অভিমত

এ কী বললেন তিনি

Looks like you've blocked notifications!

প্রশ্নপত্র ফাঁস, বিষয়টা আমাদের এখন মজ্জাগত হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন এটা না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। খুব সহজেই কাজটা করা যায়, কোনো প্রকার কষ্ট বা ঝুঁকির বিষয়টা মাথায়ই আসে না, জেল জরিমানার কথাও মনে আসে না। যতই পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার ৩০ মিনিট  আগে আসতে বলা হোক না কেন, তাতে অভিভাবক মহল যতই নাখোশ হোক না কেন, যারা ওই কাজটা করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছে, তারা তা করেই ছাড়বে। যেন সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে ওই দুষ্টুচক্র  আমরা ওটা করে দেখাব, আপনারা যতই হুমকি-ধমকি দেন না কেন।

এখন কথা হচ্ছে দুষ্টচক্রের খেসারত কেন পুরো শিক্ষার্থীকে দিতে হবে?

বিষয়টা কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না। আমাদের শিক্ষামন্ত্রী সাহেব এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রথম দিনেই বললেন, প্রশ্ন যদি ফাঁস হয়, এবং তা যাচাই করে যদি প্রমান পাওয়া যায়, তা হলে পরীক্ষা বাতিল করা হবে।

এই বিষয়টা তাঁর মতো একজন দায়িত্বশীল লোক কি করে বলতে পারলেন? মাথায় ঢুকছে না। প্রশ্ন ছাপান সরকারের দায়িত্বশীল লোকজন। তা নির্দিষ্ট সময় খুব সতর্কতার সাথে কেন্দ্রে পাঠানো হয়। তারপর পরীক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছায়। 

এখন কাদের গাফিলতির কারণে প্রশ্ন চুরি হয়ে তা ফাঁস হয়ে যাচ্ছে সেটার দিকে নজর না দিয়ে বা তাদের টিকিটা কোথায়, সেটা না খুঁজে নিরীহ লাখ লাখ কোমলমতি কিশোরের জীবনকে নষ্ট করার অর্থ কী? একটা পরীক্ষা বাতিল হলে সেটার মানসিক চাপ একজন কিশোর কীভাবে সহ্য করবে বা আবার সেই বিষয়ে পরীক্ষার জন্য সে প্রস্তুতি গ্রহণ করবে কেন? তার তো কোনো দোষ নেই। সেই ওই ফাঁস হওয়া প্রশ্নও পায়নি। সে ভালোভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিল, তাই পুরো উত্তর লিখেছে। এখন কেন আবার একই বিষয়ে পরীক্ষা দেবে? এ কথাটা একবার হলেও ভাবা কি প্রয়োজন ছিল না?  দোষ করল গুটিকয় মানুষ, তার খেসারত পুরো শিক্ষার্থীদের কেন দিতে হবে?

আমাদের যারা সুন্দর পথ দেখাবেন, যারা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে  সুশৃঙ্খল অবস্থানে নিয়ে যাবেন, তাঁদের মুখে এ রকম উক্তি আমাদের হতাশ করে। আমরা যা এত দিন শিখেছি তাও মনে হয় ভুল শিখেছি। আমাদের তা হলে আলোর দিকে নিয়ে যাওয়ার থাকলটা কে?

আরেকটি বিষয়, প্রায় প্রতিবারেই লক্ষণীয় যে, পরীক্ষা শুরুর দিন শিক্ষামন্ত্রী সাহেব কোনো না কোনো কেন্দ্রে যাবেন, পরীক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে পরীক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য বা উৎসাহ দেওয়ার জন্য। কিন্তু তাঁর সাথে টিভি ক্যামেরা যেন হলের ভেতর প্রবেশ করতে না পারে, বিষয়টা একটু সতর্কতার সাথে অনুধাবন করা উচিত।

স্বাভাবিকভাবেই মন্ত্রী মহোদয়ের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ভেতর কৌতূহল জাগায়, তারপর যদি ক্যামেরা হলের ভেতর ঢোকে তা হলে তা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে পরীক্ষায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে। এমনিতেই তিন ঘণ্টায় লেখা শেষ করা যায় না, বাংলা বা ইংরেজি প্রথমপত্র হলে, তার ওপর যদি ক্যামেরা আর মন্ত্রী সাহেব সাথে লোকজন নিয়ে হলের ভেতর ঢোকেন তা হলে বিড়ম্বনার শেষ নেই। 

পরীক্ষার প্রথম দিন গণমাধ্যমে এ রকম খবর দেখে হতাশ হই।  

আমরা হতাশ হতে চাই না। উৎসাহ পেতে চাই। আমাদের তরুণ প্রজন্ম সুন্দরভাবে তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করবে, সেখানে প্রশ্নফাঁসের মতো ঘটনা ঘটবে না, দুষ্টুচক্রের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হবে, এমনটাই আশা করি। 

লেখক : ছড়াকার ও সাংবাদিক