গ্যালারিতে ভারত-পাকিস্তান সমর্থন প্রসঙ্গে

Looks like you've blocked notifications!

আমার একটা ধারণা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। সেটা হলো, 'খেলার সঙ্গে রাজনীতি মেশাবেন না' বলে যারা, সেই মূর্খরাই ক্রিকেটকে জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেম প্রকাশের 'প্রতীক' ভাবে!

বাংলাদেশের এই মূর্খরা বোঝেও না, রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণেই ওই দুই দেশ একে অপরকে চিরশত্রু ভাবে। ওরা নিজেরাই রাজনীতি দিয়ে নিজেদের সম্পর্ক ও অবস্থান মাপে। আর আপনি এক আদার বেপারী, তৃতীয় একটা দেশের 'তৃতীয় শ্রেণি'র নাগরিক, খেলাকে রাজনীতি থেকে আলাদা রাখার স্লোগান তোলেন!

বহুদিন ধরেই দেখছি, এই 'ক্রিকেটীয় জাতীয়তাবাদে' বুঁদ হয়ে আছে বাংলাদেশের অসংখ্য অন্ধ। এদের রাজনীতির 'অ আ ক খ' না শেখালে বাংলার স্টেডিয়ামে পাকিস্তান-ভারতের পতাকা উড়বেই!

রাজনীতির নীতি ঠিক না থাকলেই কেবল মানুষ এ রকম 'ব্লার ন্যাশনালিজমে' আশ্রয় নিতে পারে বলে মনে হয়।

জাতীয়তাবাদ সর্বক্ষেত্রে ভালো নয়। উগ্র জাতীয়তাবাদ তো আরো নয়। ক্রিকেট খেলাটা এদের উগ্র জাতীয়তাবাদীতে পরিণত করেছে—এটা কি আমরা খেয়াল করেছি? আর এদের পালে হাওয়া দিয়ে চলেছে ফেসবুক-অনলাইনের কিছু মূর্খ 'সেলিব্রেটি'। এরা এমনভাবে কথা বলে যেন মানুষের জীবন-মৃত্যু, সংসার-সম্পর্ক, জাতীয় জীবনের টানাপড়েন সবকিছু এই একটা খেলার ওপরেই নির্ভর করে!

কথাটা এভাবে বলতে বাধ্য হলাম। আমি হয়তো 'ক্রিকেট' নামের আপনার অতি স্পর্শকাতর বস্তুটিতে আঘাত দিয়ে ফেললাম। তবে আমাকে এ কথা বলার সাহস দিয়েছেন খোদ 'মি. ক্যাপ্টেন' মাশরাফি বিন মুর্তজা। এই লেখার মাধ্যমে সবাইকেই আমি সদ্য প্রকাশিত 'মাশরাফি' গ্রন্থে মাশরাফির সাক্ষাৎকারটা পড়ার অনুরোধ জানাই। পড়লেই বুঝতে পারবেন, ক্রিকেট নিয়ে আপনার 'মাতলামি-পাগলামি'র জায়গাগুলোকে মাশরাফি কীভাবে কশাঘাত করেছেন।

তার পরও না হয় তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, ক্রিকেট বাংলাদেশের (বাংলাদেশি বা বাঙালি) জাতীয়তাবাদকে ব্র্যান্ডিং করছে। কিন্তু নিজের দেশ এত ভালো ক্রিকেট খেলার পরও যখন পাক-ভারত মোহ আমাদের যায় না, তখন জাতীয়তাবাদ আসলে কার বুকে মাথা রেখে মধুরেণু পান করে, তা জানতে মন চায়।

তার মানে, ক্রিকেটের নামে আপনারা যে জাতীয়তাবাদকে প্রমোট করছেন, তার মধ্যে নিশ্চয়ই সমস্যা আছে। সমস্যা যদি নাই থাকত, তাহলে নেহাত একটা ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে এসে বাংলাদেশের নাগরিকরা হাত-মুখ-বুকে রাজনৈতিকভাবে বৈরী সম্পর্কের দুটি দেশের জাতীয় পতাকার ট্যাটু আর্ট করতে পারত না!

ভারতীয় এক বাঙালি সাংবাদিক তো বলেই ফেললেন, 'পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারত জিতলেই তো বরং বাংলাদেশের ফাইনালে যেতে সুবিধা। তবুও এত পাকিস্তানি সমর্থক মাঠে! এরা খেলার সমীকরণ-টমীকরণ বোঝে না নাকি?'

বললাম, তা ভারতকেই কেন সমর্থন করতে হবে?

সুযোগ পেয়ে বুঝি তার পাল্টা প্রশ্ন : তা পাকিস্তানকেই কেন সমর্থন করতে হবে?

আর পাল্টা উত্তর দিতে পারলাম না! লজ্জা পেলে, লজ্জা থাকলে কথা চেপে যাওয়াই উত্তম!

বাংলাদেশের বিখ্যাত সমাজতাত্ত্বিক আহমেদ ছফার পর্যবেক্ষণটা তাই দারুণ বলতে হবে, ‘শুয়োরের বাচ্চার দাঁত উঠলে আগে বাপের পাছায় কামড় মেরে শক্তি পরীক্ষা করে!’

লেখক : গবেষক ও সংবাদকর্মী।