নিরাপত্তা

জঙ্গিবাদ না ক্রিকেট-রাজনীতি?

Looks like you've blocked notifications!

ইতালির নাগরিক চেসারে তাভেলা হত্যার রেশ না কাটতেই হোশি কুনিও নাম এক জাপানি নাগরিককে গুলি করে হত্যার সঙ্গে জঙ্গিবাদ অথবা ক্রিকেট-রাজনীতির কি কোনো সম্পর্ক আছে?

হয়তো নেই, হয়তো আছে। কেননা, চেসারে তাভেলা যেদিন (২৮ সেপ্টেম্বর) খুন হয়েছেন, সেদিনই বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিরা। আর এর পাঁচদিনের মাথায় ৩ অক্টোবর খুন হন হোশি কুনিও। খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘এ দুই বিদেশি খুন এবং অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিমের বাংলাদেশ সফর স্থগিত করা একই সুতোয় গাঁথা।’

সবশেষ রোববার দুপুরে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দাবি করেছেন, দুই বিদেশি নাগরিক হত্যা পরিকল্পিত এবং এখানে বিএনপি-জামায়াতের মদদ আছে। তবে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আইএসএর সংশ্লিষ্টরা আছে কি না, তা তদন্ত করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকেও অনুসন্ধানের আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, তখন তার কিছু রিঅ্যাকশন তো হবেই। তিনি বলেন, একটা গ্রুপ চাচ্ছে দেশকে অস্থিতিশীল করতে। কারণ দেশে গণতান্ত্রিক ধারবাহিকতা বজায় রয়েছে, এটা অনেকের পছন্দ না।

তবে অস্ট্রেলিয়া সফর বাতিলের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরে না আসা মা-পুতের ষড়যন্ত্র।’ মা-পুত বলতে তিনি বুঝিয়েছেন সাবেক বিরোধীদলীয় নেত্রী ও তাঁর ছেলেকে। আইনন্ত্রী বলেন, ‘ক্রিকেট ও দেশের উন্নয়ন যারা সহ্য করছে না, তাদের ষড়যন্ত্রের কারণেই অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল আপাতত বাংলাদেশে আসছে না।’ কিন্তু অস্ট্রেলিয়া টিম বাংলাদেশে না এলে বিএনপির কী লাভ, আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে তা স্পষ্ট নয়। কেননা বিরোধীপক্ষ হিসেবে সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা বিএনপি করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ক্রিকেটে যখন বাংলাদেশ কাউকে হারায়, বিএনপি কখনো তার সমালোচনা করেছে, এমন প্রমাণ নেই। বরং বাংলাদেশে সম্ভবত ক্রিকেটই একমাত্র ইস্যু যেখানে সব দল, ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষের অনুভূতি অভিন্ন।

ধারণা ও ধরন

ধারণা খুব ভয়ংকর জিনিস। তারপরও যখন কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটে, তখন কিছু ধারণা এবং খুনের ধরনের ওপর ভিত্তি করেই গোয়েন্দারা তদন্ত করেন। কখনো তাদের সেই ধারণা সঠিক হয়। কখনো আবার এমন কিছু বেরিয়ে আসে, যা হয়তো তাদের ধারণায়ও থাকে না।

যেহেতু ধারণার ওপর ভিত্তি করেই তদন্ত এগোয়, তাই অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর স্থগিতের সঙ্গে দুই বিদেশি নাগরিকের হত্যার কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা নিশ্চয়ই গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছেন। তবে পরপর দুজন বিদেশি খুনের ঘটনা দেশে বিরল। আবার যখন এই ঘটনা ঘটল, ওই সময়ে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন। সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। সুতরাং, যদি দেশে সত্যি সত্যিই জঙ্গিদের বড় ধরনের কোনো নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা থাকে, কোনো মহল যদি দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে দুই বিদেশি খুনের ঘটনা এর একটি রিহারসেল হতে পারে। আবার বাংলাদেশকে নিয়ে যদি আন্তর্জাতিক কোনো চক্রান্ত থাকে, তাহলে সেটির অংশ হিসেবেও ওই দুই বিদেশিকে খুন করা হতে পারে।

প্রসঙ্গ জঙ্গিবাদ

বাংলাদেশে সম্প্রতি যে প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে, তা হলো প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পরেই এর সঙ্গে জঙ্গিবাদকে টেনে আনা হয়। ব্লগারদের হত্যার পরে কোনো না কোনো সংগঠন এর দায় স্বীকার করলেও চেসারে তাভেলা হত্যার পরে আইএস তথাকথিত দায় স্বীকার করে যে বিবৃতি দিয়েছে, তার সত্যতা প্রমাণিত হয়নি। জাপানি নাগরিককে হত্যার পরও আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে (http://www.reuters.com/article/2015/10/03/bangladesh-japan-killings-idUS...) বলা হয়েছে, ‘এক টুইটার বার্তায় আইএস এই হত্যার দায় স্বীকার করেছে। শুধু তাই নয়, তারা এ রকম আরো হামলার হুমকি দিয়ে বলেছে, আইএসবিরোধী দেশগুলোর নাগরিকরা কোনো মুসলিম দেশে নিরাপদে থাকবে না। এমনকি তারা জীবিক নির্বাহও করতে পারবে না।’

উল্লেখ করা যেতে পারে, সাম্প্রতিক ব্লগার হত্যার সঙ্গে ওই দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার ধরনে পার্থক্য আছে। ব্লগারদের হত্যায় ব্যবহার করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র। আর বিদেশিদের মারা হয়েছে গুলিতে। সুতরাং ব্লগারদের হত্যার পেছনে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততার বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত হলেও বিদেশিদের হত্যার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা এখনো প্রমাণিত নয়।

অনেক দিন ধরেই বলা হচ্ছিল যে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে। বিশেষ করে আফগানিস্তানে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ থেকে অনেকে গিয়েছিলেন যাঁরা পরে দেশে ফেরত এসেছিলেন ‘মুজাহিদ’ হিসেবে; তাঁদের অনেকেই শামিল হয়েছিলেন বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের শামিয়ানায়।

আল-কায়েদার সঙ্গেও আফগান ফেরত ৮৪ মুজাহিদের যোগাযোগ আছে বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছিলেন। শোনা যায়, তারা আফগানিস্তানে যুদ্ধ করার সময় তালেবান নেতা মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেন। মুজাহিদরা বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্র বানানোর জন্য প্রকাশ্য মিছিল-মিটিংও করেন। এরপর আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের আবির্ভাব ঘটে। কিছু মুজাহিদ ওই সংগঠনে আশ্রয় নিয়েছে বলেও শোনা যায়।

বিগত জোট সরকারের আমলে দেশের উত্তরাঞ্চলে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে উগ্রবাদী সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ-জেএমবির উত্থানকেও শুরুর দিকে তৎকালীন সরকার পাত্তা দেয়নি। বরং একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী তখন বলেছিলেন, ‘দেশে কোনো জঙ্গি নেই; সব মিডিয়ার সৃষ্টি।’ অথচ দেখা গেল দেশর ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালাল জঙ্গিরা।

এরপর শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ  জেএমবির আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল, খালেদ সাইফুল্লাহ ও ইফতেখার মামুনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ মধ্যরাতে। পরবর্তী সময়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসাদুল ইসলাম আরিফকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছয় জঙ্গিকে পাবনা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও কাশিমপুর কারাগারে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

ছয় জঙ্গির মধ্যে শায়খ রহমানকে কুমিল্লা কারাগারে ও বাংলা ভাইকে ময়মনসিংহ কারাগারে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ফাঁসি কবে দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে ওই সময়ের কারা কর্তৃপক্ষ বেশ নীরবতা পালন করে। তারা দিন-তারিখ প্রকাশ করেনি। আজ হচ্ছে, কাল হচ্ছে এমনভাবেই সময় কাটছিল। হঠাৎ ২৮ মার্চ রাতে ছয় জঙ্গিকে সঙ্গোপনে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেশের চারটি কারাগারে। ফাঁসি হওয়ার পরদিন সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে সবাই জানতে পারেন। ফাঁসির কার্যটি এমনভাবে সমাধা করা হয়েছিল যে ফাঁসিসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ছাড়া কারাগারের অনেক কর্মকর্তা জানতে পারেননি। পরে ওই সময়কার ডিআইজি প্রিজন মেজর শামসুল হায়দার সিদ্দিকী জানিয়েছিলেন, অধিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই ফাঁসির দিনক্ষণ কাউকে জানতে দেওয়া হয়নি।

বর্তমান সরকারও বাংলাদেশে আল-কায়েদা বা আইএসের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। জঙ্গিবাদের মতো একটা সর্ববিধ্বংসী ইস্যুতেও সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে অনৈক্যের সুযোগই হয়তো নিচ্ছে তৃতীয় পক্ষ। সবশেষ জাপানি নাগরিক হত্যার পর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা গণমাধ্যমে বলেছেন, একটি মহল বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র প্রমাণের ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র প্রমাণ করলে কার কী লাভ, সেটিও বিশ্লেষণের দাবি রাখে। আবার যেহেতু রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া জঙ্গিবাদ বিকশিত হয় না, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদকে কোন কোন দল মদদ দিয়েছে, কীভাবে দিয়েছে, তারও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার। এখানে ব্লেম গেমের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু সেই নিরপেক্ষ তদন্তটা করবে কে?

অস্ট্রেলিয়ায় খুন

বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে অস্ট্রেলিয়া যখন ক্রিকেট সিরিজ স্থগিত করল, ঠিক তখনই দেশটির অন্যতম বড় শহর সিডনিতে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। সিডনির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পারামাত্তার এনএসডব্লিউ পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে এক অস্ত্রধারীর গুলিতে নিহত হয়েছেন দুজন। ২ অক্টোবর স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। এই ঘটনার পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, অস্ট্রেলিয়া কি এখন সিডনিওতে ক্রিকেট খেলা বন্ধ করে দেবে?

দুর্ঘটনা প্রতিনিয়তই সব দেশে ঘটে। সিডনির ওই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে আমেরিকার Umpqua Community College-এ ১০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশে যদি এ রকম ঘটনা ঘটত, তাহলে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া কী হতো, তা আন্দাজ করা কঠিন নয়। হয়তো অনেক দেশ ঢাকা থেকে তাদের দূতাবাসই সরিয়ে নিত।

ক্ষতিপূরণ চাইবে বিসিবি

অস্ট্রেলিয়া যখন বাংলাদেশ সফর স্থগিত করল, সোশ্যাল মিডিয়ায় তখনই দাবি উঠেছে যে, যদি শেষ অবধি অস্ট্রেলিয়া ট্যুর বাতিল হয়েই যায়, তাহলে বাংলাদেশের উচিত হবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া। কেননা একটা সিরিজ আয়োজনের জন্য বিসিবিকে অনেক পয়সা খরচ করতে হয়। অনেক প্রস্তুতি নিতে হয়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার দেশের ভাবমূর্তি। সুতরাং নিরাপত্তার অজুহাতে তারা বাংলাদেশ সফর বাতিল করলে অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার কাছে এর ক্ষতিপূরণ চাইতে হবে। এরই মধ্যে ক্রিকেট বোর্ডের দুই পরিচালক মাহবুব আনাম ও আকরাম খান ক্ষতিপূরণ চাওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর আগে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বিষয়টি নিয়ে আইসিসিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু আইসিসি এই ইস্যুতে শেষ পর্যন্ত কী করতে পারবে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন ওই দুই পরিচালক।

মনে রাখা দরকার, আইসিসির সদস্য দেশ হিসেবে এই আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশ পয়সা দেয়। ক্রিকেট খেলা দেখতে বাংলাদেশের স্টেডিয়ামগুলোয় যে পরিমাণ দর্শকসমাগম হয়, তা অধিকাংশ দেশেই বিরল। সুতরাং ক্রিকেটের বিশ্বায়ন এবং ক্রিকেটবাণিজ্য প্রসারেও বাংলাদেশের অবদান যথেষ্ট।

ক্রিকেট-রাজনীতির কুতর্ক

ক্রিকেটে এখন পরাশক্তি হওয়ার পথে বাংলাদেশ। ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম দুই পরাশক্তি ভারত-পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করার পরে সদ্য সমাপ্ত ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতের কাছে বাংলাদেশের প্রশ্নবিদ্ধ হারের বিষয়টি বেশ জোরেশোরে সামনে এসেছে এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা এটি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন যে, ওই খেলায় বাংলাদেশকে জোর করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে, ক্রিকেটে ভারতের তথা পুরো আইসিসির কোটি ডলারের বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার স্বার্থে। কেননা ক্রিকেট এখন আর শুধু খেলাই নয়; বরং ক্রিকেট এখন কোটি ডলারের বাণিজ্য।

সুতরাং টিম অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে এসে ভারত-পাকিস্তানের মতো নাস্তানাবুদ হলে ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের যে অবস্থান তৈরি হতো, তা নিয়ে অনেকের মনেই উদ্বেগ থাকা স্বাভাবিক। ক্রিকেট পরাশক্তিরা হয়তো চায় না দক্ষিণ এশিয়ায় আর কোনো শ্রীলঙ্কার জন্ম হোক। তাই যদি হয়, তাহলে যেকোনো উপায়ে টিম অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর ঠেকানো অনেকেরই দায়িত্বের মধ্যে পড়েছিল।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও যদি অস্ট্রেলিয়ার এই সফল বাতিল হতো, তাহলেও একটা ‍যুক্তি থাকত। কিন্তু তারা এমন একসময় নিরাপত্তার অজুহাত ‍তুলল, যখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। ফলে দোহাই দেওয়া হলো জঙ্গি হামলার আশঙ্কা। আর এটি যেহেতু এখন আন্তর্জাতিক ইস্যু, তাই সহজেই বিষয়টা বিশ্ববাসীকে গেলানো সম্ভব। এই সন্দেহ আরো বেশি প্রকট হয়, যখন এক ইতালিয়ান নাগরিককে খুন করা হলো সেই সময়, যখন নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর করছিলেন। আবার এর রেশ না কাটতেই খুন হলেন এক জাপানি। অতএব এ দুই বিদেশি নাগরিকের খুনের সঙ্গে ক্রিকেট-রাজনীতির কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে যদি সত্যি সত্যিই এটি ক্রিকেট-রাজনীতির অংশ হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের মনে রাখতে হবে, সেই সত্য কোনোদিনই প্রকাশ পাবে না।

বাস্তবতা হলো, ক্রিকেট এখন আর কেবল খেলা নয়; এটি এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতিরও অংশ। সুতরাং মাঠের খেলায় মাশরাফিরা কেমন বল করলেন আর সৌম্যরা কেমন পেটালেন, তার সঙ্গে এটিও ‍গুরুত্বপূর্ণ যে, ক্রিকেট-রাজনীতির খেলায় আমাদের ক্রিকেটবোর্ড তথা সরকার বাহাদুর কেমন খেললেন, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের নেগেটিভ ব্র্যান্ডিং রোধ

তবে অস্ট্রেলিয়ার সফর স্থগিত করা যদি ক্রিকেট-রাজনীতির অংশ না হয়, যদি সত্যি সত্যিই তারা বাংলাদেশে তাদের খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিয়ে যৌক্তিক কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে থাকে, যদি ওই দুই বিদেশি নাগরিককে হত্যা বড় কোনো পরিকল্পনার অংশ হয়ে থাকে, তাহলে সরকারের দায়িত্ব দ্রুত এই রহস্যের উন্মোচন করা। বিশেষ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চেসারে তাভেলা ও হোশি কুনিওর হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করা। আর এ বিচারের মাধ্যমে পুরো বিশ্বে বাংলাদেশর যে নেগেটিভ ভাবমূর্তি তা পজিটিভ হবে, সঙ্গে সঙ্গে বিদেশিদের জন্য নিরাপদ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ পজিটিভ ব্র্যান্ডিং হবে, আর এ থেকে আমরা কিছুটা দায়মুক্তি পেতে পারি।

লেখক : যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর