অভিমত
খুলনার নির্বাচন উদাহরণ হতে পারে
রাজনীতির মনোযোগ এখন দক্ষিণাঞ্চলের রাজধানী খুলনা সিটির নির্বাচনের দিকে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় প্রতীকের বড় নির্বাচন এটি। এই নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হবে না বটে, গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব থাকবে আগামীর রাজনীতিতে। ভোটে কারচুপি হলে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠবে! তাই উভয় দলর জন্যই নিজেদের মর্যাদা ও জনপ্রিয়তা প্রমাণ করার চাপ আছে।
অবশ্য শুরু থেকেই নির্বাচনী ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই’ এমন অভিযোগ করে আসছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত লড়াই করার ঘোষণা আগেই দিয়েছে দলটি।
দুই মেয়র পদপ্রার্থী পরীক্ষিত নেতা হিসেবে পরিচিত স্থানীয় মানুষের কাছে। একজন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, চারবার সংসদ সদস্য, প্রতিমন্ত্রী ও একবারের মেয়র, কাউন্সিলর ছিলেন ১২ বছর। অন্যজন্য নগর বিএনপির সভাপতি এবং ওই আসনেরই সাবেক সংসদ সদস্য। এদের মধ্যে থেকে কাকে বেছে নেবে খুলনাবাসী?
দুই রাজনৈতিক নেতার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০৮ সালের সিটি নির্বাচনে এক লাখ ৫৮ হাজার ভোট পেয়ে প্রায় ২৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনিকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন তালুকদার আবদুল খালেক। তবে, ২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রায় ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে মনির কাছেই পরাজিত হন খালেক। অবশ্য পরের বছর বাগেরহাটের রামপাল থেকে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। আর ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির সময়ও বর্তমান সংসদ সদস্য মিজানুর রহমানকে পরাজিত করেছিলেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। বর্তমানে তিনি খুলনা মহানগর কমিটির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। ১৯৯৪ ও ২০০২ সালে এই খুলনার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির প্রয়াত নেতা অ্যাডভোকেট শেখ তৈয়েবুর রহমান।
বিভক্তি আছে দুই দলেরই। খুলনায় এক সময় বিএনপিতে আলী আসগর লবী এবং নজরুল ইসলাম মঞ্জু গ্রুপ সক্রিয় ছিল। পরবর্তী সময়ে জেলার সভাপতি শফিকুল ইসলাম মনার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় মহানগর নেতাদের। বিএনপির রাজনীতিতে মঞ্জু এবং মনা দুই গ্রুপে বিভক্ত। অন্যদিকে, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক এবং সাধারণ সম্পাদক বর্তমান সংসদ সদস্য মিজানুর রহমানও দুই গ্রুপে বিভক্ত। অবশ্য এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সবাই ঐক্যবদ্ধ- এমন দাবি দুই দলের নেতাদেরই।
জলাবদ্ধতা ও যানজটমুক্ত, গ্রিন-ক্লিন নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি থাকে নির্বাচন এলে। কিন্তু এর কোনো বাস্তবায়ন হয় না। এবারেও ব্যতিক্রম নয়। আছে শহরের অটোরিকশার দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করে যানজট নিরসন করার প্রতিশ্রুতিও।
খুলনা সিটিতে এবার ভোটার চার লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৪ জন। প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন প্রায় ৫২ হাজার ভোটার। এবারের নির্বাচনে নতুন ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ভাবা হচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরেই অনিয়মিত বেতন-ভাতার কারণে খালিশপুর ও দৌলতপুরের পাটকল শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ। প্রায় ৪০ হাজার পাটকল শ্রমিকের ভোট আছে সেখানে। ফলে এবার গুরুত্বপূর্ণ শ্রমিক ইস্যুটি। এ ছাড়া সুংখ্যালঘু ভোট, আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ভোটও ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
নির্বাচনের মাঠে নানা হিসাব-নিকাশ থাকবেই। তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন কতটা প্রস্তুত? আগামীতে সব দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচন করতে চায় সরকার এ কথা শুধু মুখে নয়, কাজে দেখতে চায় দেশের মানুষ। এ ক্ষেত্রে খুলনার নির্বাচন একটি ছোট উদাহরণ হতে পারে সবার সামনে।
লেখক : সিনিয়র রিপোর্টার, এটিএন নিউজ