নিজস্ব ব্র্যান্ডের ক্রিকেটই হোক বাংলাদেশের অস্ত্র

Looks like you've blocked notifications!

৩-০, ২-১, ২-১, সাদা চোখে নিছক কিছু সংখ্যা। সাধারণ মানুষ এগুলোকে সংখ্যার চেয়ে বেশি কিছু ভাববেই বা কেন! আবার বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এই সংখ্যাগুলো সাম্প্রতিক সাফল্যের এক বৃহত্তর ছবি। যদিও অনেকের স্মৃতির ইনবক্স থেকে সেটা ডিলিটও হয়ে গেছে! হতেই পারে। সারা জীবন মনে রাখার মতো বড় সাফল্য হয়তো এটা না। কারণ পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়, ক্রিকেটের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে স্থায়ী দাগ কাটার মতো বড় ঘটনা নয়। তবে বাংলাদেশের জন্য অন্য অনেক কারণে বড় ঘটনা ছিল। টানা তিনটি বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ আগে কখনো বাংলাদেশ জিতেছে কি? সিরিজ জয়ের কথা বাদ দিন। টানা তিন ম্যাচে তিনটা বড় দলকে কি বাংলাদেশ আগে হারিয়েছে?

না, হারায়নি। সুতরাং ওই সংখ্যাগুলো বাঙালির ক্রিকেট আবেগে রঙের মশালটা অনেক দিন ধরে জ্বালিয়ে রাখার থাকার কথা। হয়তো অনেকের মনে জ্বলছে। তবে ক্রিকেট নিয়ে একটু বেশি ভাবনা-চিন্তা যাঁরা করেন; তাঁদের মনে অন্য একটা বিষয় বেশি দাগ কাটার কথা। কী অসাধারণ ক্রিকেট খেলল বাংলাদেশ! বিশ্বকাপের পর থেকে একের পর এক ওয়ানডে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের মতো দলকে 'বাংলাওয়াশ' করল! একসময় যেটা কল্পনারও অতীত ছিল, সেটাই এখন সত্যাশ্রয়ী ইতিহাস। তবে তার চেয়ে বড় সত্য, এ সময়ে নতুন ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। আর সেই ব্র্যান্ডের নাম, অ্যাটাকিং ক্রিকেট। মোটাদাগে বললে বলতে হবে, মারদাঙ্গা ক্রিকেট। যার একটাই মন্ত্র—হয় মারো, না হয় মরো। হাথুরুসিংহের অধীনে সেই ক্রিকেটই খেলেছে বাংলাদেশ। আর সেই বাংলাদেশের সামনে এসে পড়েছে জিম্বাবুয়ে, তা-ও বাংলাদেশের মাঠে। অবশ্য জিম্বাবুয়ের জন্য এখন ঘরের মাঠ আর পরের মাঠ বলে কিছু আছে কি? ঘরের মাঠে তারা আফগানিস্তানের কাছে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দুটো সিরিজই হেরেছে। তাদের কাছে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই অনেক বড় প্রতিপক্ষ।

সেই প্রতিপক্ষ আরো বড় হয়ে যেতে পারে যদি বাংলাদেশ তাদের নতুন ব্র্যান্ডের ক্রিকেটটা খেলতে শুরু করে। অধিনায়কত্বের নতুন ইনিংসে মাশরাফি অনেক রূপান্তর ঘটিয়েছেন বাংলাদেশ দলে। তাতে অবশ্যই হাথুরুসিংহের ছোঁয়া আছে। মাশরাফি দলটাক নতুনভাবে টিউন করেছেন। যেখানে সবাই এক সুরে বাংলাদেশের জয়গান গাইতে শিখেছেন। মাশরাফির পারফরম্যান্স, ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে খুব একটা প্রশ্ন তোলা যাচ্ছে না; বরং বলতে হচ্ছে, দলে তাঁর উপস্থিতি অন্যদের জন্য এক ধরনের উদ্দীপক।

মাশরাফির এই দলে আরো একটা ইতিবাচক উপাদান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। জায়গার জন্য স্বাস্থ্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা। হাতেগোনা দুয়েকজন ছাড়া দলে কারো জায়গা সিমেন্ট দিয়ে পাকা নয়! বিকল্প অনেক ক্রিকেটার। একইভাবে ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা রাখেন, এমন ক্রিকেটারের সংখ্যাও বেশি এখন। জয়ের জন্য কোনো একজন তামিম ইকবালের ব্যাট কিংবা কোনো একজন সাকিব আল হাসানের বলের দিক তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে না। একেবারে নতুন এসেও মুস্তাফিজও বাংলাদেশকে ম্যাচ জিতিয়েছেন। সৌম্য সরকারের মতো তরুণ ব্যাটসম্যান বিশ্বের যেকোনো বোলারকে উড়িয়ে মাঠের বাইরে ফেলতে দ্বিতীয়বার ভাবছেন না! নাসির-সাব্বির ম্যাচ জিতিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরছেন। মুশফিকের জায়গায় গ্লাভস হাতে নিয়ে উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে পড়ছেন লিটন দাশ। তাঁর ব্যাটিং দেখেও মনে হচ্ছে, তিনি দলে টিকে থাকার জন্য এসেছেন। মুমিনুল হকের মতো ব্যাটসম্যানকে নির্বাচকরা শুধু টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচনা করার বিলাসিতা দেখাতে পারছেন। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটা স্বাস্থ্যকর চেহারা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে।

কিন্তু জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশকে দেখছে একটা অ্যাঙ্গেল থেকে। শুধুই প্রতিপক্ষ। যে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে জিততে পারলে প্রায় লাইফসাপোর্টে চলে যাওয়া নিজেদের ক্রিকেটে কিছুটা প্রাণের স্পন্দন আবিষ্কার করতে পারবে তারা। আর বাংলাদেশ হয়তো নিজেদের আবার নতুনভাবে খুঁজে বেড়াবে। ভুলে যেতে চাইবে, ক'মাস আগে কি ক্রিকেটটাই না খেলল তাঁরা। পৃথিবীর সেরা দলটার একটা-দুটো ম্যাচ খারাপ যেতেই পারে। জিম্বাবুয়ের মতো দলের বিপক্ষে এখন আর খারাপ খেলার সুযোগ নেই। তার পরও খেলাটা ক্রিকেট। অনেক কিছু ঘটতে পারে। তবে বাংলাদেশ তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের ক্রিকেটটা খেলবে, সেটা আশা করা নিশ্চয়ই বাড়াবাড়ি হবে না।

লেখক : স্পোর্টস এডিটর, দীপ্ত টিভি।