নিরাপত্তা

স্বপ্নের বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটি নয়

Looks like you've blocked notifications!

মনটা খারাপ হয়ে গেল হঠাৎ। বিশ্বের নামি সবগুলো দৈনিক ফলাও করে প্রচার করছে আমার দেশের সংবাদ। কিন্তু সে সংবাদ থেকে আমাদের আশাবাদী হওয়ার কিছু নেই। অদ্ভুত এক অবস্থা; ইতালির নাগরিক  চেসারে তাভেলার হত্যাকাণ্ড সরাসরি দুটি বিষয় সামনে নিয়ে এলো।  এক. এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সিরিয়ার জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস জড়িত। দুই. এরপর নিরাপত্তা ইস্যুকে কেন্দ্র করে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর বাতিল হয়ে গেছে। আর বিশ্ব মিডিয়ায় নর্তন-কুর্দন শুরু হয়েছে ‘সোনার বাংলার মাটি, আইএসের জঙ্গিদের ঘাঁটি’। সত্যি বাংলাদেশের জন্য বহির্বিশ্বে এ ধরনের প্রচারণা শুনলে চোখ ভিজে আসতে চায় অশ্রুধারায়। অন্তত যাই হোক, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেক নষ্ট হয়েছে।

অবাক করার বিষয় হলেও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট সফর বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি এ ঘটনার মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদের ইস্যুটি এখন সামনে চলে এলো। এখানে আইএস কিংবা আল-কায়েদার কোনো শাখা আছে কি না, এটা নিয়ে তর্ক হতেই পারে। বেশ কটি ধর্মভিত্তিক সংগঠনকে এরই মধ্যে জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অভিযোগ তাদের সঙ্গে আল-কায়েদা ও আইএসের যোগাযোগ রয়েছে।

পুরান সব ঘটনার লেজ ধরেই নতুন প্রশ্ন উঠছে চেসারে তাভেলাকে হত্যা করল কারা? কোনো শক্তি কি তাহলে আইএসের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে না তো? এতে করে আমাদের দেশের যে ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে তার কী হবে? যাই হোক আমাদের জাতীয় স্বার্থ সামনে রেখে এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন। অন্তত প্রথমেই বলে রাখা দরকার, যে পর্যবেক্ষণ সংস্থার মাধ্যমে (SITE Search for International Terrorist Entities) আইএস কর্তৃক এ হত্যাকাণ্ডের খবর প্রচারিত হয়েছে, তা পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য সূত্র নয়।

আমরা জানি, কাতারভিত্তিক আল-জাজিরা আল-কায়েদা নেতা আইমান আল জাওয়াহিরির অডিও-ভিডিও টেপ মাঝেমধ্যে আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রকাশ করত। সেদিক থেকে ধরলে আইএস কখনো এভাবে তাদের বক্তব্য প্রকাশ করেনি।

গুগল সার্চ করলে আমরা খুব সহজেই বুঝি SITE- মূলত কাদের প্রতিষ্ঠান। অন্তত এটুকু বলে রাখা ভালো, ইহুদি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ব্যক্তি রিটা কাটজও (Rita Katz) একজন ইহুদি এবং অভিযোগ রয়েছে একসময় তিনি ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে কাজ করতেন। অদ্ভুত হলেও সত্য, যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানদের সংগঠনগুলো অতীতে তার বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল। তাই SITE-এ বাংলাদেশ নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়, তখন চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করার সুযোগ নেই, বরং এর থেকে জন্ম হতে পারে নানা প্রশ্নের। তাই বাংলাদেশের মতো দেশে মাঝে মধ্যে দু-একজন জঙ্গির গ্রেফতার সংবাদ পুলিশ বা র‌্যাবের মাধ্যমে সংবাদপত্রে বেশ চটকদার ভঙ্গিমায় প্রকাশ পায়; তবে তাদের সঙ্গে বৈশ্বিক জঙ্গিদের কতটুকু মেলানো যাবে সেটা পুরোপুরি প্রশ্নবিদ্ধ।

তাভেলার মৃত্যুতে প্রচারণা যাই হোক না কেন, ক্ষতি হয়ে গেছে বাংলাদেশের। অন্তত আমাদের ক্রিকেট-পাগল মানুষ পুরোপুরি হতাশ। কয়েকটি ফেসবুক পেইজ থেকে ঘোষণাও দেখলাম তারা অস্ট্রেলিয়া টিমকে বাংলাদেশে আসার আবেদন জানানো শুরু করবেন মিরপুর হোম অব ক্রিকেটের সামনে। আমি তাদের সঙ্গে একমত হয়ে বলতে চাই, আমাদের দেশে ইসলামিক স্টেট বা আল-কায়েদার ঘাঁটি নেই। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে যারা এ ধরনের ‘তত্ত্ব’ উপস্থাপন করেছেন, তাঁরা দেশের শত্রু এবং মিথ্যাবাদী। এ ক্ষেত্রে তাঁরা চাইলে অন্তত যুক্তরাষ্ট্রের Country Report on Terrorism 2014-এ চোখ বোলাতে পারেন। যদি চোখের অসুখ না হয়ে থাকে, তিনি সহজেই বুঝতে পারবেন ২০১৪ সালে বাংলাদেশে কোনো বড় ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেনি। শুরু থেকেই বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে কমিটেড আমাদের বাংলাদেশ কোনো ধরনের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবে না। একটি দুর্ঘটনা হিসেবে বিদেশি নাগরিক তাভেলার হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশকে সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে না। এর সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসকে জড়ানো আর কিছু নয়, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টের এক ভ্রষ্ট উদ্যোগ। এর থেকে উত্তোরণে এখন যত দ্রুত সম্ভব তাভেলার হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য খুঁজে দেখা প্রয়োজন। আমরা চাই না আমাদের প্রিয় স্বদেশকে কেউ সন্ত্রাসবাদের আস্তানা ভেবে বিভ্রান্তির সাগরে নিমজ্জিত থাক।

লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক।