শ্রমিক হওয়াতে লজ্জার কিছু নেই

Looks like you've blocked notifications!

বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের বিকাশের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো, শ্রেণি হিসেবে শ্রমিকদের সংগঠিত না হওয়া। একদল মানুষকে শ্রেণি হিসেবে সংগঠিত হতে হলে, প্রথমত নিজেদের পরিচয়, অর্জন ও সংকটকে খুব ভালোভাবে অনুধাবন করতে হয়। এরপর বুঝতে হয় সবার সাধারণ স্বার্থ। নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা, সাহিত্য-সংস্কৃতি-উদযাপন ইত্যাদির মধ্যদিয়ে সে স্বার্থকে অর্জন বা রক্ষা করার জন্য জন্য সে মানুষেরা জোটবদ্ধ ও উদ্যোগী হয় ,  তখন বোঝা যায়,  তারা শ্রেণি হিসেবে সংগঠিত হয়েছে। শ্রেণি হিসেবে সংগঠিত না হলে ,  হিস্যা বা অধিকার আদায়ে অপর শ্রেণির সাথে লড়াই করে পারা যায় না। বাংলাদেশে শ্রমিকেরা যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের তুলনায় বেশ খারাপ আছে ,  তার অন্যতম কারণ এই শ্রেণি না হয়ে ওঠা। কারণ মালিক বা নিয়োজক শ্রেণির কাছ থেকে শ্রমিকেরা তাদের শ্রমশক্তির মূল্যসহ আর কী কী সুবিধা পাবে, সেটি যুক্তি বা সাক্ষ্যপ্রমাণের ওপরে নির্ভর করে না; নির্ভর করে দু’পক্ষের মধ্যে কার শক্তি কত বেশি তার ওপরে। ঐতিহাসিকভাবে পুঁজিবাদী সমাজের শুরু থেকেই শ্রমিক ও নিয়োজক সম্পর্কের মধ্যে ‘শক্তি’ বিষয়টি নির্ধারক ভূমিকা পালন করে আসছে। আর শক্তি-চর্চার পয়লা শর্ত হলো পরিচয় নির্ধারণ।

উনিশ শতকের ত্রিশের দশকে রেললাইন পাতার কাজের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে শ্রমিক সমাজের উদ্ভব। দখলদার ব্রিটিশদের বাণিজ্য বিস্তার আর কাঁচামাল পাচারের কাজের সুবিধার জন্য ওই রেলসড়ক তৈরি কাজ শুরু হয়। এরপর বিভিন্ন নৌবন্দর, বস্ত্রকল, পাটকলসহ বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক নিয়োগ শুরু হয়। কিন্তু ব্রিটিশ আমলের শেষাবধি মোট জনসংখ্যার তুলনায় শ্রমিকের সংখ্যা ছিল খুব কম। মূলত কৃষিজীবীরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। ব্রিটিশদের খেদানোর পর এ অঞ্চলে গড়ে উঠতে থাকে বিভিন্ন শিল্পকারখানা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর পুরো পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে থাকে। শিল্পউদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ে, কলকারখানার সংখ্যাও বাড়তে থাকে। আর সেসবে কাজ করার জন্য বহু দরিদ্র চাষীর সন্তান শ্রমিক হিসেবে কাজে যোগ দিতে থাকে। শিল্পখাতের মুক্ত বিকাশ বিভিন্ন কারণে বাধাগ্রস্ত হয়, তবে সেবাখাতে দেখা দেয় বিপুল প্রবৃদ্ধি। সেসব কাজেও বহু শ্রমিক নিয়োজিত হতে শুরু করে। যে পরিবারগুলো শত শত বছর ধরে কৃষির ওপরে নির্ভরশীল ছিল, তারা ধীরে ধীরে শ্রম বিক্রির উপরে নির্ভরশীল হতে বাধ্য হয়। এ বাধ্য হওয়ার কাজটি হয় খুব ধীরে ধীরে, অথচ প্রচন্ড যন্ত্রণা সহকারে। এ শ্রমিকেরা কৃষিভিত্তিক পরিবারে বড় হয়েছে, তাই শিল্পভিত্তিক সমাজে খাপ খাইয়ে নিতে তার কষ্ট হয়। ‘শ্রমিক’ পরিচয়ে সে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। ক্ষুদ্রচাষী পিতা কিংবা তাঁর নিয়োজক বা মালিকের মতো হতে চায় সে। শতকরা এক দুজন সফলও হয়। কিন্তু বাকি ৯৮ ভাগ বাধ্য হয় শ্রমিকের জীবন যাপনে। 

কিন্তু শ্রমিক কি মানুষ সাধে হয় ?  সুদীর্ঘ ও জটিল আর্থ-রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে শ্রমিক ও মালিকের উদ্ভব হয়। সব কালে বা সমাজে এ প্রক্রিয়া একই রকম হয়, এমনটা নয়। বরং প্রতিটিরই ভিন্ন ভিন্ন চেহারা আছে; সাধারণ দিকও আছে। অনেকেই দাবি করে থাকেন, উদ্যোগী মানুষেরা হন মালিক আর উদ্যমহীনেরা শ্রমিক। এ কথা সত্য নয়। বরং এ ধরনের অতিসরলীকরণের পেছনে ঢাকা পড়ে যায় সম্পদ বণ্টনে অসাম্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিস্থিতি ও তৎপরতা, যা সম্পদকে পুঁঞ্জিভূত করে তোলে গুটিকয় মানুষের হাতে, আর বাকিদের ঠেলে দেয় সম্পদহীনতার দিকে। তখন তাদের সামনে একটাই পথ খোলা থাকে: নিজের শ্রমশক্তি বেচা। শ্রমিক হওয়ার পথটি বরং অনেক জটিল ও দীর্ঘ। যাহোক, এ আলোচনা যারা ইতিমধ্যে শ্রমিক হয়ে গেছে, তাদের নিয়ে সীমিত থাকুক। 

আগেই বলা হয়েছে, শ্রমিকেরা নিজেদের শ্রমিক হিসেবে পরিচিত করতে কুণ্ঠা বোধ করছে। অথচ সত্য হলো, তারা শ্রমিক হয়েছে এবং সেটাই তাদের জীবন। এটা কোনো অন্যায় নয়, আর্থ-সামাজিক প্রক্রিয়া। এ সত্য স্বীকার করে নিজেদের সংকট ও সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হলেই কাজের কাজ হবে। অথচ আমরা যেন তা মানতে পারি না। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক।

সিরাজুল হক (ছদ্মনাম) একজন সাংবাদিক। একটি জাতীয় পত্রিকায় তিনি কাজ করেন। জটিল ও গুরুতর বিষয়ে তিনি পড়াশোনা করেন, লেখালেখিও করেন। তিনি তাঁর ব্যয়নির্বাহের জন্য চাকরির ওপরে পুরোপুরি নির্ভরশীল। প্রতিদিন ঘড়ি ধরে আট ঘণ্টা কাজ করতে হয় তাঁকে। সপ্তাহান্তে ছুটি পান এবং ছুটির নিয়মকানুন নির্ধারিত হয় শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী। তিনি নিজেকে শ্রমিক হিসেবে পরিচয় দিতে চান না। নিজেকে পরিচিত করতে চান বুদ্ধিজীবী হিসেবে, কিংবা সংবাদকর্মী এবং সমাজকর্মী হিসেবে। 
বিনয় সরকার (ছদ্মনাম) একজন রাজমিস্ত্রী। ঢাকা শহরে তিনি কাজ করেন। পরিবার থাকে গ্রামে। শহরে জীবনযাপনের ব্যয় তিনি পুরোপুরি নির্বাহ করতে পারেন না বলে পরিবারকে গ্রামে রেখেছেন। সেখানে তাঁর স্ত্রী দুই ছেলে সন্তানসহ থাকেন। বিনয় সরকার মনে করেন, তিনি খুব বেশিদিন এ পেশায় থাকবেন না। দু-চারবছর কাজ করে যে টাকা আয় করবেন, তা দিয়ে গ্রামে বাড়ি বানিয়ে সেখানে থেকে যাবেন। অথচ দু-চার বছর করতে করতে ঢাকা শহরে তাঁর ১২ বছর পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে গ্রামে দু-কক্ষের বাড়ি বানিয়েছেন। কয়েক কাঠা জমিও কিনেছেন। কিন্তু গ্রামে গিয়ে তাঁর থাকা হয়নি। সেখানে আয় নেই। কৃষি থেকে যা আয় আসে, তা পরিবারের ব্যয় নির্বাহের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই এভাবে বসে থাকা চলে না। তিনি শহরে ফিরে আসতে বাধ্য হন এবং আপাতত রাজমিস্ত্রী হিসেবেই কাজ করছেন। 

তমিজউদ্দিন (ছদ্মনাম) একজন গার্মেন্ট শ্রমিক। তিনি গান গাইতে পছন্দ করেন। নিজে গান লিখেন, সুর দেন এবং নিজেই গান করেন। তাঁর দীর্ঘ দিনের আশা, একদিন তিনি গায়ক আসিফের মতো বড় শিল্পী হবেন। তখন গান গেয়েই তিনি অনেক টাকা রোজগার করবেন। অথচ এ করেই কেটে গেছে তাঁর ১০টি বছর। মাঝে গার্মেন্ট কারখানার কাজ ছেড়ে গ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন। বেশি দিন নয়, তিনমাস পরই ফিরে এসেছেন। এখন ঢাকার আশুলিয়ার এক কারখানায় কাজ করছেন। 

তানিয়া হক (ছদ্মনাম) রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক। মোটা বেতনে কাজ করেন। তবে কাজের চাপ একটু বেশি। ক্লাস, পরীক্ষা, খাতাকাটা ইত্যাদি নিয়ে তাঁকে বেশ ব্যস্ত থাকতে হয়। পরিবারকে খুব বেশি সময় দিতে পারেন না। 

সিরাজুল, বিনয়, তমিজ, তানিয়া কেউই নিজেদের শ্রমিক হিসেবে পরিচিত করতে চান না। তাঁদের মধ্যে পেশা, ধর্ম, আয়ের পরিমাণে ভিন্নতা আছে। কিন্তু মিলও রয়েছে।

সবচেয়ে বড় মিল হলো, তাঁদের কারোরই এমন সম্পদ নেই যে, তাঁরা বসে বসে খেতে পারেন। অর্থ আয়ের জন্য চাকরি করতে হয়। মানে শ্রম বেচতে হয়। এঁদের জীবনের নানান সংকটও প্রায় একই ধরনের। অথচ তাঁরা নিজেদের একই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করতে নারাজ। ফলে তাঁরা সমাধান হাঁতড়ে বেড়াচ্ছেন, পাচ্ছেন না। 

তাঁদের মতো আমাদের সমাজের একটি বড় অংশের ধারণা, কেবল কায়িক শ্রমিকেরাই ‘শ্রমিক’। অনেকে আবার মেধাশ্রমের কথা বলে থাকেন। তাঁরা মনে করেন, মেধাশ্রমিকেরা আসলে শ্রমিক নন, বড় জোর ‘মধ্যবিত্ত’। কারণ, আয়ের ভিন্নতা। বিশ্ব শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম প্রখ্যাত নেতা কার্ল মার্কস (৫ মে ১৮১৮ - ১৪মার্চ ১৮৮৩) অবশ্য ‘আয়’ বিচার করে শ্রমিক চিহ্নিত করতে অনাগ্রহী ছিলেন। শ্রমিকদের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করে গেলেও তিনি কার্যত পুরো মানবজাতির সংকট সমাধান করে মুক্তির জন্য একটি পথ খুঁজছিলেন। তাঁর ধারণা ছিল, অন্যান্য শ্রেণির মানুষদের মুক্ত না করে শ্রমিকেরা মুক্তি পাবে না। সে কারণে তিনি শ্রমিকদের মুক্তির ওপরে জোর দেন। শ্রমিকদের বিচার করতে গিয়ে তিনি তাঁদের সাধারণ সংকটগুলোকে চিহ্নিত করেন। এবং যাঁরা এসব সংকটে আটকে আছেন, তাঁদেরই তিনি শ্রমিক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে শ্রমিক হওয়ার সবচেয়ে বড় কষ্ট শারীরিক শ্রম নয়, মানসিক বিচ্ছিন্নতায়। এ বিচ্ছিন্নতা তাঁর সুখ-স্বপ্ন সব কেড়ে নেয়। তাঁর মতে, শ্রমিকের লক্ষণ বা সত্তা হলো: 
একজন শ্রমিক কাজের শুরুতে অর্থের বিনিময়ে ও নির্ধারিত সময় ধরে কাজ করতে চুক্তিবদ্ধ হন (হোক তা লিখিত বা অলিখিত)। এ জন্য তাঁরা ঘণ্টা, দিন, সপ্তাহ, মাস বা বছরওয়ারি মজুরি পান।

শ্রমিক সবসময়ই কারো না কারো অধীনে কাজ করেন।

নিজেকে নিজকর্মের নির্দেশক বা পরিচালক ভাববার সুযোগ বা অধিকার কোনোটিই শ্রমিকের থাকে না। তিনি অনিবার্যভাবে নিজের জীবন ও নিয়তি নির্ধারণের ক্ষমতা হারাতে থাকেন 

চাকরি হারানোর ভয় বা কাজ থেকে ছাঁটাই হওয়ার ভয় শ্রমিকদের নীরবে সারাক্ষণ আবিষ্ট করে রাখে

প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারণকারী ও চূড়ান্ত ব্যবস্থাপনা বিভাগে (যেমন: পরিচালকম-লীর সভাতে) শ্রমিকের অংশগ্রহণ থাকে না। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারণের কর্তৃত্ব বা দায়িত্ব কোনোটিই শ্রমিকের থাকে না 

কায়িক বা মেধাশ্রম দিয়ে শ্রমিকেরা বেতন বা মজুরি পান, মুনাফা নয়।

মালিক তার উৎপাদিত নানান পণ্য বা সেবার মূল্য নির্ধারণ করতে পারে, কিন্তু শ্রমিক তার একমাত্র পণ্যের [অর্থাৎ শ্রমের: যা সে নিয়োজক বা পুঁজিপতির কাছে বিক্রি করতে বাধ্য] দাম নির্ধারণ করতে পারে না।

মার্কস মনে করতেন, পুঁজিবাদী উৎপাদন কাঠামোতে একজন শ্রমিক অন্তত চার ধরনের বিচ্ছিন্নতার যাতনায় ভুগেন: (১) নিজের শ্রমে উৎপাদিত পণ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, (২) কাজ একঘেঁয়ে প্রতীয়মান হওয়ায়, তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, (৩) নিজের সামাজিক জীবনের ধারা হারিয়ে নিজে-নিজের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এবং (৪) চাকরি বা কাজের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে, নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য স্বার্থপর হয়ে, বাকি শ্রমিকদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে। 

অর্থাৎ শ্রমিকেরা যে পণ্য বা সেবা উৎপাদন করেন, সেটির কৃতিত্ব তাঁর বলে স্বীকৃত হয় না। তিনি তার মালিকানাও পান না। সেটি নিয়োজকের বলেই স্বীকৃত হয়। প্রতিদিন একই কাজ করতে করতে তা তাঁর কাছে একঘেঁয়ে মনে হয়। অথচ তিনি তা ছাড়াতে পারেন না। কাজের ধরন বদলানোর সুযোগও তাঁর সীমিত। দিনমান খাটতে খাটতে, কাজের পেছনে ছুটতে ছুটতে একজন শ্রমিক সময়ের অভাবে নিজের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন থেকে দূরে সরে যান। নিজের মনের কথা কারো সাথে শেয়ার করার মতো পরিস্থিতিও অনেক সময় হারিয়ে যায়। সম্পত্তির অপ্রতুলতা আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতকে নিশ্চিত করতে তিনি আরো বেশি করে ছুটতে থাকেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুনিশ্চিত ভবিষ্যত অধরাই থেকে যায়। সবচেয়ে করুণ ঘটনাটি ঘটে অপর শ্রমিকের সাথে তাঁর নিরন্তর রেষারেষির মাধ্যমে। হোক সে নিজের বাবা কিংবা কাছের বন্ধু। কারণ একজন কাজ হারালে আরেকজন সে কাজের সুযোগ পাবে। অনেক সময় ঘটনাটি এমন যে, একজনের আয়-রোজগার বন্ধ হলে অপরজনের রোজগারের পথ খুলে যাবে। শ্রমিকেরা জন্ম নেয় আরেক শ্রমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। এ বিচ্ছিন্নতা, রেষারেষি, হিংসা শ্রমিকের জীবনের সবচেয়ে বড় সংকট।

এসব সংকট থেকে মুক্তি পেতে শ্রমিকেরা বহু বছর ধরে নরম-গরম উভয় পদ্ধতিতেই সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। মে দিবস যে ঘটনার স্মরণে পালিত হয়ে আসছে, সেটিও শ্রমিকদের এ ধরনের প্রচেষ্টারই অংশ। সমাজের উৎপাদনের উপকরণ (প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, খামার ইত্যাদি) এবং নীতি নির্ধারণের ক্ষমতা যতদিন শ্রমিকদের অধরা থাকবে, ততদিন এসব সমস্যার পুরোপুরি সমাধান সম্ভব নয়। কিন্তু তার জন্য শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশে অধিকাংশ শ্রমিক নিজেদের যদি ‘শ্রমিক’ বলে মনে না করে, তাহলে একই স্বার্থে তারা একত্রিত হবে কিভাবে। ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ শ্লোগান দিলেই চলবে না, সঠিক চিন্তা ও চেতনার ভিত্তিতে সংগঠিত হতে হবে। সে দায়িত্ব যেমন প্রতিটি শ্রমিকের, তেমনি সংগঠনগুলোরও। মনে রাখতে হবে, শ্রমিক হওয়া গর্বের বিষয়। দেশের কৃষি, শিল্পায়ন, উৎপাদন ও বিকাশের জন্য শ্রমিকেরা তাঁদের মেধা ও শ্রমের মতই অপরিহার্য। চুরি করে, অন্যায় করে, অন্যের সম্পদ হরণ করে বা দেশের ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে কেউ শ্রমিক হয় না। শ্রমিক হলে জাত যায় না, শ্রমিক হওয়া অসম্মানের বিষয়ও নয়। শ্রমিক হতে হলে তাকে অসহায়, দুর্বল ও গরিব হতে হবে, এমন ধারণাও উদ্ভট এবং হাস্যকর। দেশের শ্রমিকেরা যত দ্রুত এ পরিস্থিতি বুঝতে পারবে, তার মুক্তির পথ হবে তত সুগম।

লেখক:শ্রমিক সংগঠক এবং ট্রাস্টি, বাংলাদেশ শ্রম ইনস্টিটিউট(বাশি)