অভিমত

পাহাড়ে ফের মৃত্যু

Looks like you've blocked notifications!

গত বছর এমন বর্ষণমুখর দিনে রাঙামাটির পাহাড়ে পাহাড়ে শুরু হয়েছিল স্বজন হারাদের কান্না। একে একে ১৫২ জনের প্রাণ নিয়ে থামে সেই কান্না। তারপর হিসাব করতে বসে, কার কী দোষ? দোষীর তালিকায় আসে অনেকের নাম-সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় ব্যবসায়ী, লোভী ভূমিদস্যু, পাহাড় কাটা দস্যুসহ অনেকের নাম। বলা হয়েছিল, ব্যবস্থা নেওয়া হবে; বলা হয়েছিল, পাহাড় নিরাপদ করা হবে; পাহাড়ের জীবনগুলো নিরাপদ করা হবে। কিন্তু কিছুই করা হয়নি। কোনো ব্যবস্থা সাধারণ মানুষ চোখে দেখেনি। ফলে যা হওয়ার তা আবারও হয়েছে। ঘটনার ঠিক এক বছর পর আবারও ঠিক একই দিনে হয়েছে মৃত্যু। গুনে গুনে ১১টি প্রাণ নিয়েছে নানাভাবে অত্যাচারিত, জর্জরিত পাহাড়। এখন আকাশের জল আর পাহাড়ের মানুষের চোখের জল সেখানে একাকার হয়ে যাচ্ছে।

পত্রিকায় খবর হয়েছে, গত বছরের বিপর্যয়ের পর পাহাড় ধসের কারণ অনুসন্ধান ও ভবিষ্যৎ করণীয় ঠিক করতে যে কমিটি করা হয়েছিল, তাদের কোনো সুপারিশই বাস্তবায়ন করা হয়নি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, সম্ভাব্য ভাঙনপ্রবণ এলাকায় পাহাড়ের ধারে প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ। এ ধরনের কোনো কাজ সরকারের তরফে করতে দেখেনি স্থানীয়রা। সুপারিশ ছিল পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। কিন্তু বছরের বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে সংবাদ হয়েছে, কীভাবে ভূমিদস্যুরা কেটে কেটে সাবাড় করছে পাহাড়। পাহাড়ের একটি প্রাণ আছে, এটা মানতেই নারাজ অনেকে। তাকে কাটো, খুঁড়ো, গাছ কেটে তার বুক খালি করো, সবুজ জমিন লাল করো—যা ইচ্ছা তা করো, পাহাড়ের তা গায়ে লাগে না, তার কোনো ব্যথা নেই, তার বুকে কষ্ট নেই।

পাহাড় যারা কাটে, তারা বরং কিছুটা সম্ভ্রান্ত নাগরিক, কিছুটা বুঝদার মানুষ। মানুষ তো মরবেই, কিছু মানুষ মরলে এত হুড়োহুড়ির কী আছে? পাহাড় ব্যবস্থাপনা কি একদিনের কাজ? মৃত্যু থামানো কি এত সহজ?

এ দেশে কী যে সহজ আর কী যে কঠিন, এটা বোঝাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষা আসবে, টানা বৃষ্টিপাত হবে, তাতে পাহাড়ের মাটি নরম হবে, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো ধসে পড়বে, এতে প্রাণহানির আশঙ্কা আছে—এটার মতো সহজ হিসাব কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে না। তাদের কাছে এটা খুব কঠিন হিসাব। কিন্তু ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর, মানুষের জীবন ঝরে যাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া, লাখ টাকা অনুদান দেওয়া, নানামুখী তৎপরতা দেখানো তাদের কাছে সহজ।

প্রিয় কর্তৃপক্ষ, দয়া করে একটু সহজ হোন, সহজ কাজটি সহজভাবে করুন। মানুষকে বাঁচান, পাহাড়কে বাঁচান। মানুষের প্রাণ গেলে আমরা কাঁদি, পাহাড়ের প্রাণ গেলে প্রকৃতি কাঁদে। প্রকৃতি ও মানুষ একে অপরের পরিপূরক। দয়া করে প্রকৃতি বুঝুন, মানুষ বুঝুন।

লেখক : সাংবাদিক, আরটিভি।