ধর্ষণ রুখো বাংলাদেশ

Looks like you've blocked notifications!

পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম তরুণীরা হেঁটে বেড়ায় স্টকহোমের রাস্তায়। হেলেনের ডানা গায়ে, উড়ে বেড়ায়। যিশুর হাতের ওয়াইন পানে, কী হাস্যোজ্জ্বল মাতিয়ে তোলে দল। স্বল্পবসনে, অর্ধবসনে, কী বসনহীন তাদের চলন-বলন-দলন। কী মধ্যরাত, কী শেষরাত! সময়ের ফ্রেম নেই ওদের। সন্ধ্যা হয়ে এলো বলে কোনো তাড়া নেই। তুমি মেয়ে, এতক্ষণ বাইরে থেকো না—বলে অনুশাসন নেই। এখানে কোনো তরুণীকে ধর্ষণ করে রাস্তায় ফেলে রাখা হয় না। স্বল্পবসনে দেখে, পুরুষ উত্তেজিত হয়ে তার স্তনে ও নিতম্বে পশুর মতো ঝাপটে ধরে না। 

আমার বাংলাদেশে মেয়েরা সব ঢেকেছে। ওরা মুখে খিল দিয়েছে। ঘরে স্বনির্বাসন নিয়েছে। সন্ধ্যা, ওদের কাছে আতঙ্ক। তবুও পুরুষের উত্তেজনা কমে না। এত উত্তেজনা খোদা শুধু ওই ভূখণ্ডেই দিল কেন, বুঝি না। ভগবান, বুঝি না। কসম তোমার, বুঝি না। 

শুধু এক বাংলায় প্রতিদিন যত ধর্ষণ হয়, সমগ্র পশুকুলেও এত ধর্ষণ হয় না। আমরা ধর্ষিত এক জাতি! ধর্ষকের জাতি! সম্প্রতি ধর্ষণ হয়েছে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায়। তনু নামের উনিশ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়েছে। কত ব্যার্থ হয়ে যাচ্ছে একটি রাষ্ট্র! এত নৃশংসতা! এত বর্বরতা! তবু গজনিদ্রার রাষ্ট্র জাগে না, জাগে না। এ দেশ ধর্ষকের। ধর্ষকের লিঙ্গ পুলিশের অস্ত্র ও বিচারকের কলমের চেয়ে ক্ষমতাধর! এখানে ওদের বিচার হবে না। কোনো দিন না।

দেশের শ্রেষ্ঠ মেয়েগুলোকে আমরা পৈশাচিকভাবে রুখে দিয়েছি। যারা বিদ্যালয়ে যায়, যারা কর্ম করে আত্মনির্ভরশীল হতে চায়, যারা আঁধার ভেঙে আলো আনতে চায়, তাদের ধর্ষণ করা হয়। হত্যা করা হয়। ভয়ের ড্রাগ খাইয়ে দেওয়া হয়। শরতের পাতার মতো ঝরতে থাকে একেকটি প্রাণ। বাংলাদেশ শূন্য হতে থাকে। দৈন্য হতে থাকে। সে দীনতা এই সমাজকে কাঁদায় না। সে দীনতা এখানে কাউকে নাড়া দেয় না।

ধর্ষকদের উল্লাসই এখানে জয়ী হয়। ধর্ষকের লিঙ্গের কাছে, রাষ্ট্র কেমন ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে থাকে। এ দেশে ধর্ষকের বিচার হবে না। বিচার চাইতে যেও না। বরং থানায় থানায় ওড়ানো পতাকাগুলো নামিয়ে এনে ধর্ষিতার গায়ে মুড়ে দাও। ধর্ষিতার গা ঢেকে দাও। পাড়ায় পাড়ায় গড়ে তোলো স্মৃতিস্তম্ভ। উৎকীর্ণ করে দাও তাদের নাম। ঘিরে দাও পুষ্পোদ্যানে।  

তোমরা এসো। ঘর ছেড়ে এসো। রুখো তীব্র আঘাতে। নচেৎ ধর্ষকের দল আসছে তোমার ঘরে। মহাপ্রলয়ের হিংস্রতা নিয়ে।    

লেখক : গবেষক, স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়, সুইডেন।