ঈদে বাড়ি যাওয়ার আগে ভাবুন

Looks like you've blocked notifications!

মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসব দুই ঈদ। তবে ঈদুল আজহায় উৎসবমুখরতা বেশি, কারণ ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির বিষয় থাকে। ঈদ এলেই ঢাকায় আটকে পড়া মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে চায়। তবে এবারের প্রেক্ষাপট  সম্পূর্ণ আলাদা। এবার দেশবাসী ডেঙ্গু নামে ভয়াবহ এক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। সবাই মিলে সাবধানে এই বিপর্যয় সামাল দিতে হবে। তাই এবারের বাড়ি যাওয়ার বিষয়টি অন্যভাবে ভাবতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয়, এবার বাড়ি না গিয়ে ঢাকায় ঈদ করতে পারলে। ঢাকায় পরিচিত পরিবেশ, চারপাশ পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ রেখে সবাইকে নিয়ে আনন্দে ঈদ উদযাপন করুন।

ঢাকার বাইরে যেতে হলে বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে বা বিমানে লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে। এই পথের পুরোটাই তো আপনার পক্ষে নিরাপদ রাখা সম্ভব নয়। আবার বাড়ি গিয়ে অল্প সময়ের জন্য যেখানে থাকবেন, সেটিও এই সময়ের মধ্যে পুরোপুরি নিরাপদ করতে পারবেন না। তাই সবচেয়ে ভালো, এই বিপর্যয়ের সময়ে বাড়ি না যাওয়া। তারপরও যদি যেতেই হয়, ফুলহাতা শার্ট, মোজা পরে যাবেন। নারীরাও এমন পোশাক পরবেন, যাতে মশা আপনার নাগাল না পায়। সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকবেন শিশুদের নিয়ে। যাত্রাপথে বাসে, ট্রেনে বা লঞ্চে আপনার আশপাশে অ্যারোসল জাতীয় ওষুধ স্প্রে করে নেবেন। বাড়িতে গিয়ে মশা থাকুক আর না থাকুক অবশ্যই মশারি ব্যবহার করবেন।

আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত হন বা ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠে থাকেন, তাহলে অবশ্যই বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিন। প্রথমত, ডেঙ্গুর জীবাণু  শরীরে নিয়ে গিয়ে আপনার গ্রামকেও কিন্তু আপনি ডেঙ্গুর ঝুঁকির আওতায় নিয়ে এলেন। দ্বিতীয়ত, গ্রামে হঠাৎ জরুরি চিকিৎসা লাগলে কিন্তু আপনি পাবেন না। তৃতীয়ত, জ্বর সারলেও কিন্তু ডেঙ্গুর বিপদ সারে না।

তারপরও যদি আপনাকে বাড়ি যেতেই হয়, তবে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন। ঢাকার যে বাসাটি আপনি ফেলে যাচ্ছেন, ফেরার পরও যাতে সেটি নিরাপদ থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ সময়ের সতর্কতাগুলো, যেমন গ্যাসের চুলা বন্ধ করা, দরজা-জানালা বন্ধ করা, বৈদ্যুতিক লাইন চেক করা, বাসায় তালা দেওয়া; এগুলো তো আছেই, সঙ্গে এবার ডেঙ্গু সতর্কতাও জরুরি। বাথরুমের হাই কমোড বা ফ্ল্যাট কমোড ঢেকে যাবেন। ফিরে এসে একাধিকবার ফ্ল্যাশ করে বা পর্যাপ্ত পানি ঢেলে ব্যবহার করুন। বালতি, বদনা, ড্রাম খালি করে উল্টো করে করে রেখে যান, পানি জমার কোনো সুযোগ যেন না থাকে।

অব্যবহৃত, অপ্রয়োজনীয় জিনিস ফেলে বাসা পরিষ্কার রাখুন। বারান্দা, বাথরুম, কিচেন সব ভালোভাবে চেক করে দেখুন; আপনার অনুপস্থিতিতে যেন কোথাও পানি বা ময়লা জমতে না পারে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার টবের বাগান। বারান্দায় হোক বা ছাদে আপনার প্রিয় বাগানই হতে পারে আপনার বিপদের উৎস। সবচেয়ে ভালো হয়, ঢাকায় থাকছেন, এমন কারো কাছে দিয়ে যাওয়া। নইলে এমন কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যাবেন, যাতে তিনি প্রতিদিন আপনার বাগান পরিচর্যা করতে পারেন, পানি দিতে পারেন বা পানি জমা ঠেকাতে পারেন। ঢাকায় গ্রিন সেভার্স নামে সংগঠন আছে, যারা দিনে এক টাকা হিসেবে গাছের পরিচর্যা করে। তাদের কাছেও দিয়ে যেতে পারেন। তবে আল্লারওয়াস্তে টবের বাগান আল্লার হাওলায় রেখে বাড়ি যাবেন না।

আপনাদের সবার ঈদ আনন্দময় ও নিরাপদে কাটুক।

লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক