অভিমত
ফিলিস্তিনিদের কান্নায় পশ্চিমাদের কিছু আসে-যায়?
নিজভূমের অধিকার রক্ষায় যে ইন্তিফাদা কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন ফিলিস্তিনিরা, সেখানে লাশের মিছিল বাড়লেও ইসরায়েল পূজারিদের এতে কোনো মাথাব্যথা হয় না। মানবাধিকারের প্রশ্নে যারা সোচ্চার, তাদের ঘুম আর ভাঙে না। তবে গাজা উপত্যকায় ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ অব্যাহত আছে। ইসরায়েলি বুলেট আর টিয়ার শেলের বিপরীতে ফিলিস্তিনিদের হাতে সম্বল কেবলই এক টুকরো পাথর। তবুও দমে যাননি পৃথিবীর বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগারে থাকা মানুষরা।
সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলায় বেশ কয়েকটি শিশুসহ প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬০ জন। আর আহত হন আড়াই হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে আট মাস বয়সী লায়লা আল-গানদৌরের মৃত্যু কাঁদিয়েছে বিশ্ববাসীকে। যে কি না ইসরায়েলি আগ্রাসনের কবল থেকে বাঁচতে পারেনি। টিয়ার শেলের সৃষ্ট গ্যাসে গাজা সীমান্তে প্রাণ হারিয়েছে সে।
২০০৮ সালের কথা। গাজায় বিক্ষোভে দুটি পা হারিয়েছিলেন ফিলিস্তিনি যুবক ফাদি আবু সালাহ। সম্প্রতি বিক্ষোভে ইসরায়েলি স্নাইপারের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন সালাহ। যিনি বিক্ষোভে অংশ নেন হুইলচেয়ারে বসেই।
ফাদি আর লায়লাই নয়, প্রাণ হারানোর এ রকম অসংখ্য উদাহরণ বিশ্ববাসীর কাছে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি-আন্দোলনের প্রমাণ দিয়েছে। যাতে বিশ্ববিবেক নাড়া দিলেও কখনই মন গলেনি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্রদের। তারা বরাবরই সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে ইসরায়েলকে উসকে দিয়েছে আগ্রাসনের এই নগ্ন খেলায়। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটকে গোটা বিশ্ব এক চোখে দেখলেও এতে কিছু আসে-যায় না পশ্চিমাদের।
তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরে ফিলিস্তিনিদের চলমান বিক্ষোভে আসে ভিন্ন মাত্রা। প্রতিবাদ জানাতে গাজা সীমান্তে আসা ফিলিস্তিনিদের মনে থাকা ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে জোরালোভাবে। যদিও হামলাকে হামাস থেকে নিজেদের সীমান্ত সুরক্ষার অভিযান বলে দাবি করছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর ইসরায়েলি নগ্ন থাবায় নিন্দা জানিয়েছে ব্রিটেন, ফ্রান্স, তুরস্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা। ইসরায়েল থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করেছে কয়েকটি দেশ। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান। আর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে কোনো উদ্যোগ নিতে গেলেই বিরোধিতার পথ প্রশস্ত করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় এক বিক্ষোভ থেকে নিন্দা জানিয়ে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন ইহুদিরা। আর ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভে মার্কিন ইহুদিরা বলেছে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় নিজেদের ইহুদি পরিচয় নিয়ে লজ্জিত তারা।
এত কিছুর পরও নেতানিয়াহু-ট্রাম্প ফোনালাপে আসে না কার্যকর কোনো সমাধানের পথ। বরং যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক আরো জোরদার হয়। ফিলিস্তিনিদের লাশের মিছিল দেখে উল্লাসে মাতে আগ্রাসী ইসরায়েল ও তার মিত্ররা। থমকে থাকে ফিলিস্তিনিদের স্বপ্নযাত্রা।
লেখক : সংবাদকর্মী, আরটিভি।