উত্তর-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র ও ভাষা প্রশ্ন : ১৯৪৮ সালে ভাষাসংগ্রাম

Looks like you've blocked notifications!
আজিজুল রাসেল

১৯৩০-এর দশকের শেষ দিকে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের কথা চিন্তা করছিলেন মুসলমান বুদ্ধিজীবী এবং রাজনীতিবিদরা। এই চিন্তা দানা বেঁধেছিল ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগে পাস হওয়া একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে। প্রস্তাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মতো যেসব অঞ্চলে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাদের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য দলবদ্ধ করে স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য আন্দোলন করা হবে। এ প্রস্তাবের কিছুদিনের মধ্যেই পাকিস্তান আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে বিভক্ত হয় ভারতীয় উপমহাদেশ। জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি দেশ। রাজনীতিবিদদের ক্ষমতালিপ্সার দ্বন্দ্বে পড়ে বিভক্ত হয় বাংলা। বাংলা ব-দ্বীপের পূর্ব অংশকে যুক্ত করা হয় পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে, আর পশ্চিম অংশ যোগ দেয় ভারতে, যদিও বাংলার অনেক মুসলমান নেতা চেয়েছিলেন একটি অভিন্ন বাংলা। দেশ বিভাগের সেই উত্তাল সময়ে দেশ বিভাগকারী কর্তৃপক্ষ ভাবার অত সময় পায়নি যে, মুসলমান হলেও পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রের আওতায় একত্রিত অন্যান্য ভৌগোলিক অংশের সঙ্গে ভিন্ন সংস্কৃতির বাংলা অঞ্চলের সাংস্কৃতিক মিলন বা বোঝাপড়া কী হবে? সাংস্কৃতিক এই বোঝাপড়ার প্রশ্ন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অল্প কিছুদিন পরই হাজির হয়। প্রথমেই প্রশ্ন ওঠে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা, অফিস-আদালত এবং শিক্ষার ভাষা কী হবে? ১৯৪৭ সাল থেকেই ভাষা-প্রশ্নে সজাগ হয়ে ওঠেন পূর্ব বাংলার নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রসমাজ। নবগঠিত ইয়ুথ লীগে বাংলাকে অফিশিয়াল ভাষা করার প্রস্তাব পাস করা হয়। এর পর এ আন্দোলন জোরদার হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তমুদ্দন মজলিসের প্রচেষ্টায়। বর্তমান প্রবন্ধটিতে ১৯৪৮ সালে মার্চ মাসে ভাষা-প্রশ্নে সংঘটিত আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে আলোচনা করা হবে। 

 ১৯৪৮ সালে ভাষা-প্রশ্নে সংগ্রাম আরো জোরদার ও সংগঠিত হয়। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান কনস্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলির প্রথম অধিবেশন শুরু হলে ওই দিনই পূর্ব বাংলার কংগ্রেসের একজন সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাকে উর্দু ও ইংরেজির সঙ্গে এসেম্বলির ভাষা করার জন্য প্রস্তাব করেন। প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান, পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন, গজনফর আলী খান, তমিজউদ্দিন খানসহ অনেকে তীব্র ভাষায় ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন এবং ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাবটি তখনই বাতিল হয়ে যায়। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে খাজা নাজিমউদ্দিন তখন বলেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন, উর্দু একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত। ২৬ ফেব্রুয়ারি সরকারঘেঁষা ‘ডন’ পত্রিকা তিন কলামজুড়ে প্রধান সংবাদ শিরোনাম করে ‘কংগ্রেস রেইজেস কনট্রোভার্সি ওভার স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ : মোশন ফেভারিং বেঙ্গলি ডিফিটেড’। তবে পত্রিকাটি ধীরেন্দ্রনাথের প্রস্তাবটিকে কিছুটা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে। পত্রিকাটি লিখে, উর্দুকে সরিয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। 

 এসেম্বলিতে এই বিতর্কের পর পরই ভাষা-প্রশ্নটি নিয়ে ছাত্র ও জনতা রাস্তায় নামে। খাজা নাজিমউদ্দিনের বক্তব্যের প্রতিবাদে ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় একটি ছাত্র বিক্ষোভ ডাকা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেডিকেল কলেজ ও অন্যান্য স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এ ধর্মঘট পালন করেন। ছাত্ররা নাজিমউদ্দিনের সমালোচনা করেন এবং সরকারের ভাষানীতি প্রত্যাখ্যান করেন। এখান থেকেই তাঁরা স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ কমিটি অব অ্যাকশন (এসএলসিএ) গঠন করেন। এসেম্বলির ভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রত্যাখ্যান করায় ল্যাঙ্গুয়েজ কমিটি অব অ্যাকশন ১১ মার্চ সারা দেশে ধর্মঘটের আহ্বান করে। ১১ মার্চের ধর্মঘটের কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, যশোর, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য জেলা শহরের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ ধর্মঘটে অংশ নেন। ঢাকা ও যশোরে বিক্ষোভকারী ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পূর্ব পাকিস্তান মুসলমান ছাত্রলীগের সমন্বয়ক নিয়ামউদ্দিন আহমেদের বরাত দিয়ে ১৩ মার্চ ডন লিখে, পুলিশের অ্যাকশনে প্রায় ২০০ জন আহত হয়েছিলেন, যার মধ্যে ১৯ জনের অবস্থা ছিল খুবই গুরুতর। প্রায় ৯০০ জনের মতো আটক করা হয়। পরে অবশ্য অনেককেই ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এদের মধ্যে ৬৯ জনকে জেল কাস্টডিতে পাঠানো হয়। এ সময় শামসুল হক, অলি আহাদ, শেখ মুজিবুর রহমান, শওকত আলীসহ অনেকেই গ্রেপ্তার হন।

 ১১ মার্চের ওই ধর্মঘটে বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হকও আহত হয়েছিলেন। আহত হওয়ার পরও তিনি সেদিন গ্রেপ্তারকৃত ছাত্র-জনতাকে ছাড়িয়ে আনার প্রচেষ্টায় জেলগেটে গিয়েছিলেন। আহতদের দেখতে তিনি হাসপাতালেও গিয়েছিলেন। ১১ মার্চ ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনা এ কে ফজলুল হককে এতটাই উত্তেজিত করেছিল যে, একটি বিবৃতি দিয়ে তিনি ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সব সদস্যকে আহ্বান জানিয়েছিলেন—১১ মার্চে পুলিশ ছাত্রদের ওপর যে সহিংসতা চালিয়েছে, সে ব্যাপারে এসেম্বলিতে যদি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তাহলে যেন সবাই লেজিসলেটিভ কাউন্সিল থেকে পদত্যাগ করেন। ফজলুল হক বিবৃতিতে বলেন, ছাত্রদের ওপর পুলিশের হামলা ছিল খুবই অন্যায়। তিনি বলেন, এটা বললেও ভুল হবে যে ছাত্ররা ছিল নিরস্ত্র। ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তো দূরের কথা, পেন্সিলও ছিল না। তারা শুধু স্লোগান দিচ্ছিল (ডন, ১৫ মার্চ ১৯৪৮)।

তবে সরকারি প্রেসনোটে ১১ মার্চের ধর্মঘটের নিন্দা জানানো হয়। সব পত্রিকাই এ প্রেসনোট ছাপে। সরকারি প্রেসনোটের ভাষাটি ছিল এ রকম : ‘১১ মার্চ কিছু অন্তর্ঘাতী মানুষ এবং ছাত্রদের একটি অংশ ধর্মঘট ডাকে। শহরের সব মুসলমান ও হিন্দুর একটি বড় অংশ ধর্মঘট প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং তারা নিজেদের এর সাথে জড়ায়নি। কিছু হিন্দু দোকান সেদিন বন্ধ ছিল। শহরে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আদালতে কাজকর্মও ছিল স্বাভাবিক। তবে রমনা এলাকায় পিকেটাররা অফিসগামীদের অফিসে যেতে বাধা দেওয়ায় সফল হন। ছাত্ররা ছোট ছোট দলে সচিবালয়, হাইকোর্ট এবং অন্যান্য সরকারি অফিসে পিকেটিংয়ের উদ্দেশ্যে জড়ো হচ্ছিল। পুলিশ অনেককেই বুঝিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছিল। কিন্তু কেউ কেউ পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়তে থাকে এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। পুলিশ তখন লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়। এ সময় পুলিশ ৬৫ জনকে আটক করে। পুলিশ দুই রাউন্ড গুলি ছুড়েছিল এবং এতে ১৪ জন আহত হয়েছিল’ (ডন, ১২ মার্চ ১৯৪৮)। 

এই সাধারণ ধর্মঘট এবং ধর্মঘটে পুলিশি হামলা পূর্ব বাংলায় টানটান অবস্থা সৃষ্টি করেছিল। আজাদ ও পাকিস্তান অবজারভার সরকারি প্রেসনোটের তীব্র নিন্দা জানিয়েছিল। ১১ মার্চ ছাত্র ও জনতার আন্দোলনে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠেছিল। ১৫ মার্চ দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ছিল বন্ধ। আর সরকারি অফিসে উপস্থিতিও ছিল খুব কম। ওই দিন ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিউনিসিপ্যালিটিতে সব ধরনের সভা-সমাবেশের ওপর ১৪৪ ধারা জারি করেছিলেন। সরকারঘেঁষা ডন পত্রিকা ধর্মঘটকে নিন্দা জানিয়ে ১৪ মার্চ একটি সম্পাদকীয় ছেপেছিল। সম্পাদকীয়টিতে তারা ধর্মঘটের তীব্র সমালোচনা করে এবং সরকারকে কঠোরহস্তে ধর্মঘট দমন করার পরামর্শ দেয়। খাজা নাজিমউদ্দিন ১১ মার্চের ধর্মঘটকে নিন্দা জানিয়ে একে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য ধূম্রজাল হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। খাজা নাজিমউদ্দিন আন্দোলনকারীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, সরকার আর বিশৃঙ্খলা সহ্য করবে না। মিলিয়ন মিলিয়ন শান্তিপ্রিয় মানুষের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখবে (এ বক্তব্য পরে ১৮ মার্চ, ১৯৪৮ সালের ডন পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল)।

তবে ১৫ মার্চ থেকেই এসএলসিএ এবং খাজা নাজিমউদ্দিনের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছিল। দুই পক্ষই একটি সমঝোতায় যেতে চাইছিল। খাজা নাজিমউদ্দিন চাইছিলেন, পাকিস্তানের জনক কায়েদে আজম জিন্নাহ ১৯ মার্চ পূর্ব বাংলায় আসার আগেই যেন উত্তেজনা প্রশমিত হয়। সে জন্য শেষ পর্যন্ত তিনি এসএলসিএর দাবিদাওয়া মেনে নিতে সম্মত হয়েছিলেন। খাজা নাজিমউদ্দিন এসএলসিএর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এও মেনে নেন যে, ভাষার জন্য বিক্ষোভ অন্তর্ঘাতীদের ও ভারতীয় দোসরদের কার্যকলাপ নয়। আটককৃত সবাইকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সংবাদপত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ছাড়া খাজা নাজিমউদ্দিন এসএলসিএর নেতৃবৃন্দকে আরও আশ্বাস দেন, বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এসেম্বলিতে প্রস্তাব করবেন (ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এসেম্বলি প্রসিডিংস, খণ্ড-১, নং-১)। ১১ মার্চ ধর্মঘট থেকে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

 আসলে ভেতরে ভেতরে খাজা নাজিমউদ্দিনের পরিকল্পনা ছিল অন্য। তার দুরভিসন্ধি বোঝা যায়, যখন এপ্রিল মাসে তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলেন এবং বাংলাকে অফিশিয়াল ও অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব উত্থাপন করেননি। এসএলসির সঙ্গে খাজা নাজিমউদ্দিনের এই আপস ছিল স্বল্প সময়ের জন্য।

খাজা নাজিমউদ্দিন ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাসহ পাকিস্তানি সব নেতাই ভাষা-প্রশ্নটি, আরও বৃহৎভাবে বলতে গেলে সাংস্কৃতিক প্রশ্নটি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাঁদের এ ব্যর্থতার পেছনে অনেক কারণও ছিল। ভারতীয় উপমহাদেশ ভাগ হয়ে গঠিত হওয়া উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের পেছনে ছিল অনেক কষ্টকর স্মৃতি। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল দেশ বিভাগের জন্য, ধর্ষিত হওয়া নারীর সংখ্যা ছিল অগণিত এবং কয়েক মিলিয়ন মানুষকে তাদের জন্মভূমি ত্যাগ করে উদ্বাস্তু হতে হয়েছিল। জ্ঞানেন্দ্র পান্ডে তাঁর রিমেমবারিং পার্টিশন, ভায়োলেন্স, ন্যাশনালিজম অ্যান্ড হিস্ট্রি ইন ইন্ডিয়া (২০০১) এবং ভাজিরা ফাজিলা-ইয়াকুবালি জামিনদার তাঁর দ্য লং পার্টিশন অ্যান্ড দ্য মেকিং অব সাউথ এশিয়া : রিফিউজিস, বাউন্ডারিজ অ্যান্ড হিস্ট্রিজ (২০০৭) গ্রন্থে এই যৌথ দুঃসহ স্মৃতি এবং দুর্দশার কথা চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। এভাবে জন্মলগ্ন থেকেই দুই দেশের মধ্যে একটি বৈরী সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। দুই রাষ্ট্রই একে অপরকে সন্দেহের চোখে দেখত। তাই বাঙালিরা নিজেদের প্রাণের দাবিকেও পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ এবং তাদের অনুসারীরা ভারতের ষড়যন্ত্র হিসেবে সন্দেহ করে বারবার নিন্দা জানিয়েছিল। এ সন্দেহ আসলে তৈরি হয়েছিল উত্তর-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়ার সংকট থেকেই। পাকিস্তানের জনক জিন্নাহও কঠোর ভাষায় বাঙালিদের ভাষার দাবিকে নিন্দা জানিয়েছিলেন। নির্যাতন চালিয়েছিলেন আন্দোলনকারীদের ওপর। বাংলা ভাষাকে অফিশিয়াল এবং এসেম্বলির ভাষা করার দাবি তিনি দেখেছিলেন প্রাদেশিকীকরণের বিষ হিসেবে। তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তান এক, তাই এর রাষ্ট্রভাষাও হবে একটি। ভাষার দাবিতে আন্দোলনকারীদের তিনি ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে উল্লেখ করেন। ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দান ও ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে ভাষা-প্রশ্নে তার বক্তব্যে পূর্ব বাংলার জনগণ ভীষণ হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন (ডন, ২২ ও ২৫ মার্চ ১৯৪৮)।     

আজিজুল রাসেল : শিক্ষক, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, বাংলাদেশ।