গরু একটি রাজনৈতিক প্রাণী!

Looks like you've blocked notifications!

সম্প্রতি ভারতে সোয়াইন ফ্লুর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ে। আর এ জন্য ভাইরাসের রূপান্তরকেই (মিউটেশন) দায়ী করা হয়েছিল। তবে ভারতে এখন যে উদ্বেগ চলছে, তা ওই রূপান্তরের চেয়ে ভয়াবহ। ভারত এখন নতুন রাজনৈতিক প্রাণী পেয়েছে। এর নাম গরু!

ভারতের গরুর মাংস নিয়ে আসলে হচ্ছেটা কি? এটা কি আসলেই ক্ষমতার প্রদর্শন? ডানপন্থী হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ভাবাদর্শ ও দুই মেরুর বাঁকা রাজনীতি প্রাণীটিকে ব্যবহার করছে না তো?

বর্তমান চিত্রটা বুঝতে রাজনৈতিক বক্তব্যগুলো ব্যবহার করা হবে ভাষাতাত্ত্বিক ফ্যাসিবাদ। ব্যাপক বিজয়ের পর ক্ষমতাসীন বিজেপি হিন্দুত্ববাদী আদর্শ ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিনিময়ে উপক্ষো করা হচ্ছে অন্য মতাবলম্বী ও আদর্শকে।

রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) লেখা কলামে বলা হয়েছে, ‘যে গরু জবাই করবে তাকে হত্যা করার নির্দেশ আছে বেদে। গরু হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য বড় ইস্যু। আমাদের অধিকাংশের জন্য বিষয়টা জীবন ও মৃত্যুর প্রশ্ন।’

গরু হত্যা বিষয়ে ধর্মীয় বিচারের সঙ্গে ঐতিহাসিক কোনো মিল পাওয়া যায় না।

প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে বলা আছে, গোপাথা ব্রাহ্মণ ২১ ধরনের উৎসর্গের কথা বলেছে। এর মধ্যে আছে প্রাণী উৎসর্গ করার কথাও। এক এক দেবতার জন্য এক এক ধরনের প্রাণী উৎসর্গ করার উল্লেখ আছে। দেবতা ইন্দ্রের জন্য উৎসর্গ হতো ষাঁড়ের মাংস। মারুত ও অশ্বিনরাও গরু উৎসর্গ করত। অশ্বমেধ এবং রাজসুয়া সবাই প্রাণী উৎসর্গ করত। অশ্বমেধায় ছয়শোরও বেশি প্রাণী হত্যা করা হয়েছিল আর ২১টি গরু উৎসর্গ করে উৎসব করা হয়েছিল।

হিন্দু সম্প্রদায়কে আবারও বেদ পড়তে হবে। যদি বৈদিক যুগে গরু উৎসর্গ করা যায়, তবে এখন কেন নিষিদ্ধ? বর্তমানে দুই মেরুর রাজনীতিতে দোল খাচ্ছে গরুর ভূমিকা।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর ভারতে সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন বেড়েছে ২৪ শতাংশ এবং এ ধরনের ঘটনায় ৬৫ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি দাদরিতে গরু জবাইয়ের কারণে এক মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে। বল্লবগড়ে মসজিদ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অল্প কিছু ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরই মে মাস পর্যন্ত ২৮৭টি সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর শিকার হয়েছে খ্রিস্টান ও মুসলমানরা। এসব ব্যাপারে ক্ষমতাসীন বিজেপির ভূমিকা হতাশাজনক।

ধর্মীয় ভাবাদর্শ প্রচারের মাধ্যমে রাজনৈতিক চিহ্ন হিসেবে গরুকে দেখানো হচ্ছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার বাঁকানো ভাবাদর্শ দিয়ে গরুর অপব্যবহার করা হয়েছে।

যদি অবস্থার পরিবর্তন না করা হয়, যদি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও অতিরিক্ত কিছু করার ক্ষেত্রে সরকার বাধা না দেয়, তবে দেশটির জন্য আগামীতে করুণ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।

কাউন্টারকারেন্টস ডট অর্গ-এ প্রকাশিত পারুল বর্মার লেখা অবলম্বনে