঁইফোড় অনলাইনের নিউজ ধরন হবে : ‘সাকিব আল হাসান আততায়ীর গুলিতে নিহত’, ‘মিঠুন চক্রবর্তী আর নেই’, ‘পরপারে শাবানা’ ইত্যাদি ইত্যাদি। কখনো এসব খবর পড়লে দেখা যাবে, এই সাকিব আল হাসান কুষ্টিয়ার কোনো এক গ্রামের সাকিব আল হাসান, অথবা আমাদের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকেই তারা মেরে ফেলেছেন। কখনো শাবানাকে মেরে ফেলা হয়েছে নিউজে। হয়তো খবরটার শেষে লেখা থাকবে, অমুক ছবিতে তিনি মৃত্যুর দৃশ্যে অভিনয় করেছেন। এমন অসংখ্য ভুয়া মৃত্যুর খবর ছড়ানো হচ্ছে। আমাদের মনে থাকার কথা, সদ্যপ্রয়াত জননন্দিত নগরপিতা আনিসুল হকের মৃত্যুর গুজব বহুবার ছড়ানো হয়েছিল। নায়করাজ রাজ্জাককে নিয়ে এমন বহুখবর প্রকাশিত হয়েছিল।এমন উদ্ভট খবরই কেবল নয়, কখনো এরা পাঠকদের আকৃষ্ট করতে চায়, বাড়াতে চায় ভিউয়ার। এটা যে এক ধরনের প্রতারণা, অপসাংবাদিকতা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই তথ্য বিভ্রাট, মিথ্যাচার সাধারণ মানুষের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি জাতির জন্যও।

‘জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষ নিহত!’ ১০ ডিসেম্বর শিরোনামে কয়েকটি অনলাইন একটি নিউজ প্রকাশ করে। স্বাভাবিকভাবেই এই সংবাদটি পাঠকদেরকে আলোড়িত করে। কেননা, এমন গুণী একজন অভিনেত্রীর অকাল প্রস্থান কারো কাম্য নয়। সংবাদের শুরুতেই লেখা হয়েছে : ‘রাজধানীর উত্তরায় ১৩ নাম্বার সেক্টরে অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষের চলমান বাইককে পিছন থেকে ধাক্কা দেয় একটি ট্রাক। এতে ঘটনাস্থলেই অপর্ণা ঘোষ নিহত হন। তাকে পরিকল্পিতভাবে ধাক্কা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।’ অথচ সংবাদের শেষে লেখা হয়েছে : ‘পরিকল্পিত এই মৃত্যুর দৃশ্যটি নিপুণভাবে ধারণ করা হয় মেধাদীপ্ত নবীন নির্মাতা সেলিম রেজা রচিত এবং পরিচালিত নীল কাদা আবরণ নাটকে।’ যখন সংবাদে প্রধানতমভাবে নাটকের কোনো দৃশ্যের কথা বলা হয়েছে, অথচ সেখানে শিরোনাম করা হয়েছে ‘জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপর্না ঘোষ নিহত!’ এই শিরোনাম করা এ জন্য যে, এই শিরোনাম পড়েই পাঠক হু হু করে খবরটি পড়তে আগ্রহী হবে এবং তাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবে। বাড়বে তাদের ভিউয়ার। এই যে ভিউয়ার বাড়ানোর চেষ্টা, এটা কি মনোবিকৃতি নয়? এটি কি পাঠকদের সাথে প্রতারণা নয়? এমন সংবাদ কি নির্দিষ্ট ওই ব্যক্তিকে বিব্রত, অপ্রস্তুত করে না?

অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষ, তাঁর পরিবার ও ভক্তরা  যে বিব্রত ও আহত হয়েছেন এ সংবাদ পড়ে তা নিঃসঙ্কোচে বলা যায়। নিউজটি দেখে, শুনে স্বাভাবিকভাবেই অপর্ণা ঘোষ বিব্রত ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন : ‘জনৈক সাংবাদিক, সম্পাদক, আপনাদের কাছ থেকে একটি সংবাদ আশা করছি। শিরোনাম : কী কী অযোগ্যতা থাকলে হাতুড়ে সাংবাদিক হওয়া যায়? আমি শুটিংয়ে মালয়েশিয়াতে আছি আর আপনাদের এই অযোগ্য সাংবাদিকতার কারণে আমার পরিবার থেকে পরিচিতজনসহ সবার যে কী পরিমাণ দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে গেছে তা নিশ্চয়ই আপনাদের ১৪০০ গ্রামের মস্তিষ্ক দিয়ে বিবেচনা করা সম্ভব হবে না। পুনশ্চঃ সাংবাদিকতা আর মলম বিক্রি একসাথে গুলিয়ে ফেলবেন না।’

তাঁর প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিকই। সত্যিই তো, সাংবাদিকতা আর মলম বিক্রি এক কথা নয়। কিন্তু এই সমস্যা থেকে প্রতিকারও আমাদের প্রয়োজন। অপসাংবাদিকতা, প্রতারণা বন্ধে প্রথমত সরকারকে সোচ্চার হতে হবে। সাংবাদিক ও পাঠকদেরও সচেতন থাকতে হবে। কেননা, একটি ভুল সংবাদ অনেকক্ষেত্রে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে, অনেকের প্রাণহানিরও কারণ ঘটতে পারে। আমরা প্রত্যাশা করি, সরকার এমন প্রতারণা ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রচারে দ্রত ব্যবস্থা নেবে। সাংবাদিকতার নামে এমন মনোবৈকল্য, অন্যায় কারোই কাম্য নয়।

লেখক : কবি ও গল্পকার।