প্রতিক্রিয়া

লোকগানের উৎসবের লক্ষ্য আসলে কী ছিল?

Looks like you've blocked notifications!

আয়োজনটা ছিল মাটির গানের, শেকড়ের। কিন্তু সেই মাটির গন্ধ কতটা মিলল? বলছিলাম সান ইভেন্টস আয়োজিত ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক ফোক-ফেস্টের’ কথা। লোকসংগীতের এই আয়োজন নিয়ে এরই মধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক শিল্পী। খোদ সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরও বলেছেন, এমন চলতে থাকলে লোকগান থাকবে শুধু দেহ নিয়ে, হারিয়ে যাবে আত্মাটা।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন। আয়োজকদের বিরাট চমক, দেশের লোকগানের অমর শিল্পী আবদুল আলীমের তিন সন্তান মঞ্চে। এই চমক মুগ্ধ করলেও লোকগানের একনিষ্ঠ ভক্ত, শিল্পী মাকসুদুল হক ক্ষুব্ধ হন ভিন্ন প্রসঙ্গে। ফোক উৎসবের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তোলেন এই শিল্পী। তিনি বলেন, ‘আয়োজকদের উদ্দেশ্যটা কী ছিল, সেটাই কিন্তু স্পষ্ট হলো না। কেনই বা ফোক ফেস্টিভাল? কী ফোক? এটা যেটা হলো, অভিজাত শ্রেণির কাছে আমরা ফোকটা পরিবেশন করলাম, আন্তর্জাতিকতার আবরণে বেঁধে। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত অনেক শিল্পী এসেছেন, কিন্তু অনেক অখ্যাত শিল্পী, বিশেষ করে ভারত থেকে প্রথম দিন একজন শিল্পী এসেছেন, আমি খুব বিরক্ত হয়েছি। দেড় ঘণ্টা, আমাদের দেশেরই গান, আমাদেরই পরিবেশন করা হচ্ছে, সম্পূর্ণ বেসুরো যন্ত্রপাতি, কণ্ঠও বেসুরো এবং সেটা দেড় ঘণ্টা...। আমাদের রব ফকির সাঁইজি কিংবা শফি মণ্ডল, এঁদের মতো ব্যাপক মাপের আর্টিস্টকে স্টেজে উঠিয়ে একটা করে গান করিয়ে রীতিমতো তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, এটা শুধু শিল্পীর অপমান নয়, দেশেরও অপমান!’

সুফি, রকের পাঁচমিশালি তিন দিনের আয়োজন নিয়েও কথা বলেছেন মাকসুদ। প্রশ্ন তুলেছেন অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মান নিয়েও।

বাংলা লোকগানের পরিচিত নাম বাউল শফি মণ্ডল। লোকগানের ঝোলা নিয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ান এই শিল্পী। অনেক কথা না বলেও ছোট্ট কথায় বললেন শফি মণ্ডল, ‘আমি লালনের গান গাই। এত বড় মঞ্চে গাইবার যোগ্যতা কি আমার আছে?’

ঢাকঢোল পিটিয়ে লোকগানের এই আয়োজনে আদৌ লোকজ সুর কতটা পাওয়া গেল, তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। তার উত্তর না মিললে লোকসংগীত তার প্রাণটাই হারাবে, বললেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তাঁর কথায়, ‘লোকসংগীতের আদি ও অকৃত্রিম রূপটা যদি ধরে রাখতে না পারি এবং সে সঙ্গে আমাদের যে নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র আছে, সেগুলোকে যদি ব্যবহার না করতে পারি, তাহলে লোকসংগীতের দেহটা থাকবে, কিন্তু আত্মাটা মরে যাবে।‌‌‍’

ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কিছু কর্মী সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন—এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। এটিএন নিউজের সাংবাদিককে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে বাকি রেখেছিলেন আয়োজকরা। ভিনদেশি শিল্পীসহ অনেক শিল্পীই কথা বলতে চেয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে। অথচ কপিরাইটের দোহাই দিয়ে কোনো শিল্পীকেই সাক্ষাৎকার নিতে দেওয়া হয়নি। সাক্ষাৎকার নিতে চাইলে রীতিমতো তেড়ে এসেছেন আয়োজকদের নিয়জিত লোকজন। দর্শকের অভিযোগও কম ছিল না। অনুষ্ঠানস্থলে ব্যাগ না নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা মানুষ পেয়েছেন অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানোর পর। তাই বিড়ম্বনার শুরুটা প্রবেশপথ থেকেই ছিল। ভেতরে অনেক দর্শকই রীতিমতো চিৎকার, চেঁচামেচিতে নষ্ট করেছেন লোকগান শোনার পরিবেশ।

তৃতীয় দিন গান করেননি কাঙ্গালিনী সুফিয়া ও আনুশেহ আনাদিল। ২৭ দিন মহড়া করেও মঞ্চে পারফর্ম করেননি সাধনা। কিন্তু কেন? এমন অনেক প্রশ্নই ঘুরপাক খেয়েছে মেরিল নিবেদিত প্রথমবারের লোকসংগীত উৎসবকে ঘিরে। এতসব বিরূপ অভিজ্ঞতার পরও সামনের সুদিনের দিকেই তাকিয়ে থাকতে চান লোকসংগীতের ভক্তরা।

লেখক : সিনিয়র রিপোর্টার, একাত্তর টেলিভিশন।