জলবায়ু সম্মেলন

শিল্প দিয়েই লড়বে প্যারিস

Looks like you've blocked notifications!

শিল্প দিয়েই প্রসিদ্ধি কুঁড়িয়েছে প্যারিস। শিল্পী, শিল্পানুরাগী মানুষদের জন্য প্যারিস যেন তীর্থস্থান। আর এই শিল্প দিয়েই আরো একবার নিজেদের প্রকাশ করতে চায় প্যারিসবাসী। সন্ত্রাসী হামলার পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের নির্ধারিত স্থান-তারিখ পরিবর্তন না হলেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তার আগে ও পরে প্যারিসে অনুষ্ঠেয় দুটি র‍্যালির ওপর। পরিবেশবাদী আন্দোলন-সংগঠনের কর্মীরা অবশ্য এই নিষেধাজ্ঞার পর চুপ করে বসেও থাকছেন না। নতুন-সৃজনশীল উপায়ে নিজেদের দাবি জানানো ও বিশ্বনেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টির কাজটা তাঁরা করেই যাবেন। আর এই লড়াইয়ের প্রধান মাধ্যম হিসেবে তাঁরা বেছে নিয়েছেন শিল্পকে।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি যেন লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখা যায়, সেই লক্ষ্যে একটি বৈশ্বিক আইনি চুক্তি করার মিশন নিয়ে প্যারিসে সমবেত হতে যাচ্ছেন বিশ্বের ১৯৫টি দেশের নীতিনির্ধারকরা। ১৩৫টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান অংশ নিতে যাচ্ছেন প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার রাষ্ট্রদূত, সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক, এনজিও সদস্য ও অন্যান্য অংশগ্রহণকারী। নভেম্বরের ৩০ থেকে ডিসেম্বরের ১১ তারিখ পর্যন্ত বহুমাত্রিক আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে তাঁরা একটি কার্যকর বৈশ্বিক আইনি চুক্তি সম্পন্ন করতে পারবেন বলে আশা করছে বিশ্ববাসী। মানব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তি স্বাক্ষরে বিশ্বনেতারা সম্মত হবেন কি না তার ওপর নির্ভর করছে পুরো মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ।

পরিবেশ রক্ষায় একটি কার্যকরী বৈশ্বিক চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য বিশ্বনেতাদের ওপর চাপ প্রয়োগের লক্ষ্যে সম্মেলন শুরুর আগের দিন (২৯ সেপ্টেম্বর) ও পরের দিন (১২ ডিসেম্বর) দুটি বিশাল র‍্যালি করার পরিকল্পনা করেছিলেন পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী-সংগঠকরা। কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাতে র‍্যালি দুটি আয়োজনের অনুমতি দেয়নি ফ্রান্স সরকার। আরো অনেক সুরক্ষিত কোনো জায়গায় বিকল্পভাবে একটা গণ-জমায়েতের অনুমতিও দেয়নি প্যারিস পুলিশ। প্রশাসনের এমন আচরণের পর অনেকেই হয়েছেন চরম হতাশ। অনেকে সহমত পোষণ করেছেন সরকারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে। তবে সবার মধ্যেই একটা আশঙ্কা আছে : সাধারণ মানুষ যদি জোরালোভাবে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে না পারে তাহলে পুরো বিষয়টা রাজনীতিবিদ আর ব্যবসায়ীগোষ্ঠীর হাতে চলে যাবে। যারা ব্যস্ত হয়ে পড়তে পারে নিজেদের স্থূল স্বার্থসিদ্ধির চক্করে। ফলে নিষেধাজ্ঞার পরও বিকল্প, সৃজনশীল উপায়ে নিজেদের দাবি-দাওয়ার কথা তুলে ধরতে যাচ্ছে প্যারিসবাসী। আর সেটা তাঁরা করবেন শিল্প দিয়ে।

ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্কের অ্যালিক্স ম্যাজোউনি বলেছেন, ‘আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর আমরা এই র‍্যালির মনোভাবটা প্রকাশ করতে চাই শৈল্পিক উপায়ে।’ বিস্তারিত পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে প্যারিসের প্রধান দুটি কেন্দ্র, রিপাবলিক ও লা ন্যাশনের মধ্যকার একটি সড়কজুড়ে শিল্প প্রদর্শনী আয়োজনের চিন্তাভাবনা করছেন পরিবেশবাদীরা। ফ্রেন্ডস অব দি আর্থ ইন্টারন্যাশনালের জাগোডা মুনিক বলেছেন, ‘জলবায়ু ন্যায্যতার জন্য অনেক প্রয়োজনীয় গণমানুষের ডাক যেন পরিষ্কার ও জোরালোভাবে শোনা যায়, তা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’ সম্মেলন শুরুর আগের দিন, ২৯ সেপ্টেম্বরের র‍্যালির বিকল্প হিসেবে এমন উদ্ভাবনী পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। তবে সম্মেলনের পরের দিন, ১২ ডিসেম্বর তাঁরা কীভাবে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেবেন, সে ব্যাপারে এখনো কোনো পরিকল্পনা হয়নি।

‘জনমানুষের জলবায়ু সম্মেলন’ শীর্ষক পূর্বনির্ধারিত সম্মেলন আগের পরিকল্পনা অনুযায়ীই অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠকরা। এখানে বিতর্ক, ওয়ার্কশপ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি করা হবে জলবায়ু বিষয়ে।

নিষেধাজ্ঞার কারণে প্যারিসে কিছুটা সীমাবদ্ধতা তৈরি হলেও বিশ্বের অন্যান্য বড় শহরগুলোতে নিজেদের জোরালোভাবে উপস্থাপন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী-সংগঠকরা। লন্ডন, বার্লিন, সাও পাওলো, বোগোটা, দিল্লিসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ৫০টি বড় র‍্যালি আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে ২৮ ও ২৯ নভেম্বরকে ঘিরে। প্যারিসে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় মানুষ যেন আরো বেশি সক্রিয় হয়, সেই আহ্বান জানিয়েছেন প্যারিসবাসী।

লেখক : সাংবাদিক